
ফেরদৌস আহমেদ: সাতক্ষীরার ইটাগাছা হাটেরমোড় এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে ফোনে ডেকে নিয়ে মারধর ও প্রকাশ্য দিবালোকে তার কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নেয়ার অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে । সোমবার (৮ ডিসেম্বর)সকালে ইটাগাছা হাট সংলগ্ন এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার শিকার ইমরান হোসাইন সুজন সাতক্ষীরা দক্ষিণ পলাশপোলের বাসিন্দা এবং স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী। আহত ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি এজাহার দাখিল করেছেন।
এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি তার মোবাইল ফোনে কল পান। ফোনকারী নিজেকে রমিজ নামে পরিচয় দিয়ে তাকে জরুরি ভিত্তিতে ইটাগাছা হাটের মোড়ে দেখা করার জন্য বলেন। সরল বিশ্বাসে এবং স্থানীয় পরিচিত হওয়ায় ইমরান হোসাইন সুজন সকাল ১০টার দিকে সেখানে পৌঁছাতেই পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ইটাগাছা এলাকার মো: কালু ছেলে মো: কাদের (২৬),কামালনগরে দক্ষিনপাড়া এলাকার আ: জলিলের ছেলে মো: রমিজ (২৮) ও কামালনগরের মৃত আব্দুল্লাহর ছেলে মো: রমজান (৩০) সহ আরও ৩-৪ জন অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তার উপর চড়াও হয়। প্রথমে তারা তাকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে। এরপর পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।
সূত্র জানায়,দুর্বৃত্তরা তাদের সাথে নিয়ে আসা জিআই পাইপ,চাইনিজ কুড়াল,চাপাতি ইত্যাদি দেশিয় অস্ত্র নিয়ে ইমরান হোসাইন সুজনের চারদিকে ঘিরে ধরে এবং দুর্বৃত্তদের ভিতরে একজন জিআই পাইপ দিয়ে তার ডান কানের পাশে সজোরে আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,তখন সকলে মিলে তাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে ।
শারীরিক নির্যাতন শেষে দুর্বৃত্তরা লুটতরাজ শুরু করে। দুর্বৃত্তরা তার ব্যবসায়িক কাজে নিয়ে যাওয়া নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তার গলার একটি সোনার চেইন খুলে নেয়। সবশেষে তার হাত থেকে একটি স্মার্ট-ফোন ছিনিয়ে নেয় ।
লুণ্ঠন শেষে দুর্বৃত্তরা আহত অবস্থায় ফেলে রেখে খুন করার হুমকি দিয়ে চলে যায় ।” রক্তাক্ত ও অর্ধ-সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ইমরান হোসাইনকে স্থানীয়রা কয়েকজন তাকে হাসপাতালে নিতে সহায়তা করেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানাজায়, ইমরান হোসাইনের মাথায় আঘাত গুরুতর। তার কান ও মাথায় মোট তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এখনো তার মাথা ঝাঁকুনি ও মাথাব্যথা চলছে। তাকে কয়েক দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
এজাহারে উল্লিখিত তিন আসামী ও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা-চেষ্টা, মারধর, ডাকাতি ও সম্পত্তি লুণ্ঠনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ পলাশপোল ও ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দারা এ ঘটনায় আতঙ্ক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, “এত বড় সাহস কীভাবে পেল? সকাল দশটায় হাটের মোড়ে এমন ঘটনা! আমরা এখন তো বাজারে যেতেই ভয় পাচ্ছি।” স্থানীয়রা দাবি করেন, আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ ঘটনা স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভঙ্গুর চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। প্রকাশ্য দিবালোতে এমন নৃশংসতা প্রশাসনের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আশা করা যায়, দায়ী ব্যক্তিরা দ্রুত বিচারের মুখোমুখি হবে এবং এলাকাবাসী আবারও নিশ্চিন্তে চলাচল করতে পারবে ।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে জানান, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

