স্টাফ রিপোর্টার : সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সেটেলমেন্ট অফিসের ৪ কর্মচারী-কর্মকর্তা ও দালাল চক্রের দুর্নীতি অনিয়মের অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। শ্যামনগর সেটেলমেন্টের এএসও জাকির হোসেন ও তৌহিদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত পেশকার রনজিত চন্দ্র সূত্র ধর, পিওন বদরুল ইসলাম সিন্ডিকেটে বন্দী উপকূলের ভূমি মালিকরা। অবৈধ অর্থের বিনিময়ে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি সংঘটিত হচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়াই জোনাল অফিসের বসে মূল বালাম বই ইচ্ছামত কাটা কাটি, বিভিন্ন মৌজার জমি কেটে অবৈধ ভাবে অন্য ব্যক্তির নামে করে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ভূক্তোভোগীরা এসব অনিয়ম, দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে মহাপরিচালক, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপকূবর্তী শ্যামনগরের দায়িত্বে থাকা এএসও জাকির হোসেনের একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেটের বেশকিছু অনিয়ম, জালিয়াতির সত্যতা মিলেছে। দাপ্তরিক ভাবে তদন্ত করলে অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা মেলবে। দীর্ঘ ৬ বছরের অধিক সময় একই উপজেলার দায়িত্বের থাকার সুবাদে ওই এলাকার চিহ্নিত দালালদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে সেখানে রামরাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে ওই উপজেলার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পিছনে ফেরেননি এএসও জাকির হোসেন। আর তাই বছরের পর বছর ওই এলাকার সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে চলেছেন তিনি। সাম্প্রতিক মোটা অংকের টাকা নিয়ে ৪২ (ক) ধারায় অবৈধ পন্থায় ভূয়া রায় দিয়েও তা টেকাতে পারেনি জাকির হোসেন। প্রায় ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে যশোর সেটেলমেন্ট অফিসে থাকা নথি গোপনে খুলনা জোনাল অফিস থেকে ভুয়া রায় দেন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জাকির হোসেন। পরে বিষয়টি জানা জানি হলে ভূক্তভোগীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জোনাল কর্মকর্তা ওই রায় বাতিলের জন্য পরিচালক ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর বরাবার ৩১.০৩,০০০০,৬৫১.০৪.০৮২.২৫-৪৬৮ স্মারকে প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ এর ৪২ (ক) বিধিমতে রুজুকৃত ১১৪৪/২০২৪ ও ১৬৪৯/২০২৪নং মিস মামলার রায় বাতিল চেয়ে এ পত্র প্রেরণ পাঠানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ৯ এপ্রিল তারিখে ওই রায় বাতিলের নির্দেশ দেয় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। একই সাথে এ রায়ের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে এক মাসের মধ্যে তাদের তালিকা মহাপরিচালক বরাবর পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, গত ২৭ এপ্রিল জোনাল সেটেমেন্ট ও ৩০ এপ্রিল ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক বরাবর জাকির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একাধীক ভূক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে ওই সিন্ডিকেটের নানা অনিয়ম, দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ সহ অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে সাত¶ীরা জেলাধীন শ্যামনগর উপজেলার ৮১নং হরিনগর, ৮২নং ধুমঘাট, ৮৩নং মুন্সিগঞ্জ, ১১৬নং আবাদ চন্ডিপুর এবং ১২০নং পদ্মপুকুর মৌজার চূড়ান্ত যাঁচ কাজ শ্যামনগরে নিয়ে অনিয়মের আশ্রায় নেওয়া হবে। সঠিক বিচারের স্বার্থে মৌজার চূড়ান্ত যাঁচ কাজ শ্যামনগরে না করে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস খুলনা জোনাল অফিস অথবা শ্যামনগর উপজেলার পরিবর্তে সাত¶ীরা সদরে শুনানীর দাবি জানানো হয়েছে। কারণ জাকির-তোহিদ সিন্ডিকেটের কাছে উপকূলের সাধারণ মানুষ অসহায়। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পোষা বাহিনীর সামনে কোন অনিয়মের প্রতিবাদ করতে পারে না সাধারণ মানুষ। মহাপরিচালক বরাবর দায়ের করা অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, যাঁচ কাজ করার জোনাল অফিস কর্তৃপ¶ শ্যামনগরে রেকর্ডের নিরাপত্তাদানে ব্যর্থ হওয়ায় তা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। শ্যামনগর অফিসে মুহরি নামধারী দালালচক্র অতান্ত সক্রিয়। তারা অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা/কর্মচারীর সহায়তায় বৈধ নিয়ম কানুন এর তোয়াক্কা না করে বেআইনীভাবে একের নামে প্রস্তুতকৃত রেকর্ড কাটাকাটি ও টেম্পার করে অন্যের নামে রেকর্ড করায়। এখানে শেষ নয়, ভূমি মালিকগনের অনেকের রেকর্ড ইচ্ছাকৃত ভাবে কাটাকাটি করে টেম্পার করা হয়। অতঃপর তাদেরকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়। ভূমি মালিকগণ হাজির হলে নানান অজুহাতে তাদের নিকট টাকা দাবী করা হয়। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার প্রতিপ¶ হতে মোটা টাকা গ্রহন করে তার বিনিময়ে সত্য ও সঠিক ভাবে প্রস্তুতকৃত রেকর্ড কর্তন করে অন্যের নামে রেকর্ড করা হয়। শ্যামনগরে রেকর্ড কর্তনের বিষয়টি অত্যন্ত ব্যাপক ও নজিরবিহীন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা/কর্মচারীর সহায়তায় দালালচক্রের সখ্যতা এতই ঘনিষ্ট যে, প্রকাশ্যে দিবালোকেও অফিস চলাকলীন সময়ে তারা অফিসের টেবিল চেয়ারে বসে অফিসের কর্মকর্তা/কর্মচারীর ন্যায় কাজকর্ম করে। এমনকি অফিসের খাতাপত্র রেজিষ্টার ইত্যাদি তাদের নিয়ন্ত্রনে রেখে তারাই লেখালেখি করে। এ ধরনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার/কর্মচারীর নিকট আদৌ রেকর্ড ও নকশা নিরাপদ নয়। এসব কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ এতই প্রভাবশালী ও দুর্নীতি পরায়ন যে, ৫/৬ বৎসর এক স্টেশনে চাকুরি করার পরেও তাদেরকে বদলী করা হচ্ছেনা। দালালচক্র ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পত্র পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা এবং ভুক্তভুগী ভূমি মালিকদের জোনাল কর্তৃপ¶ের কাছে অভিযোগ হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। শ্যামনগর উপজেলায় কর্মরত বর্তমান কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং প্রতিদিন আগমন ঘটা এসব দালাল চক্রের নিকট চূড়ান্ত যাঁচ কাজ ও রেকর্ড ফেরত পাঠানো হলে ভূমি মালিকগণ এমন চরম দুঃখ দুর্দশার সম্মুখীন হবে, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাই যাঁচ কাজের জন্য আমাদের মৌজা রেকর্ড শ্যামনগর অফিসে না পাঠিয়ে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস, খুলনা জোন, খুলনা অথবা শ্যামনগর উপজেলার পরিবতে সাত¶ীরা সদরে বিশ্বাস যোগ্য ও দায়িত্বশীল অফিসার দ্বারা সম্পন্ন করানোর জন্য অনুরোধ করেছেন তারা। শ্যামনগরের ৮১নং হরিনগর, ৮২নং ধুমঘাট, ৮৩নং মুন্সিগঞ্জ, ১১৬নং আবাদ চন্ডিপুর এবং ১২০নং পদ্মপুকুর মৌজার যাঁচ কাজ জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস, খুলনা জোন, খুলনা অথবা শ্যামনগর উপজেলার পরিবতে সাত¶ীরা সদরে সম্পাদন করানোর ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়েছে। এবিষয়ে সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুলিপি দেয়া হয়েছে সচিব (ভূমি মন্ত্রণালয়), পরিচালক (প্রশাসন), ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, পরিচালক (ভূমি রেকর্ড), ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, পরিচালক (জরিপ), ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার, খুলনা জোন, খুলনা।
শ্যামনগর সেটেলমেন্ট অফিসের ভারপ্রাপ্ত পেশকার রনজিত চন্দ্র সূত্র জানান, আমরা এবিষয়ে কিছু জানান নেই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে এএসও জাকির হোসেন জানান, সব অফিসের সাথে কমবেশি দালালদের সম্পর্ক থাকে। এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। এছাড়া ভূয়া রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আদেশের বিষয়ে তামিল করি। পরে সেটি বাতিল হয়েছে শুনেছি।