জাতীয় ডেস্ক: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতায় সরকারি প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। প্রতিষ্ঠানটির সরকারি হিসাব থেকে এক দিনে মাত্র আট ঘণ্টার ব্যবধানে ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক আদেশনামা তৈরি করে তিন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৩০ লাখ করে মোট ৯০ লাখ টাকা পে-অর্ডারের বিপরীতে এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আরপিজিসিএলের এক কর্মচারীকে আসামি করে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন কর্তারা। দায়মুক্তি পেতে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) দৌড়ঝাঁপ করেছেন আসামিরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
দুদকের তদন্তে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) সচিব ও আরপিজিসিএলের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক রুচিরা ইসলামের দায়িত্বে অবহেলা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার সঙ্গে তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। পরে পেট্রোবাংলার বর্তমান সচিবসহ আরপিজিসিএলের সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জনতা ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুদকের তদন্তে প্রমাণ হওয়ার পর চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবেন।’
পেট্রোবাংলার সচিব রুচিরা ইসলাম, আরপিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মো. বাবর আলী, উপ-সহব্যবস্থাপক (অডিট) মো. আনোয়ারুল সহিদ খান, ব্যবস্থাপক (বিল ও রেভিনিউ) মো. নাজমুল হক মুরাদ, হিসাব সহকারী (ক্যাশ) মো. আবু ইয়ামিন, সহকারী কর্মকর্তা (কস্ট ও ইন্স্যুরেন্স) মো. হেলালুর রহমান ও অ্যাটেনডেন্ট মো. আশরাফ হোসেন।
এছাড়া জনতা ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র অফিসার এ কে মঈনউদ্দীন আহমেদ, অফিসার তাহমিনা খাতুন ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মোছাম্মৎ সাকিনা আখতারকে চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হয়েছে।
সরকারি ফান্ড লুটপাটের সূত্রপাত ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর। স্বাক্ষর জাল করে পৃথক তিনটি ব্যাংক আদেশনামা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়। পরে তিন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৩০ লাখ করে মোট ৯০ লাখ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়। লারসেন কর্পোরেশন, এ এইচ ইন্টারন্যাশনাল ও ইনফোসিস টেকনোলজি এ তিন প্রতিষ্ঠানের নামে ৯০ লাখ টাকা স্থানান্তর করে তা আত্মসাৎ করা হয়। বিষয়টি প্রায় আড়াই মাস ধামাচাপা রেখেছিল আরপিজিসিএল। ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির অ্যাটেনডেন্ট মো. আশরাফ হোসেন বিদেশে পালিয়ে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে দায় এড়াতে ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি আশরাফ হোসেনকে আসামি করে খিলক্ষেত থানায় মামলা করা হয়। মামলায় জনতা ব্যাংক বা গ্যাস কোম্পানির অন্য কাউকে আসামি করা হয়নি। যা পরবর্তীতে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশে একই ধরনের অভিযোগের অনুসন্ধানে নামে দুদক। এ সংক্রান্ত একটি মামলা সিআইডির তদন্তাধীন এমন তথ্য জানার পর আদালত ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর পুরো তদন্তভার দুদককে দেন। পরে দুদক তদন্ত করে ব্যাংক হিসাবের স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন নথিপত্রে জালিয়াতির প্রাথমিক প্রমাণ পায়। তদন্তকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক। দুদকের তদন্তে দেখা যায়, আসামি মো. আশরাফ হোসেন অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে আরপিজিসিএলে কর্মরত ছিলেন। তার বাবা মো. গোলাপ মিয়া একই কোম্পানিতে মেকানিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সুবাদে আউটসোর্সিংয়ে ২০১৩ সালে কাজে নিযুক্ত হন আশরাফ। তিনি আরপিজিসিএলের অর্থ বিভাগের বিভিন্ন চিঠিপত্র, বিল তৈরিসহ কম্পিউটারের কাজ করতেন
২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর আরপিজিসিএলের প্যাডে ফান্ড ট্রান্সফার সংক্রান্ত তিনটি অনুরোধপত্র জনতা ব্যাংকের পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্পোরেট শাখায় নিয়ে যান তিনি। এরপর জনতা ব্যাংক থেকে কোম্পানির এসএনডি হিসাব থেকে ৩০ লাখ টাকা করে ৯০ লাখ টাকা ডেবিট করে ইনফোসিস টেকনোলজি, লারসেন কর্পোরেশন ও এ এইচ ইন্টারন্যাশনালের নামে তিনটি পে-অর্ডার/ডিডি প্রস্তুত করেন। ওই পত্রে মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) বাবর আলী ও তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) বেগম রুচিরা ইসলামের স্বাক্ষর ছিল। ফান্ড বিবরণীতে আরপিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মো. বাবর আলী ও ব্যবস্থাপক (বিল ও রেভিনিউ) মো. নাজমুল হক মুরাদের স্বাক্ষর মিলেছে তদন্তে।
সরকারি ফান্ড লুটপাটে কাঠগড়ায় পেট্রোবাংলার সচিব
পূর্ববর্তী পোস্ট