সাতনদী অনলাইন ডেস্ক: দেশে হঠাৎ করে বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু। এতদিন অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল প্রাণঘাতি এই ভাইরাসটি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই মহামারীটির বিস্তার। দেশে করোনা সংক্রমণের ৩৮৭তম দিনে গতকাল সর্বোচ্চ পাঁচ সহস্রাধিক আক্রান্ত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৪৫ জন। খালি নেই দেশের হাসপাতালগুলোর আইসিইউ। রোগী বাড়ছে জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতেও। টিকা নেয়ার পরও সংক্রমণ বাড়ায় চারদিকে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
বর্তমান এই পরিস্থিতিকে অত্যন্ত গুরুতর বলছেন গবেষকরাও। দেশের আংশিক লকডাউন বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে সরকার ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে জনসমাগম নিষিদ্ধসহ নতুন ১৮টি নির্দেশনা জারি করেছে। গণপরিবহনে অর্ধেক আসনে যাত্রী বহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটিও বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশে ৬ লাখ ৮৯৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৯৪৯ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৮ জন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয়। গত ১৮ জুন দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়ায়। ১৮ জুলাই ছাড়ায় ২ লাখ। শনাক্তের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়ায় ২৬ আগস্ট। ৪ লাখ ছাড়ায় ২৬ অক্টোবর। ২০ ডিসেম্বর দেশে করোনা সংক্রমণের ২৮৮তম দিনে শনাক্তের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়ায়। আজ সংক্রমণের ৩৮৭তম দিনে শনাক্ত ৬ লাখ ছাড়াল।
১০৩ দিনে প্রথম লাখ শনাক্ত হয়। দ্বিতীয় লাখ শনাক্ত হয় ৩০ দিনে। তৃতীয় লাখ শনাক্ত হয় ৩৯ দিনে। চতুর্থ লাখ শনাক্ত হয় ৬১ দিনে। পঞ্চম লাখ শনাক্ত হয় ৫৫ দিনে। আর ষষ্ঠ লাখ শনাক্ত হয় ৯৯ দিনে।
দেশে করোনার সংক্রমণ প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুরুর দিকে সংক্রমণ ধীরগতিতে ছড়িয়েছে। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে শুরু করে। জুনে পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করে। দেশে করোনার সংক্রমণ চূড়ায় (পিক) উঠেছিল গত বছরের জুন-জুলাই মাসে। সে সময় বিশেষ করে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার রোগী শনাক্ত হয়। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ কমতে দেখা যায়। বেশ কিছু সময় পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশে সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী।
বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে আইইডিসিআরের পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, রোগী শনাক্তের ভিত্তিতে সংক্রমণের উৎস চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। অজানা উৎসের ঝুঁকি থাকায় সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য বিধি মানতে হবে।