বন্ধ করে দেওয়া রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা নবেম্বরের মধ্যে পরিশোধ হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। অর্থ মন্ত্রণালয় বন্ধ ২৬টি পাটকলের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮টি পাটকলের শ্রমিকদের পাওনা ১৭৯০ কোটি ৫২ লাখ টাকা ছাড় করেছে বলেও তিনি জানান। বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দস্তগীর গাজী বলেন, এই টাকা শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর ও সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এ প্রক্রিয়ায় আগামী মাসের(নবেম্বর) মধ্যে সকল মিলের শ্রমিকদের পাওনা সম্প‚র্ণর‚পে পরিশোধ করা সম্ভব হবে। ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এসব পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারীর চাকরি ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে অবসায়নের সিদ্ধান্ত সরকারের তরফ থেকে জানানো হয় তার আগেই।
এসব পাটকলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা বাবদ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালের পর থেকে অবসরে যাওয়া ১০ হাজার ১০৭ জন শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ছুটি নগদায়ন বাবদ পাওনা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে তিন অর্থবছরে পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়েছিল শুরুতে। শ্রমিকদের ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকের পাওনার ৫০ শতাংশ নগদে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করার নির্দেশনা ও প্রদান করেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার করিম জুট মিলসের ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম শুরু করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। শ্রম আইন, ২০০৬ এর বিধান অনুযায়ী ৬০ দিনের নোটিশের পরিবর্তে কাজ করা ছাড়াই পাটকল শ্রমিকদের জুলাই এবং অগাস্ট মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন-বিজেএমসি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা এককালীন পরিশোধের নিমিত্ত যাবতীয় পাওনাদির হিসাব চ‚ড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিজেএমসি। অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নিরীক্ষা করে ধাপে ধাপে বিভিন্ন মিলের শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে প্রয়োজনীয় অর্থছাড় করছে। পাটমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিল ও খুলনার ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হবে।
বন্ধঘোষিত পাটকলসম‚হের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি সার্বিকভাবে পাটখাতকে পুনরুজ্জীবিত ও পাটকলগুলোকে উপযুক্ত মডেলে আধুনিকায়ন ও পুনরায় চালু করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি কমিটি হয়েছে। গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, কমিটি দুটির সুপারিশের আলোকে বন্ধঘোষিত পাটকলগুলো নতুন আঙ্গিকে আবার চালু হলে আগে অভিজ্ঞ শ্রমিকরা আবার কাজ করার সুযোগ পাবেন বলে আশা করা যায়।
রাসুল (সাঃ) বলেন , শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই পাওনা পরিশোধ করতে হবে। রাষ্ট্রিয় নিতিমালায়ও শ্রমিকের পাওনা যথা সমায়ে পরিশোধের নির্দেশনা আছে।
রাষ্ট্রের সকল প্রাতিষ্ঠানিক কর্মচারি কর্মকর্তাগণ যখন নিয়মিত বেতন পান তখন পাটকল শ্রমিকদের কাজ বন্ধের পরও কেন বেতন বাকী থাকবে। আর কেন তাদের পাওনা বেতনের জন্য রাজপথের আন্দোলনে নামতে হবে?
আমাদের মন্ত্রী মহোদয় গতকাল আবারও ওয়াদা করেছেন, নভেম্বরের মধ্যে সকল শ্রমিকের বকেয়া পরিশোধ করবেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে উর্ধমুখি বাজারে যদি শ্রমিকগণ মন্ত্রীর কথা মতো বকেয়ার টাকা পেতে পারে তবে তাদের অনেক উপকার হবে। আমরা আশা করবো মন্ত্রী এবার সময় বিবেচনায় রেখে শ্রমিকের পূর্ণ বেতন পরিশোধ করবেন।