
বিশেষ প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নে আসন্ন ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষ্যে সরকারী ভিজিএফ এর চাউল বিতরনে অনিয়ম, ওজনে কম দেয়া, করোনাকালীন সামজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা না করা, ইউনিয়ন পরিষদ বহির্ভূত ব্যক্তিদের কর্তৃত্ব করা সহ নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। ভূক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়টি এক ইউপি সদস্য স্বীকারও করেছে। তবে এর কোন সমাধান এখনো হয়নি। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, আসন্ন ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষ্যে সরকারীভাবে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে গরীব-দুস্থ্যদের ১০ কেজি করে চাইল বরাদ্ধ করেছে সরকার। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উক্ত চাউল ইতোমধ্যে বিতরন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দাদের মাঝে উক্ত চাউল বিতরনে ওজনে কম দেয়া, ইউনিয়ন পরিষদ বহির্ভূত ব্যক্তিদের কর্তৃত্ব করা সহ নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। চাউল কম পাওয়ায় অনেকেই ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছে। অনেককে চেয়ারম্যান-মেম্বরদের উদ্দেশ্য করে ফাঁকা আওয়াজে কটাক্ষ ও সমালোচনা করার কথাও জানা গেছে।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে শ্রীউলা ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডের গরীব মানুষের মাঝে চাউল বিতরন করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে গত ২৭ জুলাই তারিখে ইউনিয়নের ২ ও ত নং ওয়ার্ডে, গতকাল ২৮ জুলাই ৫ ও ৮ নং ওয়ার্ডে চাউল বিতরন করা হয়েছে এবং আজ ২৯ জুলাই ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ডের মানুষের মাঝে চাউল বিতরন করার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য যে ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত কার্যালয়ে চাউল বিতরন না করে নাকতাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উক্ত চাউল বিতরন করা হচ্ছে।
গতকাল (২৮/০৭/২০) চাউল বিতরনে ওজনে কম দেয়ার ব্যাপারে প্রাপক নাকতাড়া গ্রামের দুলাল মিস্ত্রী বলেন, ১০ কেজি করে দেয়ার কথা। কিন্তু এক বালতি করে দিচ্ছে তাতে ৫/৭ কেজি করে হতে পারে। অপর চাউল পাওয়া ব্যক্তি লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের ছামাদ সরদার বলেন, চাউল যা পেয়েছি তা ৮ কেজির বেশি হবে না। ৫নং ওয়ার্ডের নাকতাড়া গ্রামের পরিমল মন্ডল বলেন, আগে যা একটু ভাল দিতো, এখন বালতিতে চাউল ভরে বালতি ঘুর মেরে মেরে দিচ্ছে, তাতে সব পড়ে যাচ্ছে। ১০ কেজি হচ্ছে না। নাকতাড়া গ্রামের সুভাষ মন্ডল বলেন, ৮ কেজি চাউল পেয়েছি। একই এলাকার মনিকা রায় বলেন, ৫ কেজি চাউল পেয়েছি। নাকতাড়া গ্রামের সরুলতা মল্লিক বলেন, ১০ কেজি করে দেয়ার কথা ৭ কেজি পেয়েছি। একই এলাকার নয়ন হোসেন নামের অপর একজন বলে ৬ থেকে ৭ কেজি চাউল পেয়েছি, এর বেশি কেউ পায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চাউল পাওয়া ব্যক্তি তাদের চাউল মেপে দেখালে ওজনে কম হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, শ্রীউলা ইউনিয়নে চাউল বিতরনে সবসময়ই ওজনে কম দেয়া হয়। প্রতিবাদ করতে গেলে বিতরনকারীরা বিভিন্ন রকম হুমকি-ধামকি দেয়। তারা বলেন, সাধারনত: চেয়ারম্যান- মেম্বরদেরই চাউল বিতরনে কর্তৃত্ব করার কথা কিন্তু মেম্বর নয় এমন ব্যক্তিরাও এখানে মাতব্বরি করে থাকে। উদাহরন স্বরুপ তারা ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বর দিবাকর সেনের পরিবর্তে সেখানে সাবেক মেম্বর সুধীর মন্ডল ও হান্নানের নাম এবং ৩ নং ওয়ার্ডের আছা সানা ও ফারুকের নাম উল্লেখ করেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডের চাউল বিতরনের সময় এরকম আরও অনেক ব্যক্তি কর্তৃত্ব করে থাকে বলে তারা অভিযোগ করেন। তবে এগুলো স্থানীয় ভিলেজ পলিটিক্স আর চেয়ারম্যানের প্রশ্রয়ে হয়ে থাকে বলে তারা অভিযোগে উল্লেখ করেন।
তারা বলেন, বর্তমান করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে সরকার মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু চাউল বিতনের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জনগনও চাউল পাওয়ার আশায় গাদাগাদি করে চাউল নিতে বাধ্য হয়েছে। ফলে শ্রীউলা ইউনিয়নে করোনা মহামারী বিস্তার লাভ করতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছে।
বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে মেম্বর দিবাকর সেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চাউল বিতরনে আমি উপস্থিত ছিলাম না। কেন উপস্থিত ছিলেন না, এ ব্যাপারে কিছু জানেন কি না জানতে চাউলে তিনি বলেন, আমি ঝামেলায় আছি, এ ব্যাপারে আমি কোন কথা বলতে চাই না।
এ ব্যাপারে মেম্বর জি এম জালাল উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ মঙ্গলবার ৫ ও ৮ নং ওয়ার্ডের চাউল বিতরন করা হয়েছে। বিতরনকালে তিনি নিজে সহ ইউপি সদস্য ইয়াছিন আলী, ইউপি সদস্য তহমিনা জোয়ার্দ্দার, ইউপি সদস্য আব্দুর রব ও স্থানীয় সঞ্জয় মিশ্র উপিস্থিত ছিলেন এবং চেয়ারম্যান একবার সকালে উপস্থিত হয়ে সাতক্ষীরায় চলে যান বলে তিনি জানান। তবে এদিন সাবেক মেম্বর সুধীর মন্ডলও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান। ওজনে কম দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মেম্বর জিএম জালাল উদ্দীন বলেন, “১০ কেজি দেয়া হচ্ছে, তবে বালতির মাপে দিচ্ছিতো ঊনিশ/বিশ হতে পারে।” তিনি বলেন, “কারো হয়তো নয় কেজি, কারো সাড়ে নয় কেজি হতে পারে। তবে সাড়ে নয় কেজির কম কারো হওয়ার কথা না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। চেয়ারম্যান সাহেবের কঠোর নির্দেশ কারো যেন চাউল কম না হয়।”
এ ব্যাপারে শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিলের বক্তব্য জানার জন্য তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে না পেয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহি অফিসার মীর আলিফ রেজার সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনিও মোবাইল রিসিভ করেননি।