নিজস্ব প্রতিবেদক: জোট-মহাজোট প্রশ্নে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। গতকাল ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভা থেকে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তৃণমূল নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের জোট বা মহাজোট হয়েছে। ওই বর্ধিত সভায় আগত তৃণমূল নেতারা বলেছেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন জাতীয় পার্টির সাথে জোট হয়নি অথচ আমাদের নেতারা বলছেন জোট হয়েছে। এটা ভাওতাবাজি ছাড়া কিছুই নয়। এদিকে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির সাথে জোট কিংবা মহাজোট হয়নি।’
২১শে ডিসেম্বর মহাজোট প্রার্থীকে জয়ী ও সমর্থন জানানোর লক্ষ্যে আয়োজিত সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। সভায় তৃণমূল নেতৃবৃন্দ উন্মুখ হয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত শোনার অপেক্ষায় ছিলেন যা বক্তব্য দানকারী একাধীক নেতার মুখ থেকেও শোনা যায়। বক্তব্যের এক পর্যায়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গোলাম মোর্শেদ তার বক্তব্যে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন করার বিষয়ে ব্যখ্যা চান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নৌকার প্রত্যাহারকৃত প্রার্থীর মুখ থেকে। তার বক্তব্যের পর আরও কয়েকজন নেতা একই বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম ও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও মনোনয়ন প্রত্যাহারকৃত প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবু উন্মুক্ত সভায় জাতীয় পার্টির লাঙ্গলে ভোট দিতে বলেন। এসময় আসাদুজ্জামান বাবু তার বক্তব্যে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘নেত্রী চিঠির মাধ্যমে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন নৌকাকে উঠিয়ে লাঙ্গলকে দেওয়া হলো। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বিদ্রোহী প্রাথী আখ্যা দিয়ে কর্মীদের বলেন, ‘বিদ্রোহীদের কাছে আপনাদের আশা করাটা ভুল হবে।’ তার বক্তব্যের পরে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে বক্তব্যে বলেন, ‘এখানে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। যেই চিঠিটি জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছেন। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে যে, আমরা আগে আপনাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবার জোটবদ্ধ ভাবে নির্বাচন করবে। সেই জোটবদ্ধ নির্বাচনের কারণে আমাদের কোথাও না কোথাও প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে হতে পারে এবং জোটবদ্ধ নির্বাচনের পরে যে সিদ্ধান্ত হবে জোটের শরীকদল আমাদের রাজনৈতিক প্রতীক নৌকা অথবা তাদের দলের প্রতীক তারা ব্যবহার করতে পারবে। এই চিঠি আগেই দিয়েছিলেন জননেত্রী নির্বাচন কমিশনে। সেই চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা ২৬ জায়গার ১ জায়গায় আগে থেকেই জাতীয় পার্টির জন্য সংরক্ষিত ছিলো সেলিম ওসমানের জন্য। সেই ২৫ জনকে বলা হয়েছে আমাদের এখানে জোট হওয়া কারণে জোটের বৃহত্তর স্বার্থে নৌকার প্রার্থীদেরকে প্রত্যাহার করতে বলা হলো।’ তিনি আরও বলেন ‘আমাদের নৌকা নাই কার জন্য নাই লাঙ্গলের জন্য নাই। এই বলে তিনি নৌকার ভোটারদের লাঙ্গলে ভোট দিতে বলেন।’
বর্তমান সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা ২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে কেন্দ্র করে দলী কোন্দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। জেলা-উপজেলার একাধীক শীর্ষ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে মানতে পারছেনা। ফলে গতকালের বর্ধিত সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে তারা বিষোদাগার করেন এবং জাতীয় পার্টির সাথে জোট কিংম্বা মহাজোট না হলেও তারা তৃণমূল নেতাদের আশরাফুজ্জামান আশুকে জোট-মহাজোটের প্রার্থী বলে চালিয়ে দিয়েছে। এটি নিয়ে বর্ধিত সভায় আগত তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তাদের মধ্যে অনেককে বলতে শোনা গেছে, নেতারা যাই বলুক আমাদের সিদ্ধান্ত আমরাই নেব।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির মহাজোট হয়েছে কি এমন প্রশ্নে সাতনদীকে জানান, ‘মহাজোট নয়, জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের জোট হয়েছে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর সাতনদীকে জানান, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পাটিংর জোট কিম্বা মহাজোট হয়নি। সাতক্ষীরা ২ আসনের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর প্রচার মাইকিংএ জোট-মহাজোটের প্রার্থী বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, সংশ্লিষ্টদের আমি ডেকে বলে দেব।’
উল্লেখ্য, জোট-মহাজোট প্রশ্নে ১৮ই ডিসেম্বর সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আওয়ামী লীগের জোট হয়নি, সমন্বয় হয়েছে। এটা নির্বাচনী কৌশল। বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। ফলে জোট করার প্রয়োজনীয়তা নেই।’ অন্যদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করার জন্য স্বাধীন।’