সময়ের আবর্তনে পাল্টে যায় বহমান গতিধারা। আশা-নিরাশার দোলাচলে জানান দেয় নতুন বছরের আগমনী বার্তা। চাওয়া-পাওয়ার নৈরাশ্য কষ্টের ব্যাপ্তি প্রকাশ করে। আবার প্রত্যাশিত প্রাপ্তি মনকে আন্দোলিত করে। তেমনি ২০২০ সালটিও বদলে দিয়েছে আমাদের অনেক কিছু। বছরটিকে ঘিরে দুঃসহ যাতনার গøানি পোহাতে হয়েছে বারবার।
আজ পহেলা জানুয়ারি। খ্রিস্টিয় সন ২০২১ এর প্রথম দিন। শুরু হলো নতুন দিনপঞ্জির ক্ষণ গণনা। চীরতরে বিদায় নিলো ২০২০ সাল। মুহুর্তেই অতিত হয়ে গেল ৩৬৫ দিনের এক খ্রিস্টব্দ।
২০২০ সালটা কেমন যেন এক ঐকতানবিহীন বেরসিক জীবনের আঁধারেই নিমজ্জিত থেকে যায়। ২০২০ সালটির প্রথম থেকে নিস্তব্ধতার আঁধারে মোড়ানো না থাকলেও শেষ হয়েছে আঁধারের ঘনঘটায়। বছরটির শুরুতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ চীনে ছড়িয়ে পড়লেও মনে তেমন শঙ্কা তৈরি করেনি। কিন্তু আস্তে আস্তে সারা বিশ্বে মহামারির প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ায় শঙ্কিত মুহ‚র্তটুকুই বারবার পেছন ফিরে ভেসে আসে। তাড়া করে বেড়ায় শঙ্কিত সময়। কঠিন সময়টুকু পার করতে হয়েছে অস্পৃশ্যতার মাঝে। লকডাউন শব্দটির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে সেই কঠিনতর সময়ের মাঝে। সবকিছু স্বাভাবিকতার মাঝেই শুরু হয়েছিল ২০২০ সাল। সবার আশা ছিল সুন্দরের প্রতীক্ষায়। সবই যেন ছাপিয়ে যায় মহামারির বিরূপতায়। অতি আপনজনদের হারিয়ে কারো কারো পরিবারে বিস্মৃতির অকাল থাবা নেমে আসে। কারো মনে জায়গা করে নিয়েছে নিকষ কালো জীবন। তারপরও খুঁজে ফিরে সুন্দরের প্রতিধ্বনি। মাঝে মাঝে দেখতে পেয়েছি আঁধারের অতলে হারিয়ে গিয়েছে অসংখ্য ভালোবাসার স্থান। কেউ কেউ রিক্ত হস্তে ধারণ করে এখনো ভালোবাসার স্মৃতিময় প্রহর। বারবার বেদনাহত হয়ে আসে মহামারিতে ফেলে আসা আতঙ্কিত দিনগুলো।
এছাড়া আমাদের মনে বিষ্মতার ছাপ ফেলে নেতিবাচক কিছু ঘটনার প্রভাবে। ধর্ষণের মতো কিছু ঘটনা শুধু আমাদের মনে নয়, গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে আতঙ্কিত করে তুলে। ফলে আমরা দেখতে পাই বিদগ্ধ জাতির নিষ্প্রভ চেহারা। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদÐ হওয়ায় বর্তমান সরকারের সফলতার অন্যতম নিদর্শন বলা চলে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের কালো থাবায় নিষ্পেষিত হয়ে আসে ফ্লয়েডের জীবন। ফলে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার সরব প্রতিবাদও দেখতে পাই সেখানে। আশা করতেই পারি, বর্ণবাদের বিভাজন কিছুটা হলেও দ‚রে সরে যাবে। তবে বছরটিতে অনেক সুন্দর কিছু ঘটনার অবতাড়না করে। ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ানো একটা গতানুগতিক রীতিতে পরিণত হয়েছিল। সেটার পরিসমাপ্তি না হলেও অন্তত ব্যাপ্তি কমেছে। লাগাম টেনে দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মতো ভীতিকর পরিবেশ থেকে। মনে হয় এ বছরই কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা ভীতিকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে। যেন একটি সুন্দর সকালের অপেক্ষায় থাকি। আঁধারের গøাানি মুছে গিয়ে ২০২১ সালটি সৌন্দর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে আসবে নব ছন্দে। নতুন বছরের নতুন প্রহরটুকু শুরু হবে সুন্দরের ঐকতানে। দেখতে যেন না পাই মলিনতায় বিস্মৃত হয়ে আসা মহামারির আঁধারে ডুবন্ত সমাজ। ক্ষণিকের তরে আঁধার দ‚রীভ‚ত হয়ে কেটে যাবে ঘোর অন্ধকার। স্নিগ্ধ আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে আসবে নতুন দিনের প্রত্যাশায়। জানান দেবে নতুন দিনের শুভলগ্ন নতুনত্বের আগমনে।