ইয়ারব হোসেন: সাতক্ষীরা শহরে একটি ভূমি জালিয়াত চক্রের দাপটে অস্থির হয়ে উঠেছে ভূমি মালিকরা। চক্রটি খেয়ালখুশী মতো জমিতে ইটবালু ফেলে প্রাথমিক দখলের চেষ্টা করে। এ নিয়ে বিরোধের জেরে মালিক পক্ষ বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নেয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে এই মামলা। ফলে তারা হয়রানি হতে থাকেন।
সাতক্ষীরা শহরের এমন বেশ কয়েকটি জবর দখল চেষ্টার ঘটনা ঘটলেও শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার স্বার্থে ভূমি মালিকরা কোনো সংঘাত সংঘর্ষে যেতে চান না। অপরদিকে জালিয়াত চক্রটি তাদেরকে এমন ফাঁদে ফেলবার চেষ্টা করে থাকে।
জালিয়াত চক্রের ফাঁদে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বাংলা মোটরের মালিক মো. তমেজউদ্দিন সরদার। তিনি জানান তার নিজ নামে ১৯৭৭ সাল থেকে ৭৮ শতক রেকর্ডীয় ভূমি রয়েছে। তিনি এই জমির বর্তমান সময় পর্যন্ত যথাযথভাবে খাজনা প্রদান করে জমিতে দখলে রয়েছেন। ডিপি ৩৬৩৫ খতিয়ানে সাবেক ১১১৮৫ দাগে হাল ১৫৬৭১ ও ১৫৬৭৪ দাগের এই জমি নিয়ে কারও সাথে বিরোধ না থাকায় এতোদিনে কোনো দ্বন্দ্ব ফ্যাসাদ হয়নি। অভিযোগ করে তিনি বলেন ্আকষ্মিকভাবে কাশেম বাহিনী হিসাবে পরিচিত শহরের একটি জালিয়াত চক্র ওই জমি দখলের চেষ্টা করে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে শান্তি রক্ষার স্বার্থে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত গত ৫ মে ওই জমিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এর ফলে জালিয়াত চক্রটি পিছু হটে যায়। তিনি বলেন এরই মধ্যে ৭ শতক জমিতে গত ১৪ জুন সুযোগ বুঝে চক্রটি রিং স্লাব ইট বালু খোয়া বাঁশ ফেলে রাখে। নিষেধাজ্ঞার জবাব দিতে প্রতিপক্ষ জালিয়াত চক্র আদালতে বারবার সময় চায়। এর ফলে বৃদ্ধ তমেজউদ্দিন কেবলই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি জানান কাশেম বাহিনী প্রধান কাশেম শাহজি ও তার সহযোগী আবদুর রহমান বাবু তমেজউদ্দিন সরদারের ঘরবাড়ি ভাংচুর মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি। তাদের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলাও রয়েছে।
ভূমি জালিয়াত চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন খুলনার পাইকগাছার সিরাজুল ইসলাম ও সামসুন নাহার, পলাশপোলের টুকু, বাবু ও করিম। এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ জন। অভিযোগ রয়েছে চক্রটি জাল কাগজপত্র তৈরি করে এমনকি ভূয়া রেকর্ড সৃষ্টি করে ভূমি মালিকদের জমি দখল করে থাকে।
এদিকে জালিয়াত চক্রটি সম্প্রতি শহরের রসুলপুরে উলফাতুন আরা খানমের ৮৩ জমি দখল করতে যায় ভুয়া কাগজ দেখিয়ে । আদালত তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সেখানে তারা ইট বালু ফেলে রেখেছে। পলাশপোল এলাকার জাহানারা জাহিদের মালিকানাধীন ৫ কাঠা জমি একইভাবে ভুয়া কাগজপত্রের জোরে দখল করে নেয় চক্রটি। সেখানেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। অন্যদিকে মঈদুল ইসলামের মালিকানাধীন ৩৩ শতক জমি দখল চেষ্টা করে তারা। আদালতের মাধ্যমে ওই জমিতে এখন ১৪৫ ধারা জারি রয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সেখানে নির্মান সামগ্রী ফেলে রেখেছে। এমন দখলবাজির আরও কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে চক্রটি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাশেম সাংবাদিকদের বলেন ‘ জালিয়াতির অভিযোগ সত্য নয়। এ সম্পর্কে আমি কিছু জানিই না। আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার , সহকারি পুলিশ সুপার ও থানায় অভিযোগ গেলেও আমরা তার জবাব দিয়েছি। বিনা কারণে আমাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা হয়েছে’। বাবু জানান ‘তমেজউদ্দিন সরদারের কোনো বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই’।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। শান্তি শৃংখলা রক্ষার জন্য আমরা নির্মান কাজ বন্ধ করে আদালতের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকতে বলে থাকি। এমন কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।