
আকরামুল ইসলাম: শহরের যানজট নিরসনে সাতক্ষীরাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের দাবি ছিল বাইপাস সড়ক নির্মাণ। সাতক্ষীরাবাসীর সে স্বপ্নপূরণ করে ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সেই স্বপ্নের বাসপাস সড়ক এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ছোট খাটো দূর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া জীবনহানির দূর্ঘটনাও কম নয়।
এদিকে, এসব দূর্ঘটনার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ দায়ী করছেন জনসাধারণের অসাবধাণতা ও অসচেতনাকেই। অন্যদিকে, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণ ও মহাসড়কের ক্রসিংগুলো অপরিকল্পিত যার কারণেই এত দূর্ঘটনা ও প্রাণহানি। আর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, দূর্ঘটনারোধে গাড়ির উচ্চগতি বন্ধে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
১৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের অদূরে বাঁকাল এলাকার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ থেকে বিনেরপোঁতা বিসিক শিল্পনগরী পর্যন্ত ১২.৩০ কিলোমিটার বাইপাস মহাসড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দীর্ঘ এই সড়কটি নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। এরপরই শুরু হয় সড়কটির নির্মাণ কাজ। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুন।
সাতক্ষীরার বাইপাস সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে জানিয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, দেশের স্থল বন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর। বানিজ্যিক কারণে বন্দর ব্যবহার করে প্রতিদিন কয়েক হাজার মালবাহী ট্রাক সাতক্ষীরার সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। এছাড়াও জেলা সদর থেকে উপজেলা সদরগুলোতে চলাচলকারী শতাধিক যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। এসব যানবাহনের চাপের কারণে সাতক্ষীরা শহরের মধ্যে সৃষ্টি হতো তিব্র যানজট। এ যানজট দূরীকরণের জন্য সাতক্ষীরার সকল দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুধীজনদের দাবি ছিল বাইপাস সড়ক নির্মাণের। সাতক্ষীরাবাসীর সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তবে সড়ক বিভাগের কিছু অপরিকল্পনা রয়েছে।
সড়ক বিভাগের অপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পৌরসভার যে লিংক রোডগুলোর উপর দিয়ে বাইপাস মহাসড়কটি নির্মাণ হয়েছে সেই লিংক রোডগুলোর প্রবেশ মুখ অপরিচ্ছন্ন, বন্ধ। মহাসড়ক দিয়ে কোন যানবাহন আসছে কিনা লিংক রোড থেকে সেটি দেখা যায় না। যার কারণে লিংক রোড দিয়ে বাইপাস সড়কে প্রবেশের মূহূর্তেই ট্রাক চাপা পড়তে হয়। অধিকাংশ দূর্ঘটনাগুলো এভাবেই হয়েছে।
দূর্ঘটনা কমিয়ে আনার উপায় কি এমন প্রশ্নে তিনি জানান, লিংক রোডের সংযোগ মুখের স্থাপনাগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে যেন দেখা যায় মহাসড়ক দিয়ে কোন যানবাহন আসছে কিনা। এছাড়া জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে। মহাসড়কে উঠেই শতভাগ স্প্রিডে গাড়ি চালানো যাবে না। এছাড়া চালকদের গাড়ির গতিরোধে পুলিশের মোবাইল টিমকে জোরদার করতে হবে। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তবেই দূর্ঘটনা কমে আসবে।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাইপাস সড়কটি নির্মাণ হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। ক্রসিংগুলো করা হয়েছে পরিকল্পনাহীনভাবে। এখন সেগুলো মৃত্যুফাঁদ। মূলত এ কারণেই বাড়ছে দূর্ঘটনা। উদ্বোধনের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত এ সড়কে ১৩ জন মানুষ দূর্ঘটনায় মারা গেছে। যাদের অধিকাংশই উঠতি বয়সী তরুণ।
জনবলের অভাবে বাইপাস সড়কে ঠিকমত চেকপোষ্ট করা সম্ভব হয় না জানিয়ে জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর কামরুল ইসলাম বলেন, মোটরসাইকেল ও ট্রাকের গতিরোধ করে দূর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রতি শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেকপোষ্ট করা হয়। জনবলের অভাবে বাকিদিনগুলোতে করা সম্ভব হয় না। তবে মাঝে মধ্যে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বাইপাস সড়কে বাইকের শতভাগ স্প্রিডে বাইক চালিয়েছেন শহরের পলাশপোল এলাকার রবিউল ইসলাম শুভ। তিনি বলেন, রাস্তা মসৃণ ও ফাঁকা হওয়ায় বাইকের গতি এমনিতেই বেড়ে যায়। এছাড়া প্রায় ১৩ কিলোমিটার এ সড়কের মধ্যে কোন গতিরোধক নেই।
জনসাধারণের অসাবধাণতা ও অসচতেনতাকেই দায়ী করে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজামউদ্দীন বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো দূর্ঘটনার ঘটেছে সবগুলোই দ্রুতগতির কারণেই ঘটেছে। যেহেতু রাস্তা সুন্দর সেহেতু তরুণ যুবকরা ওই সড়কে তারুণ্যের উচ্ছাসে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালায়। এ গতির কারণেই প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। এটিকে কোনভাবেই কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। আমরা সড়কের পাশে পর্যাপ্ত সিগন্যাল দিয়েছি। সংযোগ সড়কের মুখে স্প্রিড বেকার দিয়েছি তবুও দূর্ঘটনা ঘটছে। এর মূল কারণ হচ্ছে অসাবধাণতা ও অসচেতনতা। দূর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৩ জন মানুষ এ সড়কে মরা গেছে।
তিনি বলেন, যেহেতু এটা মহাসড়ক সেহেতু এখানে সড়কের মধ্যে স্প্রিড ব্রেকার দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে দূর্ঘটনা কমানোর জন্য সড়ক ও জনপদ বিভাগের পক্ষ থেকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই সড়কে র্যামবেল স্ট্রিট দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে।