কিছু আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে জামায়াতের ছায়া দেখতে পাই। মন্দির-শ্বশানের মাটি বিক্রী করতেও দ্বিধা করেনা কেউ কেউ। সালিশ করে সংখ্যা লঘুদের জমি বে-দখলেও ভূমিকা রাখে মুখোশধারী নেতারা- মতবিনিময় সভায় সংখ্যালঘু নেতারা
নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু নেতাদের হুমকি দিলেন খোদ আওয়ামী লীগ নেতা। হুমকি-হুশিয়ারী উপেক্ষা করে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ গতকাল দুপুর দু’টায় পুরাতন সাতক্ষীরা মায়ের বাড়ীতে পূর্ব নির্ধারিত মতবিনিময় সভা করেছেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা আওয়ামী লীগ নেতার হুমকি ও হুশিয়ারীর ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুর দু’টায় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষের সভাপতিত্বে এক মত-বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাতক্ষীরা সদরের নৌকা প্রতীকের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ এর সাথে জেলা তৃণম‚ল থেকে জেলা পর্যায়ের জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও জেলা প‚জা উদযাপন পরিষদ নেতা-কর্মীরা অংশ গ্রহন করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, জেলা মন্দির সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিত্যানন্দ গাইন, জেলা ঘাতক-দালাল নির্ম‚ল কমিটির সভাপতি ও জেলা জাসদের সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি সুধাংশু শেখর সরকার, মায়েরবাড়ী মন্দিরের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ সুকুমার দাশ, জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট সোম নাথ, অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা প‚জা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোৎস্না আরা এবং বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ‘ঈগল’ প্রতীকের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এমপি।
স্বপনশীল তার বক্তব্যে বলেন, আজকের এই মতবিনিময় সভা কেন করছি, এটার প্রয়োজনই বা কি? এটা করার কোন দরকার নেই। এসব কথা বলে আমাকে ফোনে সরাসরি হুমকি ও হুশিয়ারী দিয়ে আজকের পূর্ব নির্ধারিত সভা বন্ধ করার জন্য একজন নেতা টেলিফোন করেছিলেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজান’ই স্বপনশীল সহ একাধীক নেতাকে হুমকি ও হুশিয়ারি দিয়েছিলেন বলে সাতনদীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এ নিয়ে স্বপনশীলের সাথে একান্ত আলাপে তিনি হুমকিদাতা হিসাবে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজানের নাম উল্লেখ করেন।
স্বপনশীল তার বক্তব্যে আরও বলেন, শাল্যের শ্বশানঘাটের মাটি সাড়ে ছয় লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছেন জনৈক নেতা। মহাদেব মাষ্টারকে মারধোরের ঘটনায় আন্দোলন করেছি আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। আমরা আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে জামায়াতের ছায়া দেখি। তিনি যোগ করে বলেন, আপনারা ভোটে দাড়াবেন না? আমাদের প্রয়োজন হবে না? ১৪ সালের আগে অনেক অঘটন ঘটেছে। তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? সেদিন সংখ্যালঘুরা আপনাদের পাশে পায়নি। আমরা বিগত ১০ বছর এমপি রবি ভাইয়ের সাথে থেকে নিরাপদ আছি। হাকে-ডাকে তাকে কাছে পাই। আমাদের ভোট আমরা দেব। যাকে খুশি তাকে দেব। আপনারা হুমকি দেয়ার কে?
তিনি যোগ করে বলেন, সাতক্ষীরা ২ আসনে নৌকার এমপি রবি ভাই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসনে নৌকার প্রার্থী নেই। দলীয়ভাবে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হতে নেতাদের উৎসাহিত করেছেন খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে আমরা আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রবি ভাইকে বেছে নিয়েছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তার সাথে আমরা জেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের সংখ্যালঘু নেতাদের নিয়ে সভায় বসেছি। তিনি উপস্থিতিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি আমরা ভোট দিব কোন প্রতীকে? সামনে উপবিষ্টরা সবাই বলেন ‘ঈগল’ প্রতীকে। তিনি বলেন, আমাদের সংখ্যালঘুদের ৫৮হাজার ভোট। আমরা তুলতেও পারি আবার ফেলতেও পারি। তিনি যোগ করে বলেন, আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। আমি শক্তভাবে উত্তর দিয়েছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা নৌকাতে ভোট দেই। ভোট কম-বেশি পড়লে আমাদের দোষারোপ করা হয়। সংখ্যালঘুদের জমি দখল, নারীর সম্ভ্রম হানি এসব এমপি রবি ভাইয়ের সময়ে হয়নি।
প‚জা উদযাপন পরিষদের সাতক্ষীরা সদরের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ শিবপদ গাইন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নৌকা দিয়ে তা আবার নিয়ে নিয়েছেন। এখন আমরা স্বাধীন। মন্দিরের জমি ও শ্বশানের জমি দখল করতে আসলে এমপি রবি ভাই তা রুখে দিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়, স্থানীয় এমপির ভাই, আত্মীয়রা মন্দিরের-শ্বশানের জমি দখল করে। এখানে এমপি রবির কোন ভাই, আত্মীয়রা কি কারও জমি দখল করেছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে আসলেই তিনি ভাল হননা। আমরা দেখেছি সংখ্যলঘুদের জমি-জমা শালিষ করে বে-দখল করে দেয়ার মত ঘটনা ঘটিয়েছেন মুখোশ ধারী নেতারা। আমরা মিস্টি কথায় ভুলতে চাইনা।
জেলা মন্দির সমিতির সেক্রেটারী নিত্যানন্দ গাইন বলেন, ১৪ সালের নির্বাচনে গুলি-তাজা বোমা উপক্ষো করে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে আমরাই রবি ভাইকে এমপি বানিয়েছিলাম। এবারও তার ব্যাতয় ঘটবেনা। সে সময় আওয়ামী লীগের একাংশ বিরোধীতা করেছিলো।
ঘাতক দালাল নির্ম‚ল কমিটির সভাপতি আশেক-ই-এলাহী তার বক্তব্যে বলেন, যারা এমপি রবি সাহেবের বিরুদ্ধাচরন করেন তারা ইতিহাস মানেনা। মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবির সাথে আমার এলাকার ১১ জন যুদ্ধ করেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সেক্রেটারী সুধাংশু শেখর সরকার বলেন, মতবিনিময় সভা জনসভায় রুপ নিয়েছে। তিনি উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনেন মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে থাকবেন না অমুক্তিযোদ্ধার পক্ষে থাকবেন। তিনি বাড়ী ফিরে বাবা-মার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন।
মায়ের বাড়ী মন্দিরের উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সুকুমার দাশ স্মৃতিচারণ করে তার বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, এমিপ রবির বাবাকে আমি ইসু ভাই বলে ডাকতাম। তিনি ভাল মানুষ ছিলেন। মানুষের জন্য কাজ করতেন। তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা সবাই এমপি রবিকে পুনরায় এমপি বানাতে চাই।
সভার মধ্যমনি সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাকে পর পর দু’বার সংসদ নির্বাচনে আমাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন। এবারও আপনাদের সমর্থন ও সহযোগীতা চাই।’ সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির জোট কিংবা মহাজোট হয়েছে। এটা সত্য কিনা জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে আপনারা জানুন। অন্যদেরকে জানার জন্য পরামর্শ দিবেন। দলের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের সমন্বয় হয়েছে। জোট কিংবা মহাজোট হয়নি। কিন্তু একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের জোট কিংবা মহাজোট হয়েছে।