
আহাদুর রহমান জনি: আপনারা কি শুরু করেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে খবর বানাতে চান। খবর বানান তবে হিসাবের বাইরে গেলে খবর করে দেবো কিন্তু। গতকাল রবিবার জেলা পাসপোর্ট অফিসের নিজ কক্ষে বসে এসব হুমকি-ধমকি দেন উপ-পরিচালক সাহাজান কবির। আশাশুনির আহ্লাদ মিস্ত্রীসহ পাঁচ জন ভুক্তভোগীর জবানবন্দী নেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার উদ্ভব হয়।
তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের বিকাশ সিংহ সাতনদীকে জানান, ‘আমি পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য পাসপোর্ট অফিসে আসি। ১১:২০ থেকে ঘন্টা খানেক লাইনে দাড়িয়ে থেকে অবশেষে ফর্ম জমা দেওয়ার কাউন্ডারে গেলে আমার আবেদন ছুঁড়ে ফেলে দেন কর্মকর্তা ইমরান। আরো এক ঘন্টা পরে আমাকে ফর্ম সংশোধন করে নিয়ে আসতে বলেন। ফরম সংশোধন করে জমা দিলে ডাটা নাই বলে আমাকে ফিরিয়ে দেয়। তখন আমি ডিসি মহোদয়কে অভিযোগ জানাব বললে আমাকে বলেন আপনি ডিসি, এসপি যেখানে পারেন যান।’
কলারোয়া উপজেলার কাজিরহাট এলাকার এমডি শাহরিয়ার মুত্তাকিম অভিযোগ করে বলেন, এ পর্যন্ত তিনবার আবেদন দিতে এসে ফেরত যাচ্ছি। গত মাসের ৩১ তারিখে ব্যাংকের ড্রাফঠ উল্লেখ হয়নি বলে ফেরত দেয়। চলতি মাসের ৪ তারিখে ফরম ও চালান বাতিল করা লাগবে বলে ফেরত দেয়। আজ সকাল ১১টা থেকে দাড়িয়ে থেকে এখন ২টার সময় বলছে সাভার নাই। আরেকদিন আসেন। এভাবে পদে পদে হয়রানি হতে হয়।
দেবহাটার সখিপুর গ্রামের মোঃ আলমগীর হোসেন পাসপোর্ট অফিসে আসেন সকাল ১০টায়। নিজের পাসপোর্ট রিনিউি করতে তিনি নিজেই ফরম পূরণ করেছেন। সিরিয়ালে ১ঘন্টারও বেশি সময় দাড়িয়ে থেকে ফরম জমা দেওয়ার সময় তাকে জানানো হয় সার্ভার প্রবলেম। অন্য দিন আসেন।
বোন ঝর্ণা রাণী ঘোষের নতুন পাসেপোর্ট করতে সাথে এসেছেন দেবহাটার জগন্নাথপুরের নিরঞ্জন ঘোষ। তাই সকাল ৬টা থেকে অপেক্ষা করছেন পাসপোর্ট অফিসে। পাশেরই একটি দোকান থেকে ৫০টাকা পরিশোধ করে অনলাইনে ফরম পূরণ করা হয়। সবশেষে ফরম জমা দেওয়ার পর তাকে রবিবার আসতে বলা হয়।
আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের যদুয়ার ডাঙ্গা আহ্লাদ মিস্ত্রীও সকাল ১০টা থেকে পাসপোর্ট তৈরির আবেদন ফরম হাতে দাড়িয়ে আছেন। তিনি সাতনদীকে জানান, আমি নিজে ফরমটি পূরণ করেছি। টাকা জমাসহ সব কাজ শেষ করে পাসপোর্ট অফিসে আসি। লম্বা লাইন পাড়ি দিয়ে ফরম জমা দেওয়ার কাউন্টারে আসলে আবার অনলাইনে ফরমের আবেদন করা লাগবে বলে ফরম ফেরত দেয়া হয়।
এরকম ভুরি ভুরি উদাহরন প্রতিদিনি পাসপোর্ট অফিসে পাওয়া যায়। এছাড়াও ফরম জমা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা লাবনী ও ইমরানের বিরুদ্ধে সেবাগ্রহীতাদের সাথে বাজে আচরণের অভিযোগ আছে। আবার দালাল ধরে আসলে এরকম হয়রানির শিকার হওয়া লাগেনা। এসব অভিযোগ নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের এডি মোঃ সহাজান কবিরের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তখন তার অফিস সহায়ক হমিদুর রহমানের কাছে উপ-পরিচালকের ফোন নাম্বার চাইলে সে আমতা আমতা করে বলে আমি জানিনা। আপনি সাহেবের কাছ থেকে নাম্বার নেন। প্রায় একই কথা বলেন এ অফিসের ইউডি হোসনেয়ারা। তিনিও ফোন নাম্বার দিতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে পাসপোর্ট অফিস থেকে বের হয়ে আসার সময় অফিস সহায়ক হামিদুর রহমানকে দিয়ে সাংবাদিকদের ডেকে পাঠানো হয় উপ-পরিচালক সাহাজান কবিরের অফিসে। উপ-পরিচালকের অফিসে গেলে দেখা যায় তিনি সিসিটিভি বন্ধ করে রেখেছেন। এসময় পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক সাহাজান কবির বলতে শুরু করেন, ‘আপনি যা লিখবেন হিসাব করে লিখবেন। খবর যাই বানান, আমি ডিজি স্যারের কাছে সঠিক চিত্র তুলে ধরবো। হিসাবের বাইরে গেলে খবর করে দিবো কিন্তু। এই বলে তিনি সাংবাদিকদের হুমকি দেন। এসময় তিনি বার বার উত্তেজিত হয়ে উঠছিলেন।
পাসপোর্ট অফিসের বেশুমার দুর্নীতি খতিয়ে দেখবেন বলে সাতনদীকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর।