সনাতন ধর্মালম্বীদের (হিন্দু স¤প্রদায়ের) সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ মহা অষ্টমী বা কুমারী পুঁজা। আজ এমন এক সময়ে মা দুর্গা পৃথিবীতে এলেন, যখন পুরা দুনীয়া করোনার বিষাক্ত মহামারিতে আক্রান্ত। হৃদয়ে আনন্দ থাকলেও সীমাবদ্ধতার আবর্তে ঘেরা মঞ্চ যেন সবকিছু ক্রাশ করে ফেলেছে। তাই বিগত দিনগুলোর মতো নেই তেমন কোনো আনন্দ, শিশুদের মাঝে নেই হৈচৈ। নেই সেরকম উৎসবমুখর কোনো পরিবেশ। মন্দিরে মন্দিরে ঠিকই ঢাক বাজছে, কাঁসর বাজছে; পুরোহিত প‚জা করছেন, ভক্তরা মনভরে দেবীর আরাধনা করছেন, ভক্তিভরে অঞ্জলি দিচ্ছেন। কিন্তু সবার মধ্যেই একটা অদৃশ্য ভয় বিরজমান। দেহের দ‚রত্ব বজায় রেখে, নিশ্বাস নিরাপদে শ্বাসতন্ত্রে পর্দা দিয়ে উল্লল্লাশে অংশগ্রহন করবে সকল বয়সের মানুষ। দুর্গাপ‚জার ম‚ল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার ষষ্ঠী প‚জার মাধ্যমে। সারাদেশে এবার ৩০ হাজার ২১৩টি মÐপে প‚জা অনুষ্ঠিত হবে। আর ঢাকা মহানগরে এবার প‚জামÐপের সংখ্যা ২৩২, গত বছর যা ছিল ২৩৮। প‚জা শেষ হবে ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে। এর মধ্যে সপ্তমীর দিনে করোনা থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। দুর্গাপ‚জা শুধু হিন্দু স¤প্রদায়ের উৎসবই না ভেবে এটি এখন সার্বজনীন বাঙালীর উৎসবে পরিণত হয়েছে। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। অশুভ অসুর শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুভ দেবশক্তির চ‚ড়ান্ত বিজয়ের দিন হিসেবেই দুর্গাপ‚জার দশমীর দিনটিকে বলা হয় ‘বিজয়া দশমী’। অসুরকুলের দম্ভ-দৌরাত্ম্য থেকে দেবকুলকে রক্ষায় মাতৃরূপী ও শক্তিরূপী দেবী দুর্গার আগমন। অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা দেবকুলকে রক্ষা করেন। অন্যায় ও অশুভকে পরাস্ত করার মাধ্যমে ন্যায় ও শুভবোধের প্রতিষ্ঠা ঘটে। দেবী দুর্গা সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পক্ষের সংগ্রামে মর্ত্যরে মানুষকেও সাহসী করে তোলেন। দ‚র করে দেন যত গ্লানি, হিংসা-দ্বেষ, মনের দৈন্য ও কলুষ। যাবতীয় মহৎ গুণাবলির প্রতি দেবী দুর্গা মানুষকে আকৃষ্ট করেন। বর্তমানে এ দেশে দুর্গোৎসব কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় স¤প্রদায়ের আচার-অনুষ্ঠান ও আনন্দ-উৎসব উদযাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের মিডিয়াগুলোও এটিকে সার্বজনীন উৎসব গণ্য করে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সাজায়। শাকদীয় এই উৎসবকে সামনে রেখে দৈনিক সাতনদী গত ১৬ই অক্টোবর বিশেষ ক্রেড়পত্র প্রকাশ কলে। ইতোমধ্যে সরকার প‚জা উপলক্ষে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করেছে। মুসলীম সংখ্যাগরিষ্ট এই দেশটি রষ্ট্রিয় ভাবে অসম্প্রদায়ীক চেতনা ধারণ করে। সবাই মিলে এই উৎসব পালনের মধ্য দিয়েই সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি এবং পারস্পরিক সৌহার্দের বন্ধন আরো দৃঢ় করতে হবে। পাশাপাশি এবারের প‚জাতে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। দেবী দুর্গা আশির্বাদ নিশ্চ্য়ই আমাদের উপর অর্পিত হবে। অবশ্যই নিধন করবে অসুররূপী এই শক্তিশালী করোনা ভাইরাসকে। সেই প্রত্যাশাই বাঙালী জাতীর।