
নিজস্ব প্রতিবেদক:
অতিউৎসাহী কথিত সাংবাদিকের প্ররোচনায় গরু আটকের বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়েছে। আড়াল করা হয়েছে মূল ঘটনাটি। সাংবাদিকের চাঁদা দাবী ও সরকার কর্তৃক প্রদত্ত রশিদ বিজিবির অস্বীকার করার ঘটনা থেকে গিয়েছে আড়ালে।
সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলার প্রায় সবক’টি হাটে ভারতীয় গরু কেনা বেচা হয়। এমনই একটি হাট রতনপুরে পশুর হাট থেকে গরু কিনে বিপাকে পড়েছেন শ্যমনগরের একটি ডেইরী ফার্মের মালিক। সরকারের খাজনা পরিশোধ করার পরও কথিত কয়েকজন সাংবাদিকের উষ্কানিতে ও বিজিবি সদস্যদের প্ররোচনায় ক্ষতির মুখে পড়তে গরুদুটির ক্রেতা। অপরদিকে এ ঘটনাকে পুঁজি করে শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করে বেড়াচ্ছে একটি মহল।
গরু দুটির ক্রেতা শেখ জাহাঙ্গীর সাতনদীকে জানান শেখ ডেইরী ফার্মের থেকে আমি গরু দুটি ক্রয় করি ২লক্ষ ৪২ হাজার টাকায়। পরে কাদের নামক ইঞ্জিনভ্যান চালকের সাথে চুক্তি করে শ্যামনগরের শেখ ডেইরী ফার্ম থেকে গুরু দুটি আমার বাড়ি আনার জন্য পাঠাই।
ফার্ম থেকে গরু বুঝে নিয়ে কালিগঞ্জ মহাসড়ক এর শিমু রেজা এমপি কলেজের সামনে পৌছালে সাংবাদিক পরিচয়ে জনৈক আরাফাত আমাদের গতিরোধ করেন। এসময় তিনি গরু দুটি ভারতীয় বলে দাবী করেন। তার দাবীর প্রেক্ষিতে ইঞ্জিনভ্যান চালক জানান যে আমি গরু দুটি শ্যমনগরের শেখ ডেইরী ফার্ম থেকে নিয়ে এসেছি। কিন্তু আরাফাত তা মানতে রাজী ছিলেন না।
তাই সে নিজে উৎসাহী হয়ে স্থানীয় কয়েকজনকে ডেকে আমার গরু দুটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে আরাফাত ইঞ্জিনভ্যান চালকের কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। ইঞ্জিনভ্যান চালক উপায় না দেখে ফার্মে ফোন দিলে সেখান থেকে শ্যামনগরের উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে নিবৃত হয় কথিত সাংবাদিক সহ স্থানীয় গরু আটককারী ব্যাক্তিরা। গরু দুটি ছিনতাই থেকে রক্ষা পায়।
পরে বসন্তপুর বিওপির ফুলতলা নামক স্থানে পৌছলে বিজিবি গরু দুটি আটক করে। তবে ইঞ্জিনভ্যান চালক আরও জানান আটকের সময় বিজিবি সদস্যরা সেই কথিত সাংবাদিক আরাফাতের নাম নিয়ে এ গরু দুটির বিষয়ে কথা বলতে থাকে। এদিকে সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে বিজিবির কার্যক্রম থাকার কথা থাকলেও সীমান্ত থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ফুলতলা থেকে গরুগুলো আটক করে বিজিবি সদস্যরা। এ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিবে গরু দুটির ক্রেতা-বিক্রেতা।
এদিকে গরু দুটির বিক্রেতা আলহাজ্ব শেখ মহসিন হোসেন সাতনদীকে জানান, আমার ফার্মে ডেইরির পাশাপাশি গরু মোটাতাজা করনের জন্য গরু পালন করি। যে দুটি গরু বসন্তপুর বিওপি আটক করেছে তা আমি গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখে রতনপুর হাট থেকে ফার্মের জন্য ক্রয় করি। চার মাস মোটাতাজা করার পর আমি গরু দুটি পাটকেলঘাটার বড়বিলার মৃত শেখ হারুন অর রশিদের ছেলে শেখ জাহাঙ্গীরের কাছে বিক্রি করি।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাহাঙ্গীরের গরু দুটি নিয়ে যায় ইঞ্জিনভ্যান চালক। কালিগঞ্জের মৌতলার শিমু রেজা এমপি কলেজের সামনে পৌছালে আরাফাত নামের এক সাংবাদিক ইঞ্জিনভ্যানের পথ রোধ করে গরুগুলি ভারতীয় বলে দাবী করেন। নানা কথা বলার পর বেশ কয়েকজন স্থানীয়কে ফোন দিয়ে জমায়েত করেন ওই সাংবাদিক। একপর্যায়ে ইঞ্জিনভ্যান চালকের কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন তিনি। টাকা না পেয়ে গরুগুলো স্থানীয়দের সহায়তায় ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। পরে শ্যভমনগরের উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে তারা নিবৃত হয়।
মি মহসিন সাতনদীকে আরও জানান, তিনি উক্ত বিওপিতে গিয়ে গরু দুটি নিজের দাবী করে সমস্ত প্রমানাদি নিয়ে যান। কিন্তু বিওপির সুবেদার বন্দে আলী মিঞা আমাকেও আটক করার চেষ্টা করে। আমার যাবতীয় প্রমানাদি রেখে দিতে চান তিনি। অবশেষে সাদা কাগজে গরু দুটি আমার না এই মর্মে স্বাক্ষর করতে বলেন। কিন্তু আমি অস্বীকৃতি জানাই। আমি বলি আমি সরকারি হাট থেকে গরু দুটি কিনেছি। আপনাদের কিছু বলার থাকলে হাটে যান। কিন্তু হাট থেকে কেনার পর আমার গরু জব্দ আপনি কীভাবে করেন? পরে সিও সাহেবের ফোন পেয়ে আমাকে ছেড়ে দেন তিনি।
এদিকে ইঞ্জিনভ্যান চালক কাদের জানান, ওই সাংবাদিক দুইজন আমাকে বার বার বলতে থাকে ডিএসবি তোরে ধরতে আসছে গরু ভ্যান ফেলে দৌড়ে পালা।
এ বিষয়ে শ্যামনগরের উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন সাতনদীকে জানান, আরাফাত ও মামুন নামের কতিপয় সাংবাদিক শেখ মহসিন হোসেনের গরু আটক করে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। বিনা কারনে আটকে রাখায় তিনি সাংবাদিককে ফোন দেন।
কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় এবং গরুর গায়ে ভারতীয় সিল আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করতে তিনি ওই স্থানে যান। কিন্তু সমস্ত ঘটনা ও কথাবার্তা এডিট করে সংক্ষেপিত করে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ওই সাংবাদিক বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে সংবাদ ও ভিডিও ছেড়েছে। সেখানে সম্পূর্ন উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমাকে হেয় করা হয়েছে।
মি. দোলন সাতনদীকে আরও জানান, মূল ঘটনা হচ্ছে আমি গিয়েছি যখন সাংবাদিক দাবি করেন যে গরুর গায়ে সিল মারা আছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি গরুর গায়ে সিল নাই। তখন আরাফাত বলে আমি ইউএনও কে জানিয়েছি তিনি আসছেন। এ কথা শুনার পর আমি ইউএনওকে ফোনদিয়ে জানতে চাই যে তিনি আসছেন কিনা।
তখন তিনি আমাকে বলেন আমি দেখতে আসছি গরুর গায়ে সিল মারা আছে কিনা। আপনি কি দেখেছেন? তখন আমি জানাই যে গরুর গায়ে সিল মারা নেই। তখন তিনি বলেন তাহলে গরু ছেড়ে দেন। তাই আমি গরু ছেড়ে দিতে বলি। জনতা তখন উত্তেজিত হয়ে ইঞ্জিনভ্যানওয়ালার পক্ষ নিলে এবং ইউএনও’র কথা শুনে আরাফাত ও তার সহযোগী মামুন ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এদিকে পশু বিক্রয়ের পাশ রশিদ শেখ মহসীন হোসেন সাতনদীকে সরবরাহ করেছেন। রতনপুর পশুর হাটের ৬৩ নং রশিদে উল্লেখ আছে কালিগঞ্জের গড়ইমহল এলাকার মৃত আহম্মাদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ১লক্ষ ৫হাজার টাকায় একটি ও ৬৪নং রশিদে কালিগঞ্জের মৃত আফছার আলীর ছেলে নজরুলের কাছ থেকে ১লক্ষ ১০ হাজার টাকায় আরও একটি গরুর ক্রয় করেন মহসীন হোসেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত স্মারক নং-৩৯৪ মোতাবেক বাংলাদেশ সরকারের খাজনা আদায়ে ক্রয়কৃত গরু বিজিব আটক করে।
এ বিষয়ে আরাফাত হোসেনের সাথে কথা বলতে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ট করেও সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ১৭বিজিবির অধিনায়ক হাসান হাফিজুর রহমান জানান স্থানীয়দের দাবির মুখে দুটি ভারতীয় গরু বিজিবি সদস্যরা আটক করেছে। আটককৃত গরুর স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আটককৃত গরু ২টি কাস্টমসে জমা প‚র্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলায় পাশ্ববর্তীদেশ ভারত থেকে নিয়মিত গরু দেশে এসে থাকে। কোন সময় বৈধ হলেও বেশিরভাগই লুকিয়ে। তবে এসব গরু সরাসরি হাটগুলোতে বিক্রি হয়। যেখানে বাংলাদেশ সরকারের খাজনা আদায়ে হাট থেকে স্থানীয় খামারিরা এসব গরু নিজ ফার্মের জন্য কিনে নিয়ে মোটাতাজা করেন। সাতক্ষীরা জেলার সকল মোটাতাজা করন ফার্মে এভাবেই গরু লালন পালন করা হয়।