
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সারা দেশে সাতক্ষীরার আমের যেমন সুনাম রয়েছে তেমনি বিদেশেও রয়েছে কদর। প্রতি বছরই ইউরোপ, ডেনমার্ক, ইতালি, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশে সাতক্ষীরার আম রপ্তানি হয়। তবে বিদেশসহ সারাদেশেই সাতক্ষীরার আমের কদর ও সুনাম নষ্ট করে দিয়েছে দূর্ণীতিবাজ অসাধু ব্যবসায়ীরা। এসব কথা জানান সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ পরিচালক নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর আম বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে না। দেশীয় অভ্যন্তরীণ বাজারের চাষীদের আম বিক্রির জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশীয় বড় বড় প্রতিষ্ঠাণ যদি আম ক্রয় করতে চায় তবে সরকারিভাবে তাদের পরিবহন করা সহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। ডিপার্টমেন্টাল মার্কেলগুলোতে ব্যবসায়ীরা আম দিতে পারে ক্ষতির সম্মূখীন হবেন না আমচাষীরা।
খামারবাড়ির উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম আরও বলেন, বিদেশীরা ভালো আম নিতে চায়। তবে দূর্ণীতিবাজ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় আমের ক্যারেটের মধ্যে অপরিপক্ক আম দেয়। গত বছর শুধু মাত্র এই কারণে ২০০ মেট্রিক টন আম বিদেশী রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও পাঠানো গিয়েছিল মাত্র দুই মেট্রিক টন আম। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশে আম রপ্তানী বন্ধ। তবে ভবিষ্যতে বিদেশী আমের মার্কেটটি ধরে রাখতে পারলে চাষীরা বেশী লাভবান হবে।
এদিকে, সোমবার (৪ মে) বিকেলে কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের বেলতলা বাজারে অভিযান চালায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আর.এম সেলিম শাহনেওয়াজ। সেখানে কেমিক্যাল মিশিয়ে অপরিপক্ক ও কচি আম বাজারজাত করার প্রমাণ পান তিনি। পরে ভ্রাম্যমান আদালত চালিয়ে ২০০ ক্যারেট কচি-কাঁচা অপরিপক্ক আম জব্দ করে নষ্ট করা হয়। অভিযান চালানো ওই আমের আড়তটি কেরালকাতা ইউপি সদস্য ও আম ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের।
কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর.এম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, অপরিপক্ক ও কচি আম ক্যামিকেল মিশিয়ে বাজারজাতকালে বেলতলা বাজারে অভিযান চালানো হয়। ঘটনাস্থলে একজন আম ব্যবসায়ীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বাকি ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে কেমিক্যাল মিশ্রত আমগুলো নষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার সকল আম ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে আমের আড়ত মালিক ও বেলতলা বাজার আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে চার হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে হিমসাগর ১৫৫০ হেক্টর, ল্যাংড়া ৫৬৪ হেক্টর আ¤্রপালি ৮৯৯ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, লতাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির আমের চাষ হয়েছে। জেলায় আমচাষীর সংখ্যা ১৩ হাজার ১০০ জন ও ৫২৯৯টি বাগানে আমচাষ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরায় নিরাপদ আম বাজারজাত করণের লক্ষ্যে সোমবার (৪) মে মতবিনিময় সভা করেছেন জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল। মতবিনিময় সভায় সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নুরুল ইসলামসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও আম চাষীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায়, সাতক্ষীরা জেলায় আগামী ৩১ মে থেকে হিমসাগর, ৭ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আ¤্রপালি আম ভাঙা ও বাজারজাত করণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোন বাগানের আম আগে পরিপক্ক হলে সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল বলেন, সাতক্ষীরার আমের সুনাম রয়েছে। এই সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যবসায়ী ও ফল চাষীদের সহযোগিতা করতে হবে। নিরাপদ আম বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সকলকেই সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে কেউ যদি কেমিক্যাল মিশিয়ে অপরিপক্ক আম বাজারজাত করার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।