নিজস্ব প্রতিবেদক: সন্দেহজনকভাবে নিরীহ মানুষকে চেক করার নামে মারধোর এবং গুজব কিম্বা প্রতিপক্ষের কান কথায় নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করা সহ আটক রাখা ও মিথ্যা জবানবন্দিতে স্বাক্ষর নেয়ার মত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বিজিবি’র কমান্ডার নায়েক সুবেদার ওসমানির বিরুদ্ধে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, অনুমান ৬/৭মাস ধরে নায়েক সুবেদার ওসমানি কলারোয়া উপজেলার কাকডাংগা বিজিবি ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি যোগদান করার পর থেকেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগন আতঙ্কগ্রস্থ। চলাচলের সময় চেক করার সময় কেউ যদি দাবী করেন তার কাছে চোরাই পন্য নেই তাহলে তার সর্ব নি¤œ শাস্তি চড়-থাপপড় এবং ক্যাম্পে নিয়ে দু-চার ঘন্টা দাড় করিয়ে রাখা। তার ‘থিওরী’ চেক করার আগে নিজেকে নির্দোষ দাবী করা অন্যায়। সীমান্ত অঞ্চলে আছে স্বর্ণ চোরাচালানী ও ফেন্সিডিল কারবারী। এরা সন্তর্পণে এ দুটি পন্য এপার-ওপার করে। কোন কোন ক্ষেত্রে রফা করে তারা কারবার চালিয়ে নেয়। অবৈধ এ সব ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে সীমান্ত অঞ্চলে অনেক সময় শান্তি বিনষ্ট হয়। মালিকদের সোনার বার ক্যারিয়ারের কাছ থেকে ছিনতাই করে নেয় প্রতিপক্ষরা আবার অনেক সময় যোগসাজস করে ক্যারিয়ারা ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে স্বর্ণের বার আত্মসাত করে। এ সব বিষয় ওপেন সিক্রেট হলে খবর যায় নায়েক সুবেদার ওসমানীর কাছে তিনি সোর্স মারফত জেনে কিম্বা প্রতিপক্ষের কানকথা শুনে ক্যাম্পে সংশ্লিষ্টদের ধরে এনে বেঁধে নির্যাতন করেন। দীর্ঘক্ষন আটক করেও রাখেন।
কোন ক্লু উদ্ধার করতে না পারলে তিনি তার মনগড়া জবানবন্দি তৈরী করে সেখানে স্বাক্ষর দানে বাধ্য করেন সংশ্লিষ্টদেরকে। গত ২৩ ডিসেম্বর বোয়ালিয়ার নিজ বাড়ী থেকে কেড়াগাঁছি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ভুট্টোলাল গাইনকে তার প্রাইভেট কারসহ আটক করে বিকাল ৪টার সময় কাকডাংগা বিওপি ক্যাম্পে নিয়ে যান বিজিবি সদস্যরা। সেখানে নিয়ে শারিরিক ভাবে তাকে নির্যাতনও করা হয়। কিন্তু ভীতিকর পরিস্থিতিতে ও লোকলজ্জার ভয়ে এ কথা সরাসরি অভিযোগ করেননি তিনি। দীর্ঘ ৬ ঘন্টা সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের নামে আটকে রেখে পরে মনগড়া প্রতারণা মূলক মিথ্যা জবানবন্দিতে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ২০টি স্বর্ণের বার আত্মসাতকে ঘিরে তদন্তের নামে ভুট্টোলাল গাইনকে নির্যাতন করা হয়। ওই ক্যাম্পে একই ঘটনায় আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় কুটিবাড়ীর মান্নান কবিরাজ, গ্যাড়াখালির ইব্রাহিম ও কুঠিবাড়ীর জাগাঙ্গীরকে। তাদেরকেও বেধড়ক পিটানো হয়। একই কায়দায় মিথ্যা মনগড়া জবানবন্দি তৈরী করে তাতে তাদের স্বাক্ষর আদায় করেন নায়েক সুবেদার ওসমান গনি। ওই সময় কিছু অখ্যাত অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও পত্রিকা ভুট্টোলার গাইনকে স্বর্নের কারবারিও বানিয়ে দেয়। সম্প্রতি খুলনার একজন সাংবাদিক ওই সীমান্তে এসেও বিড়ম্বনায় পড়েন। তাকেও হয়রানি করা হয়। তিনি বিজিবির উদ্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। হয়রানির বিস্তর এসব অভিযোগ করলেও নির্যাতিতরা ভয়ে আতঙ্কে তাদের নাম প্রকাশ না করেই খবর বানানোর জন্য অনুরোধ করেন।
চোরাচালান প্রবণ অঞ্চল হিসেবে খ্যাত কাকডাংগার বিওপির সীমানা দিয়ে স্বর্ণের বার ওপারে যায় এবং ফেন্সিডিরের চালান এপারে আসে। অতি গোপনে কারবারিরা এসব ব্যবসা চালিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে চালানও আটকে দেয় সীমান্তরক্ষীরা। নায়েক সুবেদার চোরাকারবারীদের কাছ থেকে সুবিধা নেন এমন চাক্ষুস প্রমান পাওয়া যায়নি। তবে নানামুখী অনিয়মের গুজবও আছে তার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি চিহ্নিত চোরাই পন্য কারবারিদের সাথে তার ওঠা-বসা দেখে সচেতন মানুষ।
এ ব্যাপারে নায়েক সুবেদার ওসমানী তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ খন্ডন করে সাতনদীর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি দাবী করেছেন মানুষকে আটক করা, হয়রানি করা, নির্যাতন করা তার কাজ হতে পারেনা। কারও নিকট থেকে মিথ্য জবানবন্দিতেও তিনি স্বাক্ষর নেননা। সাম্প্রতিক সময়ে ভুট্টোলাল গাইনসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ক্যাম্পে আনা হলেও তাদের নির্যাতনের খবর সঠিক নয়। এদিকে নিরীহ মানুষের হয়রানির বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান সাতনদীকে জানান, নায়েক সুবেদার ওসমানি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি দুর্নীতি করেনন না। অপরাধীরা তার বিরুদ্ধে কথা বলবে এটা স্বাভাবিক। ২০ পিচ স্বর্ণের বার পাচার নিয়ে সম্প্রতি নায়েক সুবেদার ওসমানি সঠিক দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বর্নের বার আত্মসাতকারী আশরাফুল-তরিকুলগংরা এখন এলাকা ছাড়া।
রাবনীতিবিদ ভুট্টোলাল গাইন নির্যাতনের শিকারের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভ‚মিকা কি ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে এ্যাডভোকেট মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি জানান, বিষয়টি আমি জানিনা।