সাতনদী রিপোর্ট: ঘূর্ণিঝড় 'ইয়াস'-এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরাসহ কৈখালী ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বুড়িগোয়ালীনি, পদ্মপুকুর, মুন্সিগঞ্জ, কাশিমাড়ী ও রমজাননগর ইউনিয়নের আরও অর্ধশতাধিক গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। অপরদিকে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রিউলা ও আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। তালা ও দেবহাটারও কিছু অঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গত এলাকার পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়াও লক্ষাধিক একর জমির চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
শ্যামনগর থেকে আমাদের প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম, সিরাজুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান ও আইয়ুব আলী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে সৃষ্ট অতি জোয়ারের চাপে উপকুলবর্তী গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী ও কৈখালী ইউনিয়ন সম্পুর্নভাবে প্লাবিত হয়েছে। আর আটুলিয়া, কাশিমাড়ী, নুরনগর, রমজাননগর ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় সত্তরটি গ্রামে জোয়ারের নদীর পানি প্রবেশ করেছে।
পাশর্^বর্তী খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ, কালিন্দি, চুনকুড়িসহ অপরাপর নদীতে জোয়ারের ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধির ফলে বুধবার দুপুর ১২ টার দিক উপকূলীয় রক্ষা বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। শুরুতে বাঁধের উপর মাটি দিয়ে পানির প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করলেও জোয়ারের তীব্রতার কারনে অল্প সমেয়র মধ্যে স্থানীয়রা ‘আশা’ ছেড়ে দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে থাকে।
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, দুপুর বারটার দিকে জেলেখালী, গাগড়ামারী, নাপিতখালী ও নেবুবুনিয়া এলাকার পাউবো’র বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢুকে একে একে তার ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের সবগুলো প্লাবিত করেছে। তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার রাত কিংবা বুধবার সকালে কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে না উঠলেও পানিতে গোটা এলাকা প্লাবিত হওয়ার পর মানুষ সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে পৌঁছাতে শুরু করে।
কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, বেলা একটার ভাটা শুরু হওয়ার আগেই জোয়ারের তোড়ে তার ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে প্লাবিত হয়েছে। তিনটি অংশের বাঁধ ভাঙলেও আরও অন্তত চল্লিশটিরও বেশী জায়গার বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে নদীর পানি ঢুকে বসতঘর ও মিষ্টি পানির পুকুরগুলো ভাসিয়ে দেয়ায় সমগ্র এলাকায় বিপর্যয়ের সম্ভনা তৈরী হয়েছে।
এদিকে মুন্সিগঞ্জের সিংহড়তলী এলাকার বাঁধ ছাপিয়ে পাশের চুনকুড়ি নদীর পানি সিংহড়তলী, হরিনগর, কচুখালসিহ অন্তত চারটি গ্রাম তলিয়ে গেছে বলে জানায় স্থানীরা। মানুষ শুরুতে বাঁধ এর উপর মাটি ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করলেও প্রবল জোয়ারের তোড়ে সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছে বলে জানায় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম।
পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ্যাড. আতাউর রহমান জানান, খোলপেটুয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের অধিকাংশ পাউবো বাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এসময় ঝাঁপা, সোনাখালী, পূর্ব ও পশ্চিম পাতাখালী সহ কামালকাটি এলাকা তলিয়ে যাবতীয় মৎস্য ঘের একাকার হয়ে যায়। জোয়ারের পানি যেভাবে ভিতরে প্রবেশ করছে তাতে পুরো ইউনিয়ন তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। পদ্মপুকুর ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম জানান পাউবো কর্তৃপক্ষের দায়সারা কর্মকান্ডের জন্য এঅবস্থার সৃষ্টি।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবু ভবতোষ মন্ডল বলেন, খোলপেটুয়া নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারে অধিকাংশ পাউবো বাঁধ তলিয়ে জোয়ারের পানি ভিতরে প্রবেশ করে অধিকাংশ মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্গাবাটি ও দাতিনাখালীসহ পাশর্^বর্তী এলাকার বাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের সাতটি গ্রামকে প্লাবিত করেছে। এসব এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ও রাস্তাসহ কয়েকশ’ চিংড়ি ঘের দুপুরের অগেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বলে জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল।
একইভাবে পদ্মপুকুরের পাতাখালী এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ উপচে ১৫ টি গ্রাম ও কয়েকশ; চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। রমজানগরের সন্নিকটস্থ উপকুল রক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে পানি এসে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সাতটি গ্রামকে প্লাবিত করেছে বলে জানা যায়।
আব্দুল কাদের, জিয়াউর রহমানসহ স্থানীয়রা নদীতে ভাটা শুরু হলেও পানি কমছে না। ফলে রাতের জোয়ারে ইতিমধ্যে প্লাবিত অংশসমুহ আরও পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার শংকায় পড়েছে তারা। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ও অন্তত বিশ হাজার ছোট বড় চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতিসাধিত হয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন ।
কাশিমাড়ীর চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ এবং আটুলিয়ার চেয়ারম্যান আবু সালহ জানিয়েছেন দুপুরের কিছু আগে বেড়িবাঁধ উপচে তাদের ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে নিচুঁ অংশের এসব বাঁধের উপর মাটি দিয়ে পানির প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করছে বলেও তারা জানান।
জেলা প্রশাসন সুত্র জানিয়েছে, শ্যামনগরের অধিকাংশ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার বিষয়টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রানালয়কে অবহিত করে দুর্গত এলাকা ঘোষনার দাবি করা হয়েছে।
একসাথে উপকুলীয় জনপদ শ্যামনগরের বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হওয়া নিয়ে পাউবো’র কতৃপক্ষকে কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছে স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ আম্পানের পর একটি বছর সময় পেলেও পাউবো বাঁধের উপর এক কোদাল মাটি পর্যন্ত দেয়নি। এমনকি সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের নিকট থেকে নিজেরা কাজ নিয়ে শ্রমিক সর্দারদের দিয়ে কাজ করিয়েছে। ফলে বাঁধসমুহ এর সংস্কার কাজ টেকসইভাবে না হওয়ার কারনে সামান্য জলোচ্ছাসের কারনে এত বিস্তীর্ন এলাকা একসাথে প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন উপকূলীয় এ জনপদের বাঁধ মুলত ষাট দশক পুর্বে নির্মিত। পরবর্তীতে নানা কারনে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলেও বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো নিয়ে পাউবো কৃতপক্ষ কোন কাজ করেনি। ফলে সামান্য জোয়ার এলেই বাঁধ ছাপিয়ে বরাবরের মত এবারও নদীর পানিতে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে সৃষ্ট অতি জোয়ারের চাপে উপকুলবর্তী গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন সহ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ায় ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। খাবার পানির সংকটে পড়েছে তারা। সমূহ এ বিপদে পানিবন্দি সমানুষের সহায়তায় এগিয়ে আশার আহবান জানিয়েছেন।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ.ন.ম. আবুজর গিফারী বলেন, তাৎক্ষনিকভাবে সরকারী সাহায্য হিসাবে প্রতিটি ইউনিয়নে নগত ২৫ হাজার টাকা ও ২টন করে চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শুকনা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
আশাশুনির ১০ পয়েন্টে পাউবো’র বেড়ী বাঁধ ওভারফ্লোর ও ভাঙনের বিষয়ে আমাদের প্রতিবেদক সচ্চিদানন্দদেসদয় জানান, উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১০টি পয়েন্টে পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও ওভারফ্লো হয়ে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ২০ কিঃমিঃ বেড়ী বাঁধ ঝুকিতে থাকায় এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
বুধবার সকাল থেবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব নদ-নদী উত্তাল হয়ে ওঠে। হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া উপকূলবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়তে থাকে। দুপুর ১২ টার দিকে প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহনিয়া লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশে দু’টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ওভারফ্লো হয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে পানি ভিতরে ঢুকতে শুরু করে। প্রায় ৩০০ ফুট মত বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যতলা, চাকলা, কল্যাণপুর, রুইয়েল বিল, আনুলিয়া ইউনিয়নের নাকনা সহ ৬টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ওভারফ্লো হয়। নদীর পানি কুড়িকাহুনিয়া, চাকলা, সুভদ্রকাটি, রুইয়ের বিল, হরিশখালি, সোনাতনকাটি, নাকনা গ্রামে জলমগ্ন করে।
আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বলাবাড়িয়া, জেলেখালী, মানিকখালী, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি, পুইজালা, কাকড়াবুনিয়া, কলিমাখালী, হাজরাখালী, বড়দলের কেয়ারগাতিসহ কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও ওভারফ্লো হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, পাাউবো’র কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ রক্ষার কাজে এগিয়ে যান। ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ওভারফ্লো রোধ ও ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হয়।
আশাশুনি উপজেলায় ১১০ কিঃমিঃ পাউবো’র বেড়ী বাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ২০ কিঃমিঃ বাঁধের অবস্থা খুবই ঝুকিপূর্ণ। বছরের পর বছর এই ২০ কিঃমিঃ বাঁধ টেকসই করার দাবী জোরালো ভাবে উচ্চারিত হলেও অদ্যাবধি সেটা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিজ্ঞ জনেরা বলেন, প্রতাপনগরে জাইকার উদ্যোগে বাঁধ রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। ফলে সেখানে বাঁধ ওভারফ্লো ও ভাঙ্গনের ঘটনা ঘটেছে। টেকসই বেড়ী বাঁধ নির্মান ও বাঁধের লেবেল উচু না করা হলে এমন ঘটনা প্রতি বছর ঘটতেই থাকবে বলে তারা মনে করেন।
আশাশুনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম বলেন, ইয়াসের ঝুঁকি থাকায় এলাকার ঝুকিপূর্ণ স্থানে বাঁধ রক্ষার জন্য জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়। আমরা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বাঁধ রক্ষার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছি।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার নাজমুল হুসাইন খাঁন বলেন, কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এবং ওভারফ্লো হয়েছে। কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ রক্ষা করা হবে। সাইক্লোনের ছোবল থেকে প্রাণহানি রোধে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ২৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও ৮০টি সাইক্লোন শেল্টার কাম স্কুল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মেডিকেল টিম সকল এলাকায় দায়িত্বরত আছে। জেলা প্রশাসন মহোদয় দুর্যোক কবলিতদের সহায়তার জন্য প্রতি ইউনিয়নে ২৫ হাজার টাকা করে রিজার্ভ বরাদ্দ দিয়েছেন। গোখাদ্য বাবদ ১ লক্ষ টাকা ও শিশু খাদ্য বাবদ ১ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এসও গোলাম রাবাবী ও আলমগীর হোসেন জানান, প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আশাশুনি সদর ইউনিয়নে অনেক স্থনে ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও ওভারফ্লো হয়েছে। তাৎক্ষণিক ভাবে ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বাঁধ রক্ষা ও ওভারফ্লো ঠেকাতে কাজ করা হচ্ছে। দ্রুত বাঁধ সংস্কারের কাজ করা হবে।
এদিকে তালা প্রতিনিধি আকবর হোসেন ও শেখ ইমরান এর কাছ থেকে জানা যায়, পানির প্রবল চাপে বালিয়ায় টিআরএম এর বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বুধবার(২৬ মে) দুপুরে জোয়ারের পানিতে এ অঞ্চল প্লাবিত হয়। তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এ সময় তড়িৎ গতিতে টিআরএম এর ক্ষতিগ্রস্হ এলাকা পরিদর্শন করেন, তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তারিফ-উল-হাসান, সহকারী কমিশনার ভুমি মোঃ তারেক সুলতান, তালা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেল, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল হক, তালা জনসাস্থ প্রকৗশলী মোঃ মফিজুল ইসলাম, খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান রাজিব হোসেন রাজু, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ্এসএম লিয়াকত হোসেনসহ রাজনৌতিক ব্যক্তিবর্গ প্রমুখ।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শিক্ষক এস, এম লিয়াকত হোসেন জানান, কয়েক মিনিটের মধ্যে বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে বালিয়া দাখিল মাদ্রাসাসহ ১৩-১৪ ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। আকস্মিক ভাবে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ঘরবাড়ি থেকে লোকজন কোন জিনিস সরানোর সুযোগ পায়নি।
খেশরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজিব হোসেন রাজু জানান, বুধবার দুপুরে জোয়ারের পানিতে বালিয়া বেইলী ব্রীজের বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে নিন্মঞ্চল প্লাবিত হয়। অনেক বাড়ির ঘর প্লাবিত হয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষের সহায়তায় বাঁধটি মেরামতের জন্য কাজ করছি।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তারিফ-উল- হাসান জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ি বাধ পরিদর্শন করেছি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান, সংবাদ শুনে আমরা দ্রুত টিআরএম এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ীবাধ পরিদর্শন করেছি। সকলকে সাথে নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ীবাধ মেরামত করা হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তহিদুল ইসলাম জানান, আমি টিআরএম এলাকা পরিদর্শন করেছি, আমার লোকজন নিয়ে বালির বস্তা দিয়ে বেড়িবাধ মেরামতের চেষ্টা করছি।
দেবহাটায় শতবিঘা মৎস ঘের প্লাবিত হয়েছে জানিয়েছেন ওমর ফারুক মুকুল। মি. মুকুল জানান, প্রবল জোয়ারের পানিতে শাখরা-কোমরপুর এলাকায় ইছামতি নদীর পানি উপচে মৎসঘের প্লাবিত। রাত্রে পানি আরোও বৃদ্ধি পেলে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা, এই পানি কুলিয়া লাবন্যবর্তী খাল দিয়ে কুলিয়া, নূনেখোলা, আলিপুর, সুবর্নাবাদ, টিকেট, হিজলডাঙ্গা ও দত্তডাঙ্গা সহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার নতুন নতুন মৎস ঘের প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে এলাকাবাসী। জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত বিভাজনকারী ইছামতির নদীর শাখরা সুইচ গেইট সংলগ্ন বিজিবি ক্যাম্পের পাশের বেড়িবাঁধ এলাকায় ২৬‘শে মে বেলা আনুঃ ১২টার সময় ৩ জায়গায় নদীর বেড়িবাঁধ উপচে প্রবল বেগে পানি ঢুকে কয়েক শত বিঘা মৎস খামার প্লাবিত হয়েছে। তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদাউস আলফা স্থানীয় ইউপি সদস্য হিরা ও আলিম কে সাথে নিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পানি প্রবেশের স্থান গুলো বালির শত শত বস্তা দিয়ে মেরামতের চেষ্টা চালান।