
ভিডিও দেখতে নিউজের নীচে ক্লিক করুন।
নিজস্ব প্রতিবেদক: মা বলল, তোর মূখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। হাসপাতালে যা। সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ঢুকতেই চার জন র্যাব সদস্য আমাকে জোর করে তাদের গাড়ীতে তুলে নেয়। দুই হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে চোখ বেঁধে মারপিট শুরু করে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আমার মূখে-পিঠে কামড় দিতে শুরু করলে যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকি। র্যাব-৬ এর সাতক্ষীরা ক্যাম্পে নিয়ে দুই ঘন্টা ধরে আমার সমস্ত দেহে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের উপকন্ঠে কুচপুকুর গ্রামের নিজ বাড়ীতে দাঁড়িয়ে এভাবেই সাংবাদিকদের সামনে নির্যাতনের বর্ণনা করছিলেন দূর্বৃত্তদের হাতে নিহত তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলামের বড় ছেলে এনামুল হক পলাশ।
সমস্ত শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখিয়ে ঘটনার বর্ণনা দেয়ার সময় পলাশের মোবাইল ফোন বেঁজে ওঠে। হঠাৎ করে পলাশের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায়। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকে আপনারা এই কাহিনী লিখবেন না। তাহলে আমার বাবা চাচা ও ভাইদের মতো আমাকেও পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আামি সহ আমার পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করছি। ওই গ্রামের পলাশের পরিবার ছাড়া অধিকাংশ মানুষ জামায়াত ইসলামের রাজনীতির সাথে জড়িত। ২০১৩ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদির ফাঁসির রায় ঘোষনার পর তাদের পরিবারের বাড়ী ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গান পাওডার ও পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়। একই বছর জামায়াত নেতা কাদের মোল্যার ফাঁসির রায় ঘোষনার পর এই পরিবারের প্রতিপক্ষরা পলাশের চাচা সিরাজুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করে। ২০১৭ সালে তার আপন চাচাত ভাই আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল কবিরকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃত্যু ভয়ে আতংকিত হয়ে পলাশের পিতা স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম নিরাপত্তার কারনে সাতক্ষীরা সদর থানায় ৮ মাস রাত যাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে সাতক্ষীরা সফর করে তৃণমুল আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম ও তার পরিবারের সাথে সাক্ষাত করে সমবেদনা জানিয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে ওই পরিবারটিকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন। কিন্তু তার পরেও নজরুলকে রক্ষা করা যায়নি। গত ২২ জুলাই তারিখে পলাশের পিতা নজরুল ইসলামকে বেলা ১১টার দিকে নিজ বাড়ীর সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে পলাশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পর্যায়ক্রমে একই পরিবারের তিন জন দূর্বৃত্তদের হাতে নিহত হওয়ার কারনে পলাশ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন। গত ১ অক্টোবর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ৩ অক্টোবর মোটরসাইকেল আরোহী দুই অপরিচিত যুবক তার বাড়ীর সামনে অবস্থান নিলে পলাশ তাদের পরিচয় জানতে চায়। তক-বিতর্কের এক পর্যায়ে ওই অপরিচিত দুই যুবক নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে পলাশকে বেধড়ক মারপিট শুরু করে। তার ভাই জনি ও রনি ঠেকাতে আসলে তারাও আক্রান্ত হয়। মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে দুই র্যাব সদস্যের কবল থেকে পলাশ সহ তার ভাইদের উদ্ধার করে। এ সময় পলাশের মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। ছেলের এ অবস্থা দেখে মা সাজেদা খাতুন তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ঢুকতেই সাতক্ষীরা কোম্পানির ৪ র্যাব সদস্য পলাশকে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে গাড়ীতে তুলে চোখ বেঁেধ নির্যাতন করতে করতে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানেও চলে পৈশাচিক নির্যাতন। সন্ধ্যায় মুচেলকা নিয়ে পলাশকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ সময় মত ঘটনাস্থলে না পৌছালে বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেত। একটি অসহায় পরিবারের প্রতি র্যাব সদস্যদের এমন আচারন আশা করা যায় না। আমি র্যাবের সিওকে বিষয়টি জানিয়েছি। পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারটির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মেজর শামীম জানান, আমার সদস্যদের সাথে প্রয়াত নজরুলের ছেলে পলাশের ভুল বোঝাবুঝি হয়। র্যাব সদস্যরা তাকে চড় থাপ্পড় মারে। পরে পলাশ র্যাব বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে হাসপাতালে সার্টিফিকেট আনতে যায়। তিনি মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাই। পরবর্তীতে পলাশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব ক্যাম্পে আনা হয়। পরে সে বাড়ী ফিরে যায়।
তিনি উল্টো এ প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন রাখেন, পলাশ কি অভিযোগ করেছে? কিম্বা সংবাদ সম্মেলন করেছে? তাকে (পলাশ) বলেন আমার কাছে অভিযোগ দিতে।
তিনি এও বলেন, আমার সদস্যরা ভূল করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।