
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: ঢাকা, ২২ আগস্ট (শুক্রবার), ২০২৫ঃ সাতক্ষীরা জেলায় পুনরায় ৫টি সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের দাবি জানিয়েছে। শুক্রবার (২২ আগস্ট) সাতক্ষীরা উন্নয়ন সমন্বয় ফোরামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানায়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাতক্ষীরা জেলা একটি সীমান্তবর্তী, কৃষিনির্ভর ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এলাকা। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও এই জেলা এখনও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোয় দীর্ঘদিনের বৈষম্যের ফলে জেলার জনগণ সমান প্রতিনিধিত্ব এবং উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। ২০২২ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী সাতক্ষীরা জেলার জনসংখ্যা ২১,৯৬,৫৮২ জন, যার মধ্যে গ্রামীণ জনসংখ্যা ৮০.৩% এবং শহরজীবী ১৯.৭%। আয়ের উৎসের মধ্যে কৃষি ৬২.৫৬%, বাণিজ্য ১৬.২৩%, সেবা ৪.৮৬%, শ্রম ৪.৩৩%, এবং শিল্প ১.৫১%—এই পরিসংখ্যান থেকেই জেলার গ্রামীণ ও কৃষিনির্ভর চরিত্র স্পষ্ট।
এই প্রেক্ষাপটে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সমন্বয় ফোরাম এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাতক্ষীরা জেলায় ১৯৮৬ সালে গঠিত ৫টি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের জোর দাবি জানাচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে সাতক্ষীরা জেলার জাতীয় সংসদীয় ৫ আসন বিলুপ্ত করে, এই আসন সংখ্যা কমিয়ে ৪টি করা হয়, যার ফলে জেলার অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ২০০৬ সালের বিভাজন স্থানীয় জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক এলাকা অনুযায়ী যথাযথ ছিল না।
প্রস্তাবিত ৫টি সংসদীয় আসন সমূহ হলো সাতক্ষীরা‑১ (তালা ও কলারোয়া), সাতক্ষীরা‑২ (সাতক্ষীরা সদর), সাতক্ষীরা‑৩ (দেবহাটা ও কলিগঞ্জ), সাতক্ষীরা‑৪ (আশাশুনি) ও সাতক্ষীরা‑৫ (শ্যামনগর)।
সাতক্ষীরা উপকূলীয় জেলা হিসেবে লবণাক্ততা, নদীভাঙন, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। জেলার অবকাঠামো, ভোমরা স্থলবন্দর, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে রয়েছে বড় ঘাটতি। উপকূলীয় টেকসই বাঁধ নির্মাণে অগ্রগতি নেই, আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। সীমিত সংখ্যক সংসদীয় আসনের ফলে এসব সমস্যার যথাযথ প্রতিফলন ও সমাধান প্রাপ্তি হচ্ছে না।
এই বিষয়ে ফোরামের আহ্বায়ক এবং বৃহত্তর খুলনা সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাসুদ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তার বক্তব্যে বলেন, “কম সংখ্যক আসন থাকায় জেলার সমস্যা ও সম্ভাবনার যথাযথ প্রতিনিধিত্ব জাতীয় পর্যায়ে হচ্ছে না। ২০০৬ সালের আসন পুনর্বিন্যাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন: প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ভৌগোলিক দূরত্ব, জলবায়ু ঝুঁকি, উন্নয়নের চাহিদা প্রভৃতি যথাযথভাবে বিবেচনায় আনা হয়নি — যার ফলে এখন আমরা ৫টি আসনের পুরনো কাঠামো পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি। ৫টি আসন পুনর্বিন্যাস করা হলে প্রান্তিক অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।”
ফোরামের আহ্বায়ক কমিটির উপদেষ্টা এবং বৃহত্তর খুলনা সমিতির ট্রেজারার আফসার আলী সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তার বক্তব্যে বলেন, “৫টি আসন থাকলে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো দ্রুত উন্নয়নের পথে অগ্রসর হবে এবং জাতীয় সংসদে জনগণের কণ্ঠস্বর আরও কার্যকর হবে।”
ফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং সাতক্ষীরা জেলা সমিতির নির্বাহী সদস্য মোস্তফা বকুলুজ্জামান, সাতক্ষীরা জেলা সমিতির যুগ্ম সম্পাদক এবং ফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এম মেহেদী হাসান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বক্তব্যে জানান, ১৯৮৬ সালের ৫টি আসনের কাঠামো পুনর্বহাল হলে জেলার উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কার্যকারিতা আরও জোরদার হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, জেলার চিংড়ি, আম, অন্যান্য কৃষিজ পণ্যের রপ্তানি এবং সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কিন্তু জেলার অনুপযুক্ত সাংসদীয় বিভাজনের কারণে এই সম্ভাবনাগুলো পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না।
সাতক্ষীরা উন্নয়ন সমন্বয় ফোরাম জোর দাবি জানাচ্ছে—বর্তমানে সাতক্ষীরার জনসংখ্যা ২১ লাখের বেশি এবং এর অধিকাংশ জনগণ গ্রামীণ ও কৃষিনির্ভর। আবার, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায়, উন্নয়নের বিশেষ পরিকল্পনা ও স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সমন্বয় ফোরামসহ বিভিন্ন মহল পুনরায় ৫টি সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের দাবি জানাচ্ছে।
পাশাপাশি জেলার অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন, ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সাতক্ষীরায় পুনরায় ৫টি সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক পক্ষপাত নয়, স্থানীয় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে আসন সীমানা নির্ধারণ জরুরি।
সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায় এই ফোরাম।