নিজস্ব প্রতিবেদক : আজকের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরাই একদিন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যানে কাজ করবে। শিশুদেরকে যুগোপযোগী শিক্ষাদানে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে সাতক্ষীরা কিন্ডার গার্টেন নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বে-সরকারীভাবে ১৯৯৬ সাল থেকে স্বগৌরবে সুনামের সাথে শিশুশিক্ষা প্রদান করে যে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র পলাশপোল স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে ছায়াঘেরা সুনিবিড় ও মনোরম পরিবেশে এ বিদ্যালয়ের কমপ্লেক্স ভবন গড়ে তুলেছেন শিক্ষানুরাগী মোঃ রফিকুল হাসান। মানুষটির চিন্তা চেতনা খুবই সুদূরপ্রসারী। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই কোমলমতি শিশুদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধানসহ সহ অভিজ্ঞ ২৭ জন শিক্ষক। প্লে থেকে নার্সারী, কেজি ওয়ান, কেজি টু- ৪টি শ্রেণিতে ৯শ’র অধিক ছাত্র-ছাত্রী ২ শিফটে এখানে পাঠদান করা হয়। হাটি হাটি পা পা করে আসা শিশুদেরকে মাতৃস্নেহে লালন-পালন ও খেলার ছলে শিক্ষাদানের সময় প্রতি শ্রেণিতে ২ জন শিক্ষকের সাথে একজন পরিচারিকা সহায়তা করে থাকেন। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বাংলা মিডিয়াম। এখানে শিশুর মেধা বিকাশের জন্য সরল সহজ ও বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন শিশুদের সমন্বয়ে পাঠদান করে যে অনন্যতা ধরে রেখেছে তা এখন দৃষ্টান্ত। প্রতিষ্ঠানটির আশেপাশে ইংলিশ মিডিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও শিক্ষার গুণগত মান ধরে রাখায় এখানে নির্দিষ্ট আসনের বিপরীতে অন্যকোন শিশু ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে না। প্রতিবছরই একটি বৃহৎ অংশের শিশু এ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলেও আসন সংখ্যার সীমাবদ্ধতার কারণে সুযোগ পায় না। একাধিক অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বিদ্যালয় থেকে যাদের শিশুশিক্ষা শুরু হয়েছিল তাদের মধ্যে মিথিলা ও মৌরীন নামের দুই শিক্ষার্থী এখন ডাক্তার। তাজিম হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক। অর্পা ইশাত, সেমন্তি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নী করছে। এছাড়া অসংখ্য ছাত্রছাত্রী দেশ বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত রয়েছে। সাতক্ষীরা কিন্ডার গার্টেনের পাঠদানে রয়েছে নিজস্ব কলাকৌশল। শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে পাঠদান, শীতকালীন এবং গ্রীষ্মকালীন স্কুলড্রেস, প্রতিদিন এ্যাসেম্বলীর সাথে জাতীয় সংগীত ও শরীরচর্চা, বিদ্যালয় থেকেই বই, খাতা, কলম সরবরাহ করা হয়। ক্লাসেই শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান দিয়ে তা আবার সৃজনশীল আকারে ক্লাশেই শেখানে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখানে স্কুল ড্রেসের বাইরে অন্য ড্রেস নিষিদ্ধের সাথে মেয়েদের ক্ষেত্রে কপালে টিপ, লিপিষ্টিক, নেইলপালিশ, গলা ও কানে স্বর্ণের গহনা পরা সম্পূর্ণ নিষেধ। এখানে ধনী গরীব সব শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীই শিক্ষকদের সন্তান। যে কারণে সবাইকে একই নজরে রেখে পাঠদানে আজ সাতক্ষীরা কিন্ডারগার্টেন স্বর্ণশিখরে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদেরও রয়েছে প্রতিযোগিতা। প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের ন্যায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন করা হয়। একজন কোমলমতি শিশুকে বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট সময়সূচিতে নিয়ে আসা ও বাসায় পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য শতভাগ চ্যালেঞ্জ প্রদান করা হয়। সব মিলিয়ে সাতক্ষীরা কিন্ডার গার্টেন পাঠদানে নিজস্ব ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অভিভাবক ও সাতক্ষীরাবাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছে। গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নিজস্ব তহবিলএবং সার্বক্ষনিক সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রন। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, লাভ নয়, লোকসান নয় কোমলমতি শিশুদেরকে দেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে তৈরী করাই মূল উদ্দেশ্য। যে কারণে প্রতিবছর তহবিলের বাইরেও প্রতিষ্ঠাতাকে ২ লক্ষ টাকার অধিক ভর্তুকি দিতে হয়। তবুও তিনি খুশি। কেননা একঝাঁক কচিকাচার মাঝে নিজের জীবনকে খুজে পায়। এরাই আমার সন্তান, এরাই আমার ভবিষ্যৎ, এরাই আমার সাধনা। তাই সাতক্ষীরা কিন্ডারগার্টেন সাতক্ষীরাবাসীর ন্যায় একদিন দেশ ও দশের একটি অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন বলে তিনি মনে করেন। শিশুদের শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, শরীরচর্চা, মাতৃ ও পিতৃস্নেহ সার্বক্ষণিক বজায় রাখার জন্য বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অত্যান্ত জাকজমকপূর্ণভাবে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকমন্ডলী ও সমাজসেবকদের নিয়ে ক্রীড়া অনুষ্ঠান উপভোগ ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন,প্রতিষ্ঠানটির সুনাম আমি শুনেছি। খুব শিঘ্রই শিশু শিক্ষা প্রতিষ্টানটিতে পরিদর্শনে যাবেন বলে জানান।