
জি,এম নজরুল ইসলাম : সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়—যেখানে একদিন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ত চারদিকে, আজ সেই প্রতিষ্ঠানই যেন দুর্নীতির অন্ধকারে নিমজ্জিত। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন (ইনডেক্স নং ৫৫২৮৮৮)-এর বিরুদ্ধে উঠেছে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ, যা কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, গোটা সমাজের নৈতিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিগত ১৬ অক্টোবর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক এ.কে.এম মাহফুজুর রহমান মহোদয়ের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় তিনি বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব অর্পণ করেন সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসারের ওপর।
অভিযোগপত্রে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো।
বিনা অনুমতিতে ও টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের ইট, দরজা, জানালার গ্রিল ও আসবাবপত্র বিক্রি করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
সরকার উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ফিউশন ফি প্রদান করলেও, প্রধান শিক্ষক নিয়মিতভাবে তাদের কাছ থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে বেতন আদায় করে আসছেন।
ম্যানেজিং কমিটি গঠনের পূর্বে দাতা সদস্য এস.এম. শফিকুল ইসলামের দেওয়া ২০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে কোনো শাখা না থাকা সত্ত্বেও এনটিআরসির মাধ্যমে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সরকারি অর্থের অপচয় ঘটানো হয়েছে।
চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি দেওয়ার নামে তিনজন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে প্রতারণা করা হয়েছে, যার ফলে সাতক্ষীরা আমলী আদালতে একাধিক মামলা (সি.আর ৭৪০/২২, ৭৬৯/২২, ৭৭০/২২) দায়ের হয়েছে।
বিদ্যালয় ভবন সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ লক্ষ টাকার কাজের বিনিময়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে ল্যাপটপ চাঁদা হিসেবে গ্রহণ করে নামমাত্র কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতির মাধ্যমে রেজুলেশন করিয়ে নিজের জন্য মাসিক ৫০০০ টাকা সম্মানী নির্ধারণ করে নিয়েছেন। যা সম্পূর্ণভাবে বিধিবহির্ভূত।
নতুন পাঁচতলা ভবনের আসবাবপত্রে নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করে সরকারি অর্থের অপব্যবহার ও মানহানিকর কাজের সহযোগিতা করেছেন।
এলাকাবাসীর ক্ষোভ প্রশমিত করতে ঠিকাদারের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা চাঁদা নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র বিক্রি, অষ্টম শ্রেণির সনদ বিক্রয়সহ আরও বহু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ স্থানীয়দের মুখে মুখে ফিরছে।
এই অভিযোগগুলো শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির চিত্র নয়, বরং একটি সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি। শিক্ষা যেখানে জাতি গঠনের ভিত্তি, সেখানে যদি শিক্ষকেরাই হন অনিয়মের কারিগর, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা এক অশনি সংকেত।
স্থানীয় সচেতন মহল ও অভিভাবকরা এই বিষয়ে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তারা চান, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিদ্যালয়টিকে পুনরায় শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত করা হোক।

