
ইব্রাহিম শিকদার বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি
খালিশপুর থানায় নারী নির্যাতন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে মিম
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলা করতে চাইলে পারবে বাগেরহাট পুলিশ সুপার
হাবিবুর রহমান: প্রতারণার মাধ্যমে ৩০ জুলাই অসহায় এক নারীকে ফুঁসলিয়ে তার সম্ভ্রম হানির ঘটনায় শিল্প পুলিশের কনস্টেবল ইব্রাহিম শিকদার (কং.নং- ২৭২) কে বরখাস্ত করা হয়েছে। সম্ভ্রম হানির শিকার মিম ইব্রাহিম শিকদারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলেও মংলা থানার ওসি প্রভাবিত হয়ে তাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষতিগ্রস্ত নারী ইব্রাহিম শিকদারের বিরুদ্ধে খালিষপুর থানায় শিকদারের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নির্যাতনের শিকার গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি থানার মোকছেদপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের কন্যা মিম সাতনদীকে জানান, ফেসবুকে পরিচয়ে হয় খুলনা শিল্প পুলিশের-০৬ এর কন্সটেবল (কং.নং- ২৭২) ইব্রাহিম শিকদারের সাথে। সম্প্রতি ইব্রাহিম শিকদার নিজেকে অবিবাহিত দাবী করে মিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় দু’জন দু’জনকে চেনা-জানার জন্য এক জায়গায় বসার সিদ্ধান্ত হয়।
৩০ জুলাই মোবাইর ফোনে মিমকে ডেকে নেয় ইব্রাহিম শিকদার। পূর্ব থেকেই ভাড়া করা একটা প্রাইভেটকার রেডি করে রাখে ইব্রাহিম শিকদার। খুলনার নতুন রাস্তার পরে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে পৌছলেই মিমকে ভাড়া করা প্রাইভেট কারে তোলে ইব্রাহিম শিকদার। পরে মংলা থানার উদ্দেশ্যে গাড়ীটি চলতে থাকে। পথে মিম এর পর্শ্বেবসে ইব্রাহিম শিকদার তার শরীরে স্পর্শ করতে থাকে। তাতে বাঁধা দেয় মিম। ড্রাইভারও বিষয়টা বুঝে প্রতিবাদ করেন। মংলা থানা সদরে পৌছে ইব্রাহিম শিকদার মিমকে আবাসিক হোটেলে তুলতে পিড়াপিড়ি করে। এতে বাধা প্রদান করে মিম স্থানীয়দের সাহায্য চায়। পরে সেখানে হাজির হয় যুবলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন, জলিল শিকদার ও মানবাধিকার কর্মী সুমি। তারা বিষয়টা শুনে-বুঝে মিমকে বিষয়টি মিমাংশার জন্য চাপ দেয়। মিমের কাছে থাকা ১০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোনও তারা কৌশলে নিয়ে নেয়। ঘটনাটি মংলা থানাকে অবহিত করে স্থানীয়রা। খবর শুনে মংলা থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তারাও এসে মিমাংশার প্রস্তাব দেয়। এ সময় ইব্রাহিম শিকদার মিমকে ৫ লক্ষ টাকা এবং স্থানীয় আ’লীগ নেতা ও থানা পুলিশকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। এতে নাছোড়বান্দা মিম রাজী না হয়ে ইব্রাহিম শিকদারের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা জানায়। পরে মংলা থানা পুলিশ ইব্রাহিম শিকদার ও মিমকে থানায় নিয়ে যায়।
থানায় নেওয়ার পর মংলা থানার ওসি উভয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খোদ ওসিই মিমকে মামলা না করার জন্য নানাভাবে বুঝায়। মিম রাজী না হলে পরের দিন তার বৃদ্ধ বাবা ও মাকে নিয়ে মামলা করলে নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি হবে জানিয়ে আপোষ-মিমাংশা পত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরে ইব্রাহিম শিকদারকে শিল্প পুলিশের হাতে এবং মিমিকে তার বাবা-মার হাতে তুলে দেয়া হয়। মামলা করতে চাইলেও খোদ মংলা থানার ওসির অসহযোগীতার জন্য মিম বিচার না পেয়ে খুলনা শহরে বাবা-মার সাথে চলে আসে।
এদিকে খুলনা শিল্পপুলিশ-০৬ এর পুলিশ সুপার সাতনদীকে জানান, ‘ডিউটিরত অবস্থায় কর্মস্থল ত্যাগ করে বাইরে গিয়ে অপকর্ম করার দায়ে কনস্টেবল ইব্রাহিম শিকদারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।’
যে ভাবে মিমকে পটায় ইব্রাহিম শিকদার:
ফেসবুকে পরিচয়ের পর ইব্রাহিম শিকদার নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দেয়। সে মিমকে বিয়ে করার প্রস্তাবও দেয়। এ সময় মিম বলে তার তিনটি কন্যা সন্তান আছে। এর পরও বলে তাতে তার সমস্যা নেই। মোবাইল কেনার জন্য মিম এর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকাও সে হাতিয়ে নেয়। পরে ঘটনার দিন ফোনে ডেকে নিয়ে কৌশলে তাকে আবাসিক হোটেলে তুলে রাত কাটাতে চেয়েছিল। কিন্তু মিম এর বাধার মুখেতা ভেস্তে যায়। মিমের অভিযোগ ইব্রাহিম শিকদারের এসব অপকর্মের সাথে তার পিতা আজিজুর শেখ ও মাতা মিনি বেগম জড়িত। তারা শেল্টার দেয়।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য মংলা থানার ওসিকে ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার সাতনদীকে জানান, ‘মিম মামলা করতে চাইলে করতে পারবে। মংলা থানার ওসি মামলা নিতে চায়নি এটা ঠিক নয়। বিষয়টি শিল্প পুলিশ দেখছে।’