মো. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রাম শহরের পঞ্চমাংশ এলাকা বোয়ালখালী উপজেলা। সেই উপজেলার অন্যতম ইউনিয়ন চরণদ্বীপ। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত চরণদ্বীপ, সেই চরণদ্বীপ আবারও রক্তে হলিখেলায় মেতে উঠেছে। রক্তাত্ব হয়েছে চরণদ্বীপের জনপদ। এই চরণদ্বীপ স্বাধীনতার পর হতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রæপের হাতে নিয়ন্ত্রন হয়ে আসছে। চলতো সন্ত্রাসী প্রতিযোগীতা বিশেষ করে ৮০দশকে চরণদ্বীপের শ্বশুর জামাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছিল সন্ত্রাসের গাথা মালা। সেই সময়কার সন্ত্রাসীদের পক্ষ বিপক্ষে গ্রুপে অসংখ্য নিরহ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। ৯০ দশকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে আজগর বাহিনীর আজগর তার আগে ঢাকাত আনোয়ার তার দুই হাত কর্তণের মাধ্যমে সন্ত্রাসী জীবনের অবসান হলেও আজগর বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল চরণদ্বীপ তথা বোয়ালখালীবাসি। সেই আজগরকে ১৯৯৫ সালে প্রতিপক্ষের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছিল। আজগরের পরে মাথা চাড়া উঠেছিল ফরিদ বাহিনীর ফরিদ। সেই ফরিদ সন্ত্রাসী আধিপত্ত নিয়ে চরণদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়েছিল। সেই ফরিদও একই পথে প্রাণ দিতে হল। এইভাবেই বোয়ালখালীর চরণদ্বীপে পালাক্রমে সন্ত্রাসীদের উত্থান হয়ে আসছে। দীর্ঘ বছর সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীবিহীন চরণদ্বীপ থাকলেও ইতোমধ্যে নব্য সন্ত্রাসী হিসেবে আবির্ভাব ঘটে মাহি আলম প্রকাশ মাহা আলম। তার সাথে প্রতিদন্তাদিয় নামে বর্তমান চেয়ারম্যান সামশুল আলম। সামশু চেয়ারম্যান হওয়ার আগ হতে মাহা আলমের সাথে গ্রুপিং এ ছিল। মাহা আলম এর মধ্যে বড় ধরনের সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে তার আধিপত্ত¡ বিস্তার করে। তার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড়িয়ে যায় সাদ্দাম ও বাবুল। সাদ্দাম কর্তৃক সন্ত্রাসী হামলায় তুফান আলী ফকির মাজারে একজন নিরহ মানুষের প্রাণ যায়। মাহা আলম বনাম চেয়ারম্যান সমশুর পক্ষে বিপক্ষে সন্ত্রাসী তান্ডব দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। উভয় পক্ষের প্রভাবে কিছু সংখ্যা চুনাপুটি সন্ত্রাসীরা এলাকায় জায়গা জমিনের দন্দের পক্ষ বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকে। অন্যদিকে কর্ণফুলী নদীর বালুর ব্যবসা নিয়ে চেয়ারম্যান সমশুর সাথে মাহা আলমের সম্পর্ক আগের চেয়েও খারাপ হয়ে যায়। একে অপরের বিপক্ষে হিংসুক বাঘের ভূমিকায় অবতির্ণ। তাদের বাহিনীর অত্যাচারে চরণদ্বীপের নিরহ ব্যবসায়ী ও প্রবাসী পরিবার প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হয়ে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক চরণদ্বীপে ঘটে যায় সন্ত্রাসী তাÐব। দিন দুপুরে প্রকাশ্য অস্ত্ররের মোহড়া এবং অবশেষে গুলি করে হত্যা। তার বিস্তারীত বিবরণ-
বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের বড়ুয়াপাড়া সংলগ্ন বালুর মাঠ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শওকত হোসেন চইল্যা (৪৫) নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ওসি আবদুল করিম। ১৬ মে দিবাগত রাতে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। গত ১৫ই মে বোয়ালখালীতে প‚র্ব বিরোধের জেরে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মুক্তিযোদ্ধা আলী মদন’র ছেলে মোহাম্মদ নাছির (৪০) ও কমপক্ষে ৩ জন আহত হয়েছে। ঐদিন পুলিশ ঘটনাস্থল হতে অস্ত্রসহ ২ জনকে আটক করে। উপজেলার চরণদ্বীপে এ ঘটনা ঘটে। স্থানিয় স‚ত্রে জানাযায়-এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চরণদ্বীপ ইউনিয়নের প‚র্ব চরণদ্বীপ বটতল খলিল তালুকদারের বাড়ির হাছি মিয়া ও মুক্তিযোদ্ধা আলী মদনের পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল দীর্ঘদিন যাবৎ ধরে। এ নিয়ে ইতিপ‚র্বে আরো বেশ কয়েকবার হামলা মামলার ঘটনা ঘটে উভয় পরিবারের মধ্যে। গত শুক্রবার রাতে এলাকার এক ধন্যাঢ্য ব্যক্তি খলিল তালুকদার বাড়ী এলাকায় যাকাতের টাকা বিলি করছিলেন। এ নিয়ে হাছি মিয়ার ছেলে জসিম আর মদনের ছেলে লোকমানের সাথে বাদানুবাদ লাগে। পরে তা হাতাহাতিতে গড়ায়। খবর পেয়ে জসিমের ভাই শওকত বাড়ী থেকে বন্দুক নিয়ে এসে লোকমানকে মারধর করতে থাকে। পরবর্তীতে লোকমানকে বাঁচাতে বড় ভাই নাছির ও তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা আলী মদন এগিয়ে আসলে জসিম'রা গুলি ছুড়তে থাকে। এতে সাথে- সাথে আলী মদন ও তার ছেলে নাছির গুলিবিদ্ধ হন। রাতে আহতদের চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা আলী মদনের ছেলে গুলিবিদ্ধ নাছির উদ্দিন রাত পৌনে একটায় মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল হতে অস্ত্রসহ জসিম ও শওকত নামের দু'যুবক'কে আটক করে। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, একটি এলজি, ৫ রাউন্ড গুলি, ২টি কার্তুজ, ছুরি, চাপাতি, দা উদ্ধার করা হয়েছিল।
কিভাবে বন্দুকযুদ্ধ : বীর মুক্তিযোদ্ধার উপর হামলা ও তার ছেলেকে গুলি করে হত্যা বিষয়টি জানার পর বোয়ালখালী ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান চট্টগ্রাম পুলিশ সপার রশিদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্কেল জাহাঙ্গীর আলম ও বোয়ালখালী থানার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল করিম। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেন এবং ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে দ্রæত গ্রেপ্তার এবং আটকৃতদের আরো অস্ত্র থাকতে পারে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সন্ত্রাসী শওকত হোসেন প্রকাশ চইল্ল্যা আরো অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করেন। রবিবার দিবাগত রাতে অতিরক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গগীর আলমের নেতৃত্বে, বোয়ালখালী থানার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল করীম, এস আই সুমন কুমার দে, এস আই আরিফ, এস আই কুদ্দুছ সঙ্গীয়ফোর্সসহ সন্ত্রাসী সওকত হোসেন ওরপে চইল্ল্যাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়ার পথে উপজেলার চরণদ্বীপ বড়ুয়াপাড়া বালুরঘাট এলাকায় সন্ত্রাসী শওকত হোসেন প্রকাশ চইল্ল্যার বাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। এসময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়ে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পিছু হটলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সন্ত্রাসী শওকত হোসেন চইল্যাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে পুলিশ। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। লাশ ময়নাতদন্তে মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, ১০টি কার্তুজের খোসা একটি রামদা, একটি ছাকু উদ্ধার করা হয়। আশেপাশে এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ নাছির হত্যায় জড়িত নাছির উদ্দিন নামে আরো একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
এলাকার একাধিক সাধারণ মানুষের ভাস্য হল যে, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সন্ত্রাসীরা কোননা কোনভাবে অপরাধ কর্মকান্ড করে পার পেয়ে যাচ্ছে। যদি সন্ত্রাস তথা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করে তাহলে সন্ত্রাস কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা। চরণদ্বীপের ইতিহাসে সন্ত্রাসীরা কোননা কোন ভাবে দলীয় আশ্রয় প্রশ্রয়ে প্রতিপালিত হয়েছে। যার খেশারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।