
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের গোবিন্দকাটি গ্রামে ৫ কেজি গাঁজাসহ আটক হয় অত্র ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান আজাদসহ তার ৩ সহযোগী। পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশিত হয় তার বিভিন্ন অপকর্মের।
এরপর থেকে মুখ খুলতে শুরু করে। ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আজাদের নির্যাতনের শিকার বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। এলাকার একাধিক মানুষ মুখ খুলতে শুরু করে দিয়েছে তার বিরুদ্ধে। এতদিন যারা আজাদ বাহিনীর ভয়ে চুপ ছিল সে আটক হওয়ায় আনন্দের বন্যা বইছে তাদের মনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানায়, ঝাউডাঙ্গাসহ সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ আজাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তার লাঠিয়াল বাহিনী ও কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল এসব এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কেউ তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পেত না। তার অত্যাচার নিরবে সহ্য করতো। যদি কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতো তাহলে তার লাঠিয়াল বাহিনী ও কিশোর গ্যাং মানুষের বাড়ি গিয়ে হামলা চালাতো। দিনের আলোয় প্রকাশ্যে মানুষকে তুলে নিয়ে আজাদ বিভিন্ন কায়দায় অত্যাচার করতো। কোনভাবেই তাকে দমন করা সম্ভব হচ্ছিল না।
তার হাত থেকে কেউ রেহাই পেত না। সকলে তার কাছে ছিল শিশু। এমনকি কোন মেয়ে বা কারো স্ত্রী পছন্দ হলে তার ওই লাঠিয়াল বাহিনী ও কিশোর গ্যাং দিয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন করতো। কিন্তু জীবনের মায়ায় কেউ তার অপকর্মের কথা বলতে পারতো না। এক কথায় তার কুর্মের কাহিনী খুলনার প্রয়াত খুনি কুখ্যাত এরশাদ শিকদার কেও হার মানায়। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মানুষ হত্যা করার অভিযোগ। অবৈধ কালো টাকার জোরে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ক্ষমতায় কোন কিছুই তোয়াক্কা করতো না।
কুখ্যাত আজাদের এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিষয়ে জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী আরো বর্ণনা করে বলেন। সামান্য একজন টোকাই বø্যাকার ও ধুড় পাচারকারী বর্তমানে মফিজ দালাল পরিচয় দিয়ে ভোমরা ও বেনাপোল বন্দর এলাকায় চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। সে এই নামে পরিচিত। তার রয়েছে দুটি আলিশান বাড়ি। যে বাড়ির ভিতরে রয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড।
আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকে দামি দামি মদ,ফেনসিডিল,গাঁজা,ও ইয়াবা তার বাড়ি দুটির ভিতরে রয়েছে নাকি টর্চার সেলও। গ্রামবাসীর ভ্যাষ্য মতে সেই টর্চার সেলে বিভিন্ন মানুষকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করতো। সম্প্রতি ঝাউডাঙ্গার একটি রাইস মিল ও ঔষধের দোকান থেকে দুজন ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যায় আজাদ বাহিনী। পরে তাদের সেখানে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে। তার বাড়ির ভিতরে রয়েছে রঙ্গ মঞ্চ সেখানে বিভিন্ন মেয়েদের নিয়ে এসে প্রতিরাতে আমোদ-ফুর্তি করতো। তাছাড়া যদি কোন মেয়ে বা কারো স্ত্রী পছন্দ হতো তাদেরকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের অত্যাচার করতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, বেশ কিছুদিন আগে গোবিন্দ কাটি গ্রামের আলম নামের মোটরগাড়ির এক শ্রমিককে হত্যা করে আজাদ বাহিনী। সেই মামলার আসামি ছিল আজাদ। সেই হত্যার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মামলা থেকে রেহাই পায়। তার অত্যাচার থেকে কেউ রেহাই পেত না। সীমান্তের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীরা প্রতিরাতে আসতো তার বাড়িতে।
এমনকি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় ছিল আজাদের দুই আলিশান বাড়িতে। তারা সেখানে থাকতো আমোদ ফুর্তি করতো আজাদ এর নির্দেশে। বিভিন্ন মানুষকে অত্যাচার করতো। তাছাড়া ভোমরা ও বেনাপোল বন্দর দিয়ে ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাচাঁমাল গামী ট্রাক রাস্তায় আটকিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরিচয়ে নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতো। তাছাড়া সে এক সময় বিজিবি সোর্স হিসেবেও কাজ করতো। প্রথম জীবনে আজাদ ভারতীয় একজন লবণ বিক্রেতা ও ধুড়পাচাকারী দালাল থাকলেও বর্তমানে সে কোটি কোটি টাকার মালিক। নামে-বেনামে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা। রয়েছে অবৈধ অনেক ধনসম্পত্তি। ঝাউডাঙ্গা বাজারে সরকারি জায়গা দখল করে নির্মাণ করেছে দোকান।
এই আজাদ মাদক ব্যবসা, মানুষকে ভারতে কাজ দেওয়ার নাম করে মানুষ পাচার,খুন, বিভিন্ন বøাকারদের মাল ছিনতাই, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদন্হ কর্মকর্তা পরিচয়ে চাঁদাবাজি। সরকারি জায়গা দখল,জুয়া,ওয়ান্টেনসহ সকল প্রকার অনৈতিক কর্মকান্ডের কাজ সে করতো। ঝাউডাঙ্গা সহ সীমান্তবর্তী আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষ আজাদের দৃষ্টান্তম‚লক শাস্তির দাবি জানিয়েছে প্রসাশনের নিকট।