নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার শীর্ষ চোরাকারবারী জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদাউস আলফা ও তার ভাই আব্দুল আলিমের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) দুপুরে সাতক্ষীরার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক রেজওয়ানুজ্জামান এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সাতক্ষীরা সদর কোর্ট পরিদর্শক অমল কুমার জানান, সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ গত ১ জানুয়ারী আদালতে জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদাউস আলফা ও তার ভাই আব্দুল আলিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত আজ শুনানি শেষে আলফা ও আলিম উভয়ের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরআগে জেলার দুই শীর্ষ চোরাকারবারী আল ফেরদাউস আলফা ও তার ভাই আব্দুল আলিমকে গত ৩১ ডিসেম্বর গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। এই দুই চোরাকারবারীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গত ৩০ ডিসেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র হাবিলদার মো. মোহসীন বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্টস এর ২৫ বি (১) (বি)/২৫ডি ধারায় সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৫৮।
আল ফেরদাউস আলফা ও আব্দুল আলিম দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের আবুল কাশেম সরদারের ছেলে। সাতক্ষীরা চোরাচালান সিন্ডিকেটের শীর্ষ গডফাদার হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাভুক্ত আল ফেরদাউস আলফা। পাশাপাশি হুন্ডি ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে এসকল সংস্থার বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে আলফা’র নাম। তাছাড়া জেলাব্যাপী জামায়তের অন্যতম অর্থ যোগানদাতা ও পৃষ্টপোষক হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। ইতোপূর্বে মাদক মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে গেলেও মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আলফা আবারো জেলায় চোরাচালানের রামরাজত্ব কায়েম শুরু করে। অপকর্ম আড়ালের পাশাপাশি প্রশাসনের ধরাছোয়ার বাইরে থাকতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় কিছু নেতার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার পাশাপাশি কোটি টাকা ব্যায় করে আলফা বনে যান জেলা পরিষদের সদস্য। এছাড়া, আলফার সহোদর আব্দুল আলিম সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর বিজিবি সদস্য আব্দুল জব্বার হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী। জেলার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর, ভাতশালা, পদ্মশাখরা ও হাড়দ্দাহ সহ তৎসংলঘ্ন বিস্তৃর্ন সীমান্ত এলাকার যাবতীয় চোরাচালানের মুল নেতৃত্বে ছিলো আব্দুল আলিম। সে সীমান্ত এলাকার কথিত মুকুটহীন সম্রাট হিসেবেও পরিচিত। তার ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকতো সীমান্ত এলাকার সাধারন মানুষ। যারা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতো বা প্রশাসনকে চোরাচালানের তথ্য দিতো তাদের ওপর প্রকাশ্যে হামলা সহ নির্মম নির্যাতন চালানো হতো। কোমরপুরে প্রবেশের মুখেই রয়েছে আলফা ও আলিমের অফিসখ্যাত রিমান্ডরুম। আব্দুল আলিমও নিজের অপকর্ম ঢাকতে এলাকার নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে বনে গেছে ইউপি সদস্য। তাছাড়া কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে আব্দুল আলিম উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি পদ হাতিয়ে নিয়ে সীমান্তের গডফাদার হয়ে ওঠে বলেও বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আব্দুল আলিমের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য পদ বাতিল করা হলেও, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি পদে সে রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে। তথ্যনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, চোরাচালানের মাধ্যমে কুলি থেকে বর্তমানে কোটি কোটি টাকার ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন শীর্ষ চোরাকারবারী আলফা ও আলিম। এখন তাদের রয়েছে একাধিক আলীসান বাড়ি-গাড়ি ও দেহরক্ষী। এপর্যন্ত বহুবার একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলসহ জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক সংবাদপত্র গুলোতে প্রকাশিত হয়েছে চোরাকারবারী আল ফেরদাউস আলফা ও আব্দুল আলিমের সীমাহীন অপকর্মের সচিত্র প্রতিবেদন।