
আহাদুর রহমান: সরকারি ক্ষণ শুরু না হলেও কিছু দিন ধরেই সাতক্ষীরায় হিমসাগর আম সংগ্রহ চলছে। সরকারি ভাবে সংগ্রহের দিন গতকাল শুক্রবার তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছেছে। জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল হিমসাগর আম সংগ্রহের উদ্বোধন করেন। কিন্তু আমের যোগান চাহিদা তুলনায় বেশি থাকায় দাম অনেকটাই সস্তা। ফলে ভোক্তারা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন আম চাষিরা।
এ বছর হিমসাগর আমে সংগ্রহের জন্য সরকারিভাবে ২১শে মে থেকে দিন ধার্য করা হয়। তবে এর আগেই চাষিরা আম অল্প করে ভাঙা শুরু করেন। বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় আসন্ন ঘূর্ণিঝড়েরর খবরে চাষিরা ধার্যকৃত দিনে থেকেই আম ভাঙা শুরু করেছেন। বিপুল পরিমান আমের যোগান থাকায় প্রতিমণ হিমসাগর আম ১২০০টাকা থেকে শুরু করে ১৬০০ টাকা পাইকারি দামে কেনা হয়। যা খুচরা বাজারে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আবার এক ধরনের সুযোগ সন্ধানীরা বাগান থেকে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মনেও হিমসাগর আম কিনেছে।
এদিকে ১জুন থেকে ল্যাংড়া সংগ্রহের কথা থাকলেও এখনই অপরিপক্ক ল্যাংড়া আমে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। বেশ কয়েকজন পুরাতন আমচাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায় ল্যাংড়া আম জৈষ্ঠের শেষ ভাগে পাকে। সে হিসেবে ১০-১৫ দিন আগেই অপরিপক্ক ল্যাংড়া আম ভাঙা হচ্ছে, যা প্রতি মন ১৩০০ টাকা থেকে ১৬০০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদরের আম চাষী জাহিদুর রহমান জানান, গতবছর তিন লাখ টাকায় আম গাছ কিনেছিলাম। কিন্তু আমপানে সকল আম নষ্ট হয়ে যায়। এবার আমের ফলন বেশি ছিল। কিন্তু অনাবৃষ্টিতে আমের সাইজ ছোট হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে পত্রপত্রিকায় ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে তড়িঘড়ি করে আম সংগ্রহ করছি। দাম কম হলেও মোটামুটি খরচের টাকা উঠে আসবে।
সাতক্ষীরা বড় বাজারের আমের পাইকার মতিয়ার রহমান জানান, সকাল থেকে প্রতিমন হিমসাগর ১৩০০টাকা থেকে ১৬০০ টাকা দরে কিনেছি। ল্যাংড়া কেনা হয়েছে ১৩০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা। আজ হিমসাগর আমের চাপ একটু বেশি ছিল। কারণ জানতে চাইলে মি. মতিয়ার জানান, কয়েকদিন পর ঘূর্ণিঝড় আসছে। গত বছর প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে চাষীরা। তাই এবার দিন পড়া মাত্রই আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। তবে কয়েকদিন পর হিমসাগর আমের দাম বাড়বে বলে জানান তিনি।
এদিকে সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস ও ট্রান্সপোর্ট গুলোতে আম পাঠানোর হিড়ীক পড়েছে। লম্বা লম্বা লাইনে দাড়িয়ে আত্মীয়-পরিজন ও পরিচিতদের আম পাঠানোর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অনেককে। গ্রাহক সেবা নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ভাড়াও করছে। সেই সাথে আম গন্তব্যস্থলে পৌছানোর জন্য কেজি প্রতি ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে কেউ কেউ।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় চলতি মৌসুমে চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে পাঁচ হাজার ২৯৯টি আম বাগানে ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৫০০ মেট্রিক টন বিদেশে রপ্তানি করার কথা আছে। গত ১ মে থেকে সাতক্ষীরা জেলায় উৎপাদিত গোবিন্দভোগ আম সরকারিভাবে সংগ্রহ শুরু হয়। ৮ মে ৫০০ কেজি গোবিন্দভোগ আম প্রথমবারের মতো সাতক্ষীরা থেকে জার্মানিতে রপ্তানি করা হয়।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাটির একটি আম বাগান থেকে আম সংগ্রহের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। এসব আম ইতালিতে রপ্তানি করা হবে। এনএইচবি করপোরেশন ও তাশফিক ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে চার হাজার কেজি হিমসাগর আম ইতালিতে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।