নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার বিনেরপোতা বেতনা নদীর বেঁড়িবাধ ভেঙে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ,ফসলি জমিসহ নিম্নাঞ্চলের বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম ভোগান্তি। এসব সৃষ্ট ঘটনার সাতক্ষীরা পাউবোর ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলামকে খলনায়ক বলে দাবি করেছে এলাকাবাসি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিভিশন-২’র নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম কর্তব্য অবহেলা, দায়িত্ব সচেতনতা ও কর্মদক্ষতার অভাবে পরিপুষ্ট। যার ফলে স্থানীয় জনগণ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের ২/৩ দিন আগে বারবার জানানোর পরও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সেসময় সামান্য কিছু কাজ করলে আজ এই ভাঙ্গনের সৃষ্টি হতোনা।
কোটি কোটি টাকার জান মালের ক্ষতি হতোনা ভাঙ্গন কুলের মানুষের। সরকারি লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় করতেও হতোনা। শুধুমাত্র নির্বাহী প্রকৌশলীর উদাসীনতায় সাতক্ষীরা বিনেরপোতায় ভেঙ্গেছে বেড়িবাধ । সৃষ্টি হয়েছে বন্যার। ভেসে গেছে অত্র এলাকার মানুষের স্বপ্ন। হারিয়েছে হাজার হাজার মৎস্য চাষী ও পরিবার একমাত্র অর্থ উর্পাযনের পথ । এছাড়াও অনেক মৎস্য চাষিদের ব্যাংক ঋণের বোঝা ,জমির হারি পরিবার পরিজন ও সন্তানদের পড়াশুনার খরচসহ নানা চিন্তায় দিশেহারা ভাঙনকুলের মানুষ। অনেকে বহু কষ্টের জমানো শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে ।
এদিকে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করা পানির সৃষ্ট জলবদ্ধতায় মানববেতর জীবন যাপন করছে হাজার হাজার পরিবার। ঘরের মধ্যে পানি। রান্না খাওয়ার ব্যবস্থাও তলিয়ে আছে পানিতে। বিন্দুমাত্র ব্যবহার উপযোগী নেই পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সংকট। সব মিলে মানবেতর জীবন যাপন করছে ভাঙ্গন কুলের মানুষ। শুধু একজন অথর্ব কর্মকর্তার কর্মদক্ষতার অভাবে মানুষের কোটি কোটি টাকার জানমালের ক্ষতি, এই দায়বদ্ধতা কার?
আরো জানা গেছে, সাতক্ষীরায় যোগদানের প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও তার কর্মাঞ্চল সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই এই অথর্ব নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলামের। ভাঙ্গনের দুই দিন পর ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে যান এই নির্বাহী প্রকৌশলী। যেখানে অত্র এলাকার মানুষের জীবন মরনের প্রশ্ন, সেখানে নিজের গ্লেজ ধরে রাখার জন্য এসওকে দিয়ে ছাতা ধরিয়ে রোদ প্রতিহত করার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় এই গ্লেজি বয়ের। এছাড়াও তিনি বেশির ভাগ সময় অফিস নাকরে বাংলোয় থাকেন।
তিনি বাংলোয় থাকতে পছন্দ করেন। অসুস্থ, মিটিংয়ের বাহানা করে ঢাকায় বেশী সময় অতিবাহিত করার চেষ্টা করেন। আর বৃহস্পতিবার আসলে কোন দায়িত্বের তোয়াক্কা নাকরে ঢাকায় চলে যান। তিনি এতটাই দায়িত্বহীন যে ঘ‚র্ণিঝড় রেমাল পরবর্তী সময়ে সাতক্ষীরার উপকুল এলাকায় বিন্দুমাত্র কাজ করার প্রয়োজন মনে করেননি। তাহলে এই নির্বাহী প্রকৌশলীর কাজ কি? চলমান প্রকল্প পরিচালক সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী সেই ছবিবুর রহমানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে বড় কাগজ পাঠানো কি তার কাজ ?
ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে আক্তার, দেলোয়ার, সবুজ, জাহাঙ্গীর, নিমাই, শ্যামলসহ অনেকে বলেন, নিম্নচাপ ও এলাকার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে,ভাঙনের দুইদিন আগে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২’র এক্স ই এন মনিরুল ইসলামকে বার বার জানিয়েছি, বিনেরপোতা মহাশশ্মান সংলগ্ন বেতনা নদীর বেঁড়িবাধ ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহন নাকরে আমাদের জানিয়েছেন বৃষ্টি হচ্ছে,এখনতো আমাদের কিছু করার নাই,পরে দেখা যাবে। স্যার এখনও ভাঙেনি এখুনি যদি কিছু কাজ করা যায় তাহলে ভাঙনটা রোধ করা সম্ভব। স্যার একটু দেখেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকলে আমাদের এলাকার ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি আমাদের কোন কথার গুরুত্ব দেননি।
এলাকাবাসী বলেন, মৎস্য চাষ আমাদের অর্থ উর্পাযনের একমাত্র পথ।সেটিও পানিতে ভেসে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। ব্যাংক লোন,জমির হারি কিভাবে শোধ হবে? অনেকের জমানো শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে পাগলের উপক্রম দেখা দিয়েছে। পরিবার পরিজন বাচ্চার পড়াশুনার খরচসহ নানা চিন্তায় দিশেহারা ভাঙনকুলের মানুষ।
এলাকাবাসী আরো বলেন, আমাদের ঘরের মধ্যে পানি। রান্না খাওয়ার ব্যবস্থাও পানিতে তলিয়ে আছে। বিন্দুমাত্র জেগে নাই পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার। পাচ্ছিনা বিশুদ্ধ খাবার পানীও। বর্তমান আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি।আমাদের সব ভোগান্তি,কোটি কোটি টাকার মাছ ও ফসলের ক্ষতি শুধুমাত্র সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন ২ এর অদক্ষ উদাসীন অথর্ব নির্বাহী প্রকৌশলীর জন্য। আমাদের কথায় গুরুত্ব দিয়ে, সেদিন একবার সাইডে এসে দেখতো, একটা ঘন্টা কাজ করতো তাহলে আজ এই পরিণতি হতো না।
এমন দায়িত্বহীন অথর্ব অফিসার সাতক্ষীরার মতো ঝুঁকিপ‚র্ণ জোনে কিভাবে দায়িত্ব পায়, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায় ভাঙ্গনবাসী। সাতক্ষীরা প্রাণ উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, আপনি অফিসে আসেন। এলাকাবাসী আপনাকে বেরিবাদ ঝুঁকিপ‚র্ণ জানিয়েছিল আপনি সে বিষয়টি গুরুত্ব দেন নাই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই দুইদিন পরেই তো গেছিলাম। ততখানত আপনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বেড়িবাঁধ ভেঙে অত্র এলাকার হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের প্লাবিত হতো না মানুষের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে যেত না। ঘর বাড়ি প্লাবিত হতো না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ডিসি অফিসে মিটিংয়ে ছিলাম।
খুলনার পাউবোর তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক সবিবুর রহমান বলেন, আমি দেরীতে খবরটা পেয়েছি এটা সত্য। কিন্তু জানা মাত্র ব্যাবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছি। আমি নিজেও সাইট ভিজিট করেছি। কাজ চলমান আছে আশা করছি আগামী ২/১ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। কর্তব্যরত নির্বাহী প্রকৌশলীর গাফিলতিতে অত্র এলাকার মানুষের ভোগান্তি, কোটি কোটি টাকার চাষীদের মাছ ভেসে গেল এর দায়বদ্ধতা কার জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি। এবিষয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশীর বিদ্যুৎ কুমার সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোন সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি।