নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গোৎসব কে সামনে রেখে ৫৭৮ টি পূজা মন্ডপ সেজেছে উৎসবের সাজে।মা দেবীদূর্গার আরাধনা আর মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে শুরু হয়েছে দূর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর)মহাপঞ্চমীর মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে আগামী মঙ্গলবার(৮ অক্টোবর) মহাদশমী বা বিজয়া দশমীর মাধ্যমে শেষ হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) মা দুর্গাদেবীর বোঁধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে ঢাক-ঢোল, কাঁশি, বাঁশি বাজিয়ে মন্ডপগুলিতে পূজা শুরু করে।শুক্রবার(৪ অক্টোবর) মহা ষষ্ঠী’র মধ্যে দিয়ে শুরু হবে এই শারদীয় দূর্গাৎসব।হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা।এবার দেবী মায়ের আগমন ঘোটকে(ঘোড়ায়) দেবী দূর্গার গমনও ঘোটকেঘড়ায়)।যা মোটেও শুভকর নয় বলে দাবী শাস্ত্রষজ্ঞদের।
পূজার প্রথম দিন থেকে মন্ডপে মন্ডপে ঢাক-ঢোল, কাঁশি, বাঁশি আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হবে আকাশ-বাতাস। পূজা মন্ডপ গুলো সাজানো হয়ছে নতুন নতুন সাজে। আলোক সজ্জ্বায় সজ্জ্বিত করা হয়েছে প্রতিটি মন্ডপ। এদিকে আসন্ন দুর্গোৎসবকে ঘিরে সাতক্ষীরার সবকটি উপজেলার জনপদে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আনন্দের হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দূর্গা উৎসব পালনে অনেকে নতুন জামা-কাপড়সহ গৃহস্থালির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কেনা-কাটা শেষ করেছে। সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার পারকুমিরা হরিসভা পূজা মন্ডপের পুরোহিত বিশ্বজিৎ চক্রবর্তি ও প্রতিমা শিল্পীরা জানান, সময় যেহেতু আর নেই তাই গত কয়েক দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম কাজ করে চলেছি। তাছাড়া নিখূঁত মূর্তি তৈরীতে করণীয় সব রকম উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। পরিবারের অন্যরাও এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন। দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে প্রতিমার মাটির কাজ শেষে রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমাগুলো জীবন্ত করে তুলছেন তারা। সদরের কাটিয়া নারকেলতলা মোড় সার্বজনিন পূজা মন্দিরের সভাপতি গৌর দত্ত বলেন, আমাদের পূজা মন্ডপে প্রতীমা তৈরির কাজ শেষে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও শেষ হয়েছে। দূর্গা পূজায় সকল ধর্মের অনুসারিদের দেখতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।প্রতি বছরের ন্যায় এবারো মহাধুমধামে আমরা আমাদের দূর্গা পূজা উদযাপন করবো। সাতক্ষীরা জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি ও জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন ।বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে আইনশৃঙ্খলা ও প্রতিটি মন্ডপের নিরাপত্তা সহ পূজা উদযাপনের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে জেলা মন্দির ও পূজা কমিটির সাথে ।এ বছর সাতক্ষীরায় সর্বমোট ৯৩টি মন্দিরকে ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩৫ টি মন্দিরকে অধিক ঝুকিপূর্ণ ঘোষনা করেছি।তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে যে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করলে কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটবে না আশা করি।
এবার সাতক্ষীরায় সাতটি উপজেলার মধ্যে সদরে ১০৬ টি, (তার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫ টি), কলারোয়ায় ৪৩ টি, (ঝুঁকিপূর্ণ আছে ৫ টি)তালায় ১৮৬ টি,কালিগঞ্জে ৫১ টি(ঝুঁকিপূর্ণ ১২ টি)শ্যামনগরে ৬৬টি,(ঝুঁকিপূর্ণ ৩৭ টি তারমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি) আশাশুনিতে ১০৫ টি, (ঝুঁকিপূর্ণ ২৪ টি, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৪ টি) এবং দেবহাটায় ২১ টি, (ঝুঁকিপূর্ণ ৫ টি, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১ টি) পূজা মন্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে ।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণব ঘোষ বাবলু জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দর্শকদের মন আকর্ষণের জন্য পূজা মন্ডপগুলিকে ভিন্ন আঙ্গীকে সাজানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের দেখার জন্য পূজা মন্ডপে সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা বিধানে সার্বক্ষণিক সচেষ্ট আছে। ২০ জন স্বেচ্ছাসেবককে তাদের পরিচিতির জন্য নির্দিষ্ট ব্যাজ প্রদান করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক পূজা মন্দির প্রাঙ্গণ তদারকি করবেন। যাতে কোনভাবে অপ্রীতিকর ঘটনা কেউ ঘটাতে না পারে।
শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তার বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আমরা মন্ডপগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছি। আর সে অনুযায়ী আমরা তিনটি স্তরের নিরাপত্তা দেব। যেন কোন ধরণের অপ্রতীকর ঘটনা না ঘটে। সেজন্য আমরা সর্বদা সজাগ রয়েছি। সকল সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ যাতে নির্বিগ্নে তাদের দুর্গোৎসব পালন করতে পারে সে জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এছাড়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় থাকবে। যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।