নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথমে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে পরে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় যৌতুকের দাবীতে স্ত্রী সোনিয়া দাশের উপর অমানষিক নির্যাতন। ভ্রাতৃবধুর সাথে জড়িয়ে পড়েন অবৈধ সম্পর্কে। প্রথম স্ত্রী সোনিয়া দাশ কে যৌতুকের দাবীতে অত্যাচার-নির্যাতন করে তাড়িয়ে দিয়ে প্রমীলা দাশ নামের জনৈক একাধিক স্বামী পরিত্যাক্তা নারীকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে ঘর-সংসার করছেন তিনি। বলছি আশাশুনি উপজেলার রামদেবকাটি গ্রামের মৃত রঞ্জন দাশের পুত্র প্রতারক সহাদেব দাশের কথা। প্রথমে কোদন্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পরে নৈকাটি মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন সহাদেব দাশ। টাকা আর এলাকার প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ভালবেসে বিয়ে করা স্ত্রী সোনিয়া দাশকে নিজ বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছেন তিনি।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়–লি গ্রামে মাসির বাসা রামদেবকাটির সহাদেব দাশের। মাসির বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে একই গ্রামের মৃত: ননী গোপাল দাশের কন্যা সোনিয়া দাশ সুমিত্রার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সহাদেব দাশের। পরে সহাদেব দাশের কথামত বিয়েতে আবদ্ধ হন সোনিয়া দাশ সুমিত্রা। ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর সাতক্ষীরা জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে হয় সহাদেব-সুমিত্রার। বিয়ের পর নিজের পিত্রালয় আশাশুনির রামদেবকাটিতে সোনিয়াকে নিয়ে যান সহাদেব। বিভিন্ন ছলনায় সোনিয়ার নিকট থেকে হাতিয়ে নেন ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। এছাড়া স্বর্ণালঙ্কার-আসবাবপত্র সহ সোনিয়ার পরিবারের কাছ থেকে অনেক উপটৌকন গ্রহণ করেন। বছর দেড়েক ভালভাবে কাটার পর সোনিয়ার নিকট ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে সহাদেব ও তার পরিবার। পিতা-মাতাহীন সোনিয়ার পক্ষে সহাদেবকে আর কোন টাকা দেওয়া সম্ভব নয় জানালে সোনিয়ার উপর নেমে আসে অত্যাচারের খড়গ। কখনো সহাদেব, কখনো তার ভাই মহাদেব ও ভাইয়ের স্ত্রী অর্চনা দাশ শারীরীক ও মানষিকভাবে নির্যাচন করে সোনিয়াকে। দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখা হয় তাকে। এর মধ্যে সোনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হলে সহাদেব দাশের কুপরামর্শে মহাদেব দাশের স্ত্রী অর্চনা দাশ কৌশলে জ্বরের ঔষধের কথা বলে সোনিয়াকে গর্ভপাতের ঔষধ খাওয়ায়। ফলে আলোর মুখ দেখার আগেই ৬ মাসের অন্তস্বত্ত্বা সোনিয়া দাশের অনাগত সন্তান ঝরে যায়। এত কিছুর পরেও স্বামীর সংসারে আকড়ে ছিলেন সোনিয়া দাশ সুমিত্রা। কিন্তু অত্যাচার ও শারীরীক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে একপর্যায়ে স্বামী গৃহ ছেড়ে নিজের পিত্রালয়ে ভাইদের কাছে চলে যেতে বাধ্য হয় সোনিয়া। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ইউএনও বরাবর অভিযোগ করে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় পরে সাতক্ষীরা জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে গত ২০১৪ সালের ১৮ আগস্ট যৌতুক নিরোধ আইনে স্বামী সহাদেব সহ তার বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সোনিয়া দাশ। যার নং-সি,আর ২৮৬/১৪। উক্ত মামলায় ৩ দফা হাজতবাস করেন সহাদেব দাশ। পরে পারিবারিক আদালতে পারিবারিক ১০/২১ নং মামলা ও খুলনা জজ কোর্টে ৩৭৭/২২ নং মামলা দায়ের করেন। এসব মামলা বর্তমানে বিভিন্ন আদালতে চলমান আছে। এরপর দেবহাটার সন্তোষ অধিকারীর কন্যা একাধিক স্বামী পরিত্যাক্তা প্রমীলা অধিকারীকে বিয়ে করেন সহাদেব দাশ। তার সাথেই করছেন সুখের সংসার।
এদিকে সহাদেবের প্রথম স্ত্রী সোনিয়া দাশ সুমিত্রা প্রায় একদশক স্বামীর বাড়িতে বিতাড়িত হয়েও শাখা-সিঁধুর আকড়ে ধরে পিতার বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন সোনিয়া দাশ সুমিত্রা। দৈনিক সাতনদীর সাথে একান্ত আলাপ চারিতায় সোনিয়া জানান, “ ভালবাসার জালে ফেলে আমাকে বিয়ে করেন সহাদেব। বিয়ের সময় ও পরে আমার পরিবার তাকে টাকা পয়সা ও বিভিন্ন উপটৌকন দেয়। এর পরেও সে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করতে থাকে। এর মধ্যে আমি অবগত হই তার ভাই মহাদেবের স্ত্রী অর্চনার সাথে সহাদেবের পরকীরার সম্পর্কের কথা। এ বিষয়ে আমি প্রতিবাদ করলে সহাদেব, মহাদেব, অর্চনা আমাকে মারধর করে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমার গর্ভের সন্তানকেও তারা পৃথিবীর মুখ দেখতে দেয় নি। আমি দীর্ঘ্য ৯-১০ বছর স্বমীর গৃহ থেকে বিতাড়িত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি প্রশাসনের কাছে, সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাই যাতে আমি স্বামীর অধিকার ফিরে পেয়ে বাকিটা জীবন স্বামীর গৃহে কাচাতে পারি। ”