নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে ঘুষ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স মেলেনা। লাইসেন্স করতে আসা সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, দালালদের সঙ্গে অফিস কর্তা ব্যক্তিদের সখ্যতা থাকায় ঘুষ দিয়ে পরীক্ষায় সহজে পাস করা যায়। ঘুষ না দিলে পরীক্ষায় পাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। দালালদের মাধ্যমে এ ঘুষের টাকা অফিস কর্তা ব্যক্তিদের পকেটে ঢোকে। তবে কর্তা ব্যক্তিদের দাবি, নিয়ম মাফিক সেবাপ্রার্থীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অফিস সহকারি সাইফুল ইসলামও উচ্চমান সহকারী শেখ মামুন আল হাসান উল্লাহ দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। উচ্চমান সহকারী শেখ মামুন আল হাসান উল্লাহর সাথে কাজ করে দালাল পলাশ, রিপোন, মামুন। আর পরীক্ষার্থীকে পাস করানো থেকে শুরু করে এসব ঘুষের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ন্ত্রণ করেন অফিস সহকারি সাইফুল ইসলাম। অফিসে যে কর্মচারির সাথে যার বেশি সখ্যতা ওই দালাল তার সঙ্গে কাজ করেন। সেবাপ্রার্থীর কাছ থেকে যত টাকাই নেওয়া হোক না কেন অফিসে ওই সেবাপ্রার্থী বাবদ দালালকে ২ হাজার ৫০০ টাকা ঘুষ গুনতে হয়। আর এই টাকা অফিসের কর্মচারি থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের মাঝে নির্ধারিত হারে বণ্টন হয়। যেদিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তার আগের দিন দালালরা ঘুষের টাকা পরিশোধ করে অফিসে পরীক্ষার্থীর রোল জানিয়ে দেন। পরের দিন শুধু ওই পরীক্ষার্থী লিখিত, মৌখিক, প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় উপস্থিত থাকলেই পাস করেন। ঘুষের টাকা না দিয়ে পরীক্ষায় পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা নগন্য। সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে কথা হলে একাধিক দালাল বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তারা সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। আবেদন খরচ, লার্নার, ব্যাংক ড্রাফট মিলে খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। অফিসে ঘুষের খরচ ২ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। বাকি টাকা দালালদের থাকে। জেলা শহর থেকে শুরু প্রান্তিক গ্রাম পর্যন্ত দালালরা কাজ করেন। একজন দালাল গড়ে মাসে ৫ থেকে ৭টি কাজ পান। অফিসে কর্মরতরা সেবাপ্রার্থীর ধরন বুঝে কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি টাকা নিলেও অভিযোগ এড়াতে বেশিরভাগ টাকা দালালদের হাত দিয়ে নিয়ে থাকেন। দালালরা বলেন, ‘এ ঘুষের টাকা হিসাব করে টপ টু বটম বণ্টন হয়ে যায়। আমরা কাজ পেলে টাকা পাই। আর অফিসের লোকেরা প্রতি কাজ থেকে টাকা পান। আর পরীক্ষার্থীকে পাস করানো থেকে শুরু করে এসব ঘুষ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন আলোচিত সাইফুল ইসলাম। তিনিই সিস্টেমে ঘুষ নেওয়া পরীক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তার হাতেই সব কল কবজা।’ একাধিক সেবাপ্রার্থী বলেন, ভোগান্তি এড়াতে অনলাইন আবেদন, পরীক্ষায় পাস থেকে শুরু করে লাইসেন্স কার্ড পাওয়া পর্যন্ত মৌখিক চুক্তিতে কিছু ক্ষেত্রে সাইফুলের পছন্দের দালালদের টাকা দেন তারা। অফিসের স্টাফদের সহযোগিতা পেলে তো তাদের দালালদের কাছে যেতে হতো না। এদিকে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে কর্মরত আলোচিত অফিস সহকারি সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে গার্লফ্রেন্ডসহ একাধিক নারী কেলেংকারির অভিযোগ আছে। ‘স’ অধ্যাক্ষরের গালফ্রেন্ডকে পৃথক বাসাভাড়া, সংসার খরচ বাবত দৈনিক দিতে হয় মোটা টাকা, তিনি নিজেও ভাড়া থাকেন ৯ হাজার টাকার ফ্লাটে, বাসায় ২ টা এসি, অত্যাধুনিক আসবাবপত্রে মোড়া বাসায় রাজকীয়ভাবে বসবাস করেন। তিনি মাসিক বেতন পান কত টাকা? তার আছে অঢেল টাকা, শহরের পুলিশ লাইনের পাশে অর্ধকোটি টাকায় ক্রয় করা জমির উপর বহুতল ভবনের নির্মানকাজ চলমান। গ্রামের বাড়ি কালিগঞ্জেও ক্রয় করেছেন কয়েক বিঘা জমি। দুর্নীতিবাজ সাইফুল ইসলামের একাধিক স্থানে ক্রয়কৃত জমি ও ব্যক্তিগত পছন্দের দালাল রিপোন, আব্দুল্লাহসহ সেবাপ্রার্থীদের হয়রানির বিষয় জানতে চাইলে তিনি হুমকী দিয়ে বলেন আপনারা আগেও আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করেছেন, আমার হাত অনেক লম্বা, স্যারকে দিয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দিয়ে পত্রিকা বন্ধ করে দিব। সার্বিক বিষয় জানতে সহকারি পরিচালক কে এম মাহবুব কবির ০১৯৬৬-৬২২০৭৭ মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি অফিস সময়ের বাইরে কথা বলতে অপারোগতা প্রকাশ করেন।
সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিস: ঘুষ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স মেলেনা
পূর্ববর্তী পোস্ট