আহাদুর রহমান জনি: বদলে যাচ্ছে সাতক্ষীরার প্রাণকেন্দ্র কালেক্টরেট চত্ত¡রের উদ্যান। বর্ষার জমা জলে জলাবদ্ধ বৃক্ষশোভিত এ উদ্যানটি শহরবাসীর জন্য দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। চত্ত্বরটি ঘিরে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে নিয়মিত চত্ত¡রে আসা দর্শনার্থীরা।
১৯৯৯ সালে সাতক্ষীরা জেলার তৎকালীন এনডিসি জাকির হোসেন কামালের পরিকল্পনায় বিরান এ উদ্যানটি বৃক্ষশোভিত করতে বৃক্ষ রোপন করা হয়। এরপর থেকে অযন্তে থেকেছে উদ্যানটি। শুষ্ক মৌসুমে চা,পান, বিড়ির দোকান, অবৈধ মটরসাইকেল পার্কিং গ্যারেজ করা হতো পার্কটিতে। আবার বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় বৃষ্টির জমা জলে জলাবদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতো। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে জেলা প্রশাসক অফিস ও আদালতে আসা মানুষদের অবর্ননীয় ভোগান্তির শিকার হতে হতো। গরমে গাছের তলায় একটু ছায়ার ব্যবস্থা থাকলেও বসার মতো কোন পরিবেশ ছিলো না। বর্ষায় এ ভোগান্তি পোহাতে হতো কয়েকগুন। এরই মধ্যে বুলবুল, আম্পান সহ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ে এ উদ্যানের বেশ কয়েকটি বড় গাছ মরে যায়। বিপদ আরও বাড়ে। গাছ গুলো অপসারন না করায় পচা ডাল ভেঙে পড়তে শুরু করে।
তবে সময় পাল্টেছে। ২০২০’এ সাতনদীতেই এ ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সাতনদীর ওই প্রতিবেদনে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। সে মোতাবেক জেলা প্রশাসক এ উদ্যানটিতে মাটি ভরাট করে উঁচু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু করোনা ও বিভিন্ন জটিলতায় তিনি কাজটি শেষ করে যেতে পারেননি।
পরবর্তী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর দায়িত্ব গ্রহণ করে উদ্যানটির দিকে নজর দেন। কালেক্টরেট চত্ত্বরে আগত দর্শনার্থীদের বিশ্রাম ও শহরবাসীর চিত্ত-বিনোদনের কথা ভেবে তিনি এ উদ্যানটিকে পার্কে রুপান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন চলমান আছে।
সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতের আইনজীবী এখলেছার আলী বাচ্চু সাতনদীকে জানান, কোর্টে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ ন্যায় বিচারে চাইতে আসে। কিন্তু তাদের ধার্যদিনে ৫ থেকে ১০ মিনিটের কাজের জন্য সারাদিন এ চত্ত্বরে কাটাতে হয়। উদ্যানটির বড় বড় গাছ মরে যাওয়ায় ভোগান্তি বাড়ে তাদের। জেলা প্রশাসকের এ উদ্যোগকে অবশ্যই আমি সাধুবাদ জানাই। তবে এখানে আগত মানুষের কথা মাথায় রেখে বসার ব্যবস্থা একটু বেশি রাখলে ভাল হয়।
অপর আইনজীবী কাজী মনিরুজ্জামান সোহান জানান, জেলা প্রশাসকের এ উদ্যোগ সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। কালেক্টরেট অফিসে ও আদালতে প্রতিদিন কয়েকহাজার মানুষের সমাগম হয়। কিন্তু অপেক্ষার জন্য এ জায়গাটিকেই সবাই বেছে নেয়। অবৈধ পার্কিং সহ চা-সিগারেটের দোকান এ উদ্যানটি দখল করে ছিলো। তবে এবার পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।
কালিগঞ্জের চম্পাফুল ইউনিয়নের ওয়াসিম। পেশায় তিনি মটরসাইকেলে যাত্রী সেবা দেন। প্রতি সপ্তাহেই তিনি কোর্টে আগত বিভিন্ন মানুষকে পৌছেদেন আবার ফেরতও নিয়ে যান। কিন্তু এর মাঝে কোন কাজ না থাকায় তাকে এ উদ্যানেই অপেক্ষা করতে হয়। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, এই কাদায় কোথায় দাড়াবো। কিন্তু প্রতিবেদকের কাছ থেকে নির্মানাধীন পার্কের বিষয়ে জানতে পেরে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সপ্তাহে দুই তিনদিন এখানে আসি। বর্ষা কাদায় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। কোন সময় গাছের গুড়িতে বসে বা দাড়িয়ে সময় পার করতে হয়। যদি এখানে বসার জায়গা করা হয় তাহলেতো আমাদের জন্য সুবিধাই হয়। তবে জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি করে তিনি জানান, এখানে যদি একটু ছাউনির ব্যবস্থাও করা হয় তাহলে আরও ভাল হবে।
নলতার আব্দুর রশিদ প্রায়ই এ চত্ত্বরে কাপড় বিক্রি করেন। তবে তার কোন নির্দিষ্ট স্টল নেই। তিনি ঘুরে ঘুরেই তার পন্য বিক্রি করেন। তিনি সাতনদীকে জানান, বর্ষায় কাঁদা আর গরমের সময় বসার জায়গা না থাকায় অনেকেই এখানে কাজে এসে অপেক্ষা করার জন্য জায়গা পায়না। কোর্টের আশেপাশেই সবাই ঘুরে। যদি এরকম কিছু হয় তাহলে অপেক্ষার জায়গা পাওয়া যাবে। লোকসমাগম আরও বেশি হবে। তাই আমার ব্যবসা ভাল হবে বলে আমি মনে করি।
আইনজীবী সহকারি আক্তার হোসেন সাতনদীকে জানান, জেলা প্রশাসকের এ উদ্যোগটি খুবই ভাল। আমাদের কাছে আসা বিপদগ্রস্থ মানুষগুলো ছায়ায় বসার জায়গা না পেয়ে চায়ের দোকানে ও আশেপাশের এলাকায় সময় কাটায়। এতে তাদের খরচ ও সময়নষ্ট দুটিই হয়। তবে যেহেতু এখানে একটি পার্ক হবে, তাই বিভিন্ন কাজে আসা মানুষগুলো এবার স্বস্তি পাবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর সাতনদীকে জানান, চত্ত্বরটি ঘিরে অনেক পরিকল্পনা আছে। চত্ত্বরটিতে সাজানো থাকবে বসার জায়গা, সেখানে বিশ্রাম নেবে সবাই। ওয়ার্ক ওয়েতে সকাল কিংবা সন্ধ্যায় নাগরিকরা একটু স্বস্তিতে হাটতে পারবে। গোধুলীতে থাকবে লাইটিং এর ব্যবস্থা যাতে সন্ধ্যার পর থেকেও শহরবাসী এখানে সময় কাটাতে আসতে পারবে। পার্কটিতে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
মিঃ কবীর আরও জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পরই কাজ শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ১ মাসের মধ্যেই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে পার্কটি।