নিজস্ব প্রতিবেদক: লবানাক্ত পানির সংকটে চিংড়ি ব্যবসায় ধ্বংস নেমেছে সাতক্ষীরা বিসিকে। উপযুক্ত পরিবেশ থাকার শর্তেও পার্শ্ববর্তী বেতনা নদী থেকে লবানাক্ত পানি সংগ্রহের যথেষ্ট সুযোগ না থাকায় সাগর থেকে লবন পানি পরিবহণ করে এনে লোকসানের মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। লোকসানের মুখে পড়ে কয়েকটি চিংড়ি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে ব্যবসায়ী মালিকরা।
সাতক্ষীরা বিসিকে মোট ৯৬ প্লাটের বিপরীতে ৩৩ শিল্প প্রতিষ্টানের বরাদ্দ দেওয়া আছে। যেখানে চালু রয়েছে ২৬ টি প্রতিষ্টান। তাছাড়া লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ হয়েছে ৪ টি প্রতিষ্ঠান। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠান।
এদিকে, এক সময় চিংড়ির রমরমা ব্যবসা হলেও চিংড়ি ব্যবসায় এখন ধ্বস নেমেছে। চারটি চিংড়ি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি বন্ধ হয়ে গেছে। নামে নামে টিকে আছে চিংড়ি বাংলা হ্যাচারী। চিংড়ি ব্যবসায় লোকসানে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে, বিসমিল্লাহ হ্যাচারি ও সোনারগাঁও হ্যাচারি ও চিশতিয়া হ্যাচারি। লোকসানের মুখে পড়ে চিংড়ি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও পুনরায় চালু করিনি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বিসিক শিল্প নগরী সাতক্ষীরা থেকে গড়ে প্রতি বছর ৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার পন্য উৎপাদিত হয়। এই শিল্প নগরীতে নতুন করে সম্ভবনা দেখা দিয়েছে এগ্রো বেজ ও ভেটেরিনারি বিজনেস।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে চিংড়ি হ্যাচারির ব্যবসায়ীরা পার্শ্ববর্তী বেতনা নদী থেকে খুব সহজে লবনাক্ত পানি সংগ্রহ করত তবে বেতনা নদী খনন করায় সেটা এখন সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে সাগর থেকে পানি পরিবহন করে আনতে হতো, এতে অনেক বেশি খরচ পড়ে যেত। এটাই মূলত লোকসানে পড়ার কারণ।
চিংড়ি ব্যবসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ব্যবসায়ীরা নতুন করে এগ্রো বেজ শিল্প ও ভেটেরিনারি ঔষধ কারখানার দিকে ঝুঁকছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রুপের শিল্প কারখানা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া দুইটি ভেটেনারি ঔষধ কারখানা অল্প সময়ে মধ্যে কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, লবণাক্ত পানির অভাবে চিংড়ি ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে বিসিক শিল্প নগরী সাতক্ষীরায় বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে আছে। পরিত্যক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে চালুর কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরিয়ে নতুন প্রতিষ্টান করার সুযোগ করে দিচ্ছেনা।
তিনি আরও জাননা, সাতক্ষীরা চিংড়ীর জন্য বিখ্যাত হলেও লোকসানে পড়ে চিংড়ি ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে উদ্যক্তারা এখন কৃষি ও ভেটেরিনারি শিল্পের দিকে ঝুঁকছে। কৃষি কীটনাশক থেকে শুরু করে গবাদি পশুর ঔষধ কারখানা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী কামরুল হাসান জানান, সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরীতে এক সময় চিংড়ির রমরমা ব্যবসা ছিল। তবে লবণাক্ত পানির সংকটে পড়ে চারটি চিংড়ি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি বন্ধ হয়ে গেছে। একটি টিকে আছে তবে সেটা নামে নামে। তিনি আরও জানান, নতুন করে বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ব্যবসায়ীরা এখন চিংড়ির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে এগ্রো পেজ ও ভেটেনারি বিজনেসের দিকে ঝুঁকছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন জানান, বিসিক শিল্প নগরী ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্নের দিকে এখানে তেমন শিল্প উদ্যোক্তা পাওয়া যেত না। সে সময়ে ব্রানভূমি আকারে পড়েছিল এই শিল্প নগরী। তবে বর্তমানে ৯৬ টি শিল্প প্লট ৩৩ টা শিল্প ইউনিটের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্য ২৬ টি শিল্প ইউনিট চালু ও ৭ টি শিল্প ইউনিট বিভিন্ন কারন বন্ধ হয়েছে। এই প্রতিষ্টানগুলো বছরে ৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন করে।
তিনি জানান, সাতক্ষীরা এক সময়ে চিংড়ির জন্য বিখ্যাত ছিলো। এখানে ব্যবসায়ীরা চিংড়ি পোণা উৎপাদন করতো। তবে লবানাক্ত পানি সহ অন্য কারনে চিংড়ি ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন উদ্যোক্তারা চিংড়ি থেকে মুখ ফিরিয়ে এগ্রো বেজ ও ভেটেনারি বিজনেসের দিকে ঝুঁকছেন।