***ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ১৬ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ
***২৪ ঘন্টায় ৮ জন সহ মোট ১৮৩ জনের ডেঙ্গু সনাক্ত
রুবেল হোসেন: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে চলেছে । সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এনিয়ে জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৮৩ জনে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত সরকার দৈনিক সাতনদীকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নতুন করে আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, সখিপুরস্থ দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, কলারোয়ায় ১ জন এবং বেসরকারী হাসপাতালে ২ জন ভর্তি হয়েছেন।
সর্বমোট আক্রান্তের মধ্যে জেলায় এ পর্যন্ত ১৩৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৫ জন। এরমধ্যে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭ জন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ৪ জন, কালিগঞ্জ ৫ জন, দেবহাটা হাসপাতালে ১ জন, কলারোয়ায় ৩ জন, শ্যামনগরে ২ জন এবং তালা হাসপাতালে ১ জন ও বেসরকারী হাসপাতালে ২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জেলায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সিংহভাগই সাতক্ষীরা শহর এলাকার। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ডে মশার উপদ্রব অতিমাত্রায় বেড়েছে। মশার উপদ্রবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটছে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সাতক্ষীরা পৌর এলাকা এখন পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। বর্জ্য অপসারণে পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ করেন একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা পানি আটকে রয়েছে পৌর এলাকার অধিকাংশ ড্রেনে যা এডিস মশার বংশ বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবী ড্রেনেজ ব্যবস্থার কিছু ত্রটি রয়েছে যা শীঘৃই কাটিয়ে উঠতে তারা সক্ষম হবেন। গত ১৭ জুলাই জার্মান দাতা সংস্থা কর্তৃক সাতক্ষীরা পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষে ১৬ কোটি ৩৭ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এমনকি গত ৩০ জুলাই সাতক্ষীরা পৌর মেয়রের কক্ষে ৭ সদস্যের জার্মান প্রতিনিধি দলের মেয়রের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে ২০-২৫ কোটি টাকার আরো আরেকটি প্রকল্প অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেয় জার্মান কর্তৃপক্ষ। উক্ত প্রকল্পটি অনুমোদন হলে টেন্ডারের মাধ্যমে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কারের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে পৌর কর্তৃপক্ষ সাতনদীকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পৌর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত মশা নাশক প্রয়োগ না করায় এডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরের প্রধান প্রধান সড়কের পাশের ড্রেনে নামমাত্র মশক নিধন ঔষধ স্প্রে করা হলেও পৌর এলাকার ৯ টি ওয়ার্ডে সর্বত্র পৌর কর্মীরা মশক নিধন ঔষধ ছিটানোর জন্য প্রবেশ করেন না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের মৌসুম ধরা হয় মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরমধ্যে আক্রান্তের গ্রাফ সবচেয়ে ওপরের দিকে থাকে জুলাই ও অগাস্ট মাসে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে যে-সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল তার চেয়ে সাত গুণ বেশি আক্রান্ত হয়েছে জুলাইয়ে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগস্টে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, এবং এ মাস হতে পারে চলতি বছরের ‘পিক সিজন’। যত বৃষ্টিপাত হবে, গরম বেশি পড়বে, যত আর্দ্রতা বাড়বে যত বেশি অপরিকল্পিত নগরায়ন হবে, তত বেশি ডেঙ্গু বাহী এডিস মশার সংখ্যা বাড়তে থাকবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ সুফিয়ান রুস্তম সাতনদীকে জানান, “চলতি আগস্ট মাস বর্ষার মৌসুম হওয়ায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মত পরিস্থিতি এখে না তৈরি হয় নি। সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে এখন পর্যন্ত ৫০ জন রোগী চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। রোগীর চাপ বাড়লে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতাল এবং জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্ত এবং চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার ও মশার বংশ-বিস্তাররোধ করা প্রয়োজন। পরিত্যক্ত পাত্র, ফুলের টব বা ডাবের খোসায় জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এ কারণে অযথা কোনো পাত্রে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে বাড়ির আশপাশ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
তবে সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় মশক নিধনে পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতী সাতনদীকে জানান, “ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে সাতক্ষীরা পৌরসভা বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সপ্তাহে ২ দিন করে প্রতি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা ধংসকারী কিটনাশক ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য মাইকিং ও মসজিদে মসজিদে সতর্কতা জারী করা হচ্ছে।” ড্রেনেজ ব্যভস্থার ত্রুটি সম্পর্কে মেয়র চিশতী বলেন, “আমাদের ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় কিছু ত্রুটি রয়েছে। আশাকরি দ্রুততম সময়ে আমরা তা কাটিয়ে উঠতে পারবো। জার্মান দাতা সংস্থার অর্থায়নে শীর্ঘ্রই ড্রেনজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।”