দ্যুতিদীপন বিশ্বাস: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সর্বত্র চলছে ইরি ধান কাটার তোড়জোড়। কৃষকের এই ধান ঘরে তুলতে কৃষক কৃষাণি কারও যেন একটুও ক্লান্তির ফুসরত নেই। চারদিকে এখন ধান কেটে ঘরে তোলার প্রতিযোগিতা চলছে। আকাশে মেঘের ঘনঘটা হালকা ঝড়ো হাওয়া উঠলেই দ কৃষক তাড়াতাড়ি এই ধান ঘরে তুলতে যেন ব্যাকুল। দীর্ঘ দিনের এই পরিশ্রমের ফসল আউশ ধান সংরক্ষন করে ঘরে তুলতে কেউ কেউ আধুনিক কৃষি মেশিনারিজের (হারভেস্টর মেশিন) মাধ্যমে আবার কেউ কেউ তাদের নিজেদের এলাকার শ্রমিক নিয়ে এই ধান কাটার মহোৎসবে ব্যস্ত রয়েছেন।
কৃষকদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এ বছর সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ইরি ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার সদরের ধুলিহর ইউনিয়ন, ফিংড়ি ইউনিয়ন, আলীপুর, ব্রক্ষ্মরাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায় কৃষক-কৃষাণিরা তাদের ছেলে মেয়ে সহ অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে নিজ নিজ জমির ধান কর্তন করছে। কেউ আবার মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করে খড় থেকে ধান ছাড়াচ্ছেন। আবার কোথাও কোথাও দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বা অস্থায়ী উঠান তৈরী করে রৗদ্রে ধান শুকাচ্ছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় বাম্পার ফলন হলেও কর্তনের সময় আবহাওয়ার পরিস্থিতি ভাল না থাকায় আউশ ধান ঘরে তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষক কৃষাণিদের।
এ ব্যাপারে ফিংড়ি ইউনিয়নের ধানচাষী নজরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ গাজী, রেজাউল করিম, ধুলিহর ইউনিয়নের ধানচাষী সুকুমার ঢালী, স্বপন বিশ্বাস সহ অন্যান্য ইউনিয়নের কয়েকজন ধান চাষী জানায়, এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ের বৈরি আবহাওয়া জনিত কারনে আমাদের উৎপাদিত ধান ব্যাপক হারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা সময়মত ধান শুকাতে পারছিনা। আকাশে কিছু সময় বৃষ্টি আবার কিছু সময় রৌদ্র এবং বৃষ্টির পানি উঠানে লেগে থাকায় আমাদের ধান শুকানো ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে আমাদের ধান এবং খড় পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা আরো জানায়, যাদের বড় ঘর আছে তারা ঘরের মধ্যে ইলেক্ট্রিক পাখা ব্যবহার করে সংরক্ষিত ইরি ধানের পানি শুকাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ইরি ধানের ফলন ভাল হয়েছে। এছাড়াও আমরা কৃষি অফিসারগণ এবং উপ সহকারী কৃষি অফিসাররা মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক চাষীদের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। তাদের যে কোন সমস্যায় পরামর্শ দিয়েছি, সময়ে সময়ে জমি পরিদর্শন করেছি। যথাযথ ভাবে সার, সেচ, পোকা মাকড় ও আগাছা দমন সহ সকল বিষয়ে উপযুক্ত সময়ে পদক্ষেপ গ্রহন করে চাষীদের পরামর্শ প্রদান করেছি। যে কারনে এ বছর ইরি ধানের ভাল ফলন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে মাঝে মাঝে আকাশে মেঘসহ বৃষ্টি হচ্ছে। তাই যেসব কৃষকের ধান পাকা এবং কাটার উপযোগি হয়েছে তারা সময় নষ্ঠ না করে দ্রুত ধান কেটে ফেলাই উত্তম। এতে ফলনের সঠিক পরিমান ঠিক থাকবে। নির্দ্দিষ্ট সময়ে ধান কর্তন না করলে বৃষ্টিপাতে ধান ঝরে পড়ে যাবে এবং যে পরিমানে ধান পাওয়ার কথা তার থেকে কম পেতে পারে।