
মীর খায়রুল আলম: সাতক্ষীরা জেলার একটি উপকূলবর্তী অঞ্চল দেবহাটা উপজেলা। যেখানে লবণাক্ততা একটি প্রধান কৃষি সমস্যা। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে ঘেরে পানি সংকটের সময় সেচকৃত পানি ও ভূমিতে লবণের আধিক্য দেখা যায়। যার ফলে ধানসহ অন্যান্য ফসলের ফলন ব্যাহত হয়। এতে কৃষকেরা অনেক সময় চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই প্রেক্ষাপটে লবণসহিষ্ণু জাতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে এই এলাকায় নতুন ভাবে আশার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও উত্তরণ। উক্ত সংস্থা কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘সফল ফর আইডব্লিউআরএম’ প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৬জন কৃষকের জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়। ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) উদ্ভাবিত একটি উচ্চফলনশীল নতুন হাইব্রিড ধান। এটি এমন একটি জাত, যা লবণাক্ততা সহনশীল, রোগবালাই কম এবং আগাম পরিপক্ব হয়। ধান গাছ শক্ত, শীষ লম্বা ও মোটা হওয়ায় ফলন উল্লেখযোগ্য হারে বেশি হয়ে থাকে। টিকেট এলাকার চাষি আরতি সরদার জানান, তাঁর বাগদা ঘেরের মাঝে তিন জাতের ধান ব্রি হাইব্রিড-৮, এসএল-৮ ও এসিআই রোপণ করেন। একই জমিতে এবং একই সার প্রয়োগে সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়েছে ব্রি হাইব্রিড-৮, যা বিঘাপ্রতি ২৮.৩ মণ উৎপাদনন হয়েছে। আর এসএল-৮ বিঘাপ্রতি ২২.৮ মণ ও এসআই ২৬.৬ মণ উৎপাদন হয়েছে। তিনি অরো জানান, ধানটি আগাম পাকায় ঝুঁকি কম। তাছাড়া গাছ শক্ত, রোগবালাই কম এবং লবণ পানি সহ্য করতে পারে। হঠাৎ ঘেরে লবণ পানি উঠায় কিছুটা ক্ষতি হলেও ফলন ভালো হয়েছে। সদর ইউনিয়নের আজিজপুর গ্রামের চাষি আব্দুল মজিদ জানান, তিনি ৪৯ শতক জমিতে ব্রি হাইব্রিড-৮ ধান চাষ করে তিনি বিঘা প্রতি ৩০ মণ ধান পেয়েছেন। যেখানে আগের বছর একই জমিতে আফতাব-৭০ চাষ করে বিঘা প্রতি মাত্র ১৭.৫ মণ পেয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন নতুন জাতের এ ধানে কোনো চিটা ছিল না। রোগবালাই ছিল খুবই কম এবং ঘেরের লবণাক্ত পরিবেশেও ভালো ফলন হয়েছে। অন্য ধানের তুলনায় ব্রি-হাইব্রিড-৮ ধান ৫ থেকে ৭ দিন আগে পাকে। এমন একটি ধানের জাত উদ্ভবান করায় বাংলাদেশ ধানগবেষনা ইনষ্টিটিউট কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এদিকে সচেতন মহল বলছেন, ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ উচ্চ ফলন এবং পরিবেশ সহনশীলতা হওয়ায় এটি দক্ষিণাঞ্চলের ঘেরভিত্তিক লবণাক্ত জমিতে চাষযোগ্য একটি আদর্শ জাত হিসাবে পরিচিত লাভ করছে। দেবহাটা সদর এবং কুলিয়া ইউনিয়ন কৃষকেরা পরবর্তী মৌসুমে পুনরায় চাষ করতে আগ্রহী। যা জাতটির স্থায়িত্ব এবং গ্রহণযোগ্যতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। রোগবালাই কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম, ফলে কৃষকের লাভ বেশি। এই ধানের সফল চাষ দেবহাটা উপজেলায় কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মো.শওকত ওসমান জানান, কৃষকদের কল্যাণে বাংলাদেশ ধানগবেষনা ইনষ্টিটিউট বিভিন্ন উন্নত জাতের ধানের জাত উদ্ভাবনে কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু আমাদের এলাকায় লবণাক্ততা বেশি সুতরাং ব্রি-হাইব্রিড-৮ ধানের গুনগতমান ভাল হওয়ায় কৃষক এ জাতের ধানের আবাদ করে লাভবান হবে।