রুবেল হোসেন: সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ আংশিক) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একে ফজলুল হক, তার পুত্র সাবেক সংসদ সদস্য এসএম আতাউল হক দোলনের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকালে শ্যামনগর উপজেলার গুমানতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে ছাত্র শিবিরের ছেলেদের মারপিটের অভিযোগ উঠে এমপি দোলনের পুত্র রাব্বির বিরুদ্ধে। মারপিটে আহত ৪ জন শিবির কর্মী শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের ৩ থেকে ৪ জন কর্মী গুমানতলী ফাজিল মাদ্রাসায় লিফলেট বিতরণ করতে আসলে মাদ্রাসার শিক্ষক ও স্থানীয় জনগণ লিফলেট বিতরণে বাধা প্রদান করেন। পরবর্তীতে দুপুর দেড়টার দিকে ১০ থেকে ১২ জন জামায়াত কর্মী এসে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ছাত্র শিবিরের শাখা সভাপতি রাশিদুল ও উপজেলা ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক আসিফ সহ ৪ জন আহত হয়। আহতদের শ্যামনগর উপজেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এরই জের ধরে বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে তিন শতাধিক দুর্বৃত্ত সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা একে ফজলুল হকের পুত্র ও সাবেক সংসদ সদস্য আতাউল হক দোলনের বাড়িতে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। এরপর পার্শ্ববর্তী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি একে ফজলুল হক সাহেবের বাড়ি ভাঙচুর এবং লুটপাট করেন। দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে এমপি দোলনের ব্যবহৃত গাড়ি, ৩ টি মোটর সাইকেল, ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় ঘরে রক্ষিত নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটপাটের অভিযোগ করেছেন এমপি দোলনের পরিবার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান ও শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুর রহমান সাতনদীকে জানান, “ছাত্রশিবিরের ছেলেরা গুমানতলী ফাজিল মাদ্রাসায় দাওয়াতি কাজে গেলে ছাত্রলীগ কর্মী বাবু ও সাবেক এমপি আতাউল হক দোলনের পুত্র রাব্বির নেতৃত্বে কিছু লোক তাদের বাঁধা দেয়। আমাদের ছেলেরা ছাত্রশিবিরের পরিচয় দিলে তাদের উপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আমাদের ছাত্রশিবিরের একটি শাখা সভাপতি কাশিমাড়ির গোবিন্দপুরের ইদ্রিসের পুত্র রাশিদুল ও মুন্সিগঞ্জের আব্দুল্লাহর পুত্র উপজেলা ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক আসিফ সহ ৪ জন গুরুতর আহত হয়। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। পরে সাধারণ মানুষ উত্তেজিত হয়ে এমপি দোলন ও ফজলুল হকের বাড়িতে হামলা করে। আমরা আমাদের দিক থেকে বিশৃঙ্খলা এড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এমনকি প্রশাসনকে বারবার বলেছি ঘটনাস্থলে দ্রুত যেয়ে পরিস্থিতি কন্ট্রোল করার জন্য। আমরা কোন বিশৃঙ্খলা চাই না। আমরা এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এসএম আতাউল হক দোলন সাতনদীকে জানান, গুমানতলী ফাজিল মাদ্রাসা আমাদের পৈত্রিক জমির উপর নির্মিত। সকালে ৮/১০ জন শিবির কর্মী উক্ত মাদ্রাসায় যেয়ে ছাত্রদের শিবিরের সদস্য হতে চাপ প্রয়োগ করে। মাদ্রাসার ছাত্ররা কোন রাজনীতি করতে অস্বীকার করে। কিন্তু শিবির কর্মীরা জোর করতে থাকলে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সহ অন্যান্য শিক্ষকরা এসে শিবির কর্মীদের চলে যেতে বলে। এ ঘটনায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে দুপুরের দিকে মাদ্রাসার ছাত্ররা যখন গোসল করছিল তখন তাদের উপর হামলা করে শিবিরকর্মীরা। ছাত্রদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে শিবিরকর্মীদের ধাওয়া দেয়। পরে ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে জামায়াত সংগঠিত হয়ে বিকালে আমার ও আমার বাবার বাড়িতে হামলা করে। তারা আমার বাড়ি গাড়ি ভেঙে ও বাড়িতে লুটপাট করে ৩০-৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে। আমি থানা পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে কথা বলেও কোন প্রতিকার পাই নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ তাইজুল ইসলাম সাতনদীকে জানান, “ সকালে শিবিরকর্মীরা দাওয়াতি কাজে গেলে সাবেক এমপি দোলনের পুত্র রাব্বির নেতৃত্বে তাদের উপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় আহত হয়ে ৪ জন শিবির কর্মী হাসপাতালে ভর্তি হলে বিক্ষুব্ধরা এমপি দোলনের বাড়িতে হামলা করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকার পরিস্থিতি এখন ভালো।” এ ঘটনায় আইনগত কি পদক্ষেপ নিবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “শিবিরের ৪ জন ছেলে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তারা এজাহার দিলে মামলা নিব।”