
= আম্ফানে ৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বরাদ্দ ৪৫ লক্ষ টাকা ।
= দূর্নীতির কারণে পাল্টে গেছে শিক্ষা অফিসের দৃশ্যপট।
= প্রধান ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা দূষছেন একে অপরকে।
= শিক্ষা কর্মকর্তার দূর্নীতি নদী নয় সাগরের সমান।
= প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে নগদ অর্থ ।
= দূর্নীতির তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন।
হাবিবুর রহমান,শ্যামনগর থেকে : ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে বরাদ্দকৃত ৪৫ লক্ষ টাকা থেকে শ্যামনগরের শিক্ষা কর্মকর্তারা ১৪ লক্ষ টাকা ঘুষ আদায় করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এ ঘুষ বানিজ্য করা হলেও স্থানীয় দায়িত্বশীলরা অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কয়েক কোটি টাকার ঘুষ বানিজ্যের খবরটি এখন উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
তথ্যানুন্ধানে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে শ্যামনগরে ১৯১ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ ৪২ টি স্কুলে বরাদ্দ পায় ৪৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। বিদ্যালয়ের বরাদ্দ কৃত টাকার চেক ছাড় পেতে শিক্ষকদের নগত মোটা অংকের টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান সহ চার সহকারী শিক্ষা অফিসারকে দিতে হয়েছে।
শিক্ষা অফিসারদের দূর্নীতির কারনে ভূক্তভোগী শিক্ষকরা এখন জনগনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বদলির ভয় দেখিয়ে শিক্ষা অফিসাররা শিক্ষকদেরকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। দূর্নীতির কারণে পাল্টে গেছে শিক্ষা অফিসের দৃশ্যপট। সবাই মুখে মুখে বলছে শিক্ষা অফিস এখন দূর্নীতির আখড়া।
৪২নং মরাগাং স্কুলের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন. ৩১নং শ্রীফলকাটি স্খুলের প্রধান শিক্ষক আকিকুর রেজা (ইউনিয়ন শিক্ষক প্রতিনিধি) সহ অন্যান্য শিক্ষক প্রতিনিধিরা এবং ১৪৪ নং বন্যতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, আম্ফানের বরাদ্দকৃত টাকা ছাড় পেতে শিক্ষা অফিসারের সামনে সহকারী শিক্ষা অফিসার সোহাগ আলমের হাতে নগত ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
১৮৭ নং আস্তাখালী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের ও ১১৪ নং বাইনতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপংকর কুমার ঘোষ সহ অনেক স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বলেন, ঘৃর্ণিঝড় আম্ফানের বরাদ্দের চেক নিতে সহকারী শিক্ষা অফিসারদের কাছে ২৬% হারে নগত ঘুষ ও ভ্যাট বাবদ ১২% হারে টাকা কেটে নিয়ে চেক প্রদান করেছেন। ঘুর্ণিঝড় আম্ফান খাতে ২৬% হারে নগত দূর্নীতি করেছে ১১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ও ভ্যাট খাতে ১২% হারে দূর্নীতি করেছে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ খাতে মোট দূর্নীতি করেছে ১৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
ঘূর্নীঝড় আম্ফান খাত থেকে ১৪ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহ-আলম, আজহারুল ইসলাম, সোহাগ হোসেন ও সোহাগ আলম, সাতনদীকে জানান, ঘুষ বানিজ্যের বিষয়টি সঠিক নয়। আর যদি কিছু হয়েই থাকে তা অবশ্যই শিক্ষা কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামানের নির্দেশে হয়েছে।
শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলনের কাছে জানতে চাহিলে তিনি বলেন, ঘুষ গ্রহনের কথা সঠিক নয়। তিনি আরো বলেন, সহকারী শিক্ষা অফিসাররা এবং শিক্ষক সমিতির কিছু নেতারা মিলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলেছেন বলে আমি শুনেছি।
শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও রোকেয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সাবেক ছাত্র নেতা জাফরুল আলম বাবু সাতনদীকে বলেন, শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান মিলনের দূর্নীতি নদী নয় সাগরের সমান। তার অথরিটি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে শেলটার দিয়ে থাকেন। তিনি এও বলেন, শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও এমপি জগলুল হায়দার এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন শক্ত অবস্থান নিলে দূর্নীতি বন্ধ হতে বাধ্য।
উপজেলা জুড়ে মুখোরচক খবর হচ্ছে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মিডিয়ার পিছনে প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের মন রক্ষা করতে এমনকি প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিকেও নগদ অর্থ দেয়া হয়েছে। তবে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নগদ অর্থ প্রত্যাখান করে তা স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনার সত্যতা স্বীকারও করেছেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা (প্রাঃ) শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহুল আমীন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শিক্ষা অফিসারদের দূর্নীতির ঘটনাটি খুবই আপত্তিকর। জেলা এডিপিও আবু হেনা মোস্তফা কামালকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে রিপোর্ট দিলে ব্যবস্থা নিবো।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিক্ষক কমিটির সভাপতি আতাউল হক দোলন বলেন, আইনের উর্দ্ধে কেউ নন, শিক্ষা অফিসারদের বিরুদ্ধে স্কুলের শিক্ষকরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে উপজেলা শিক্ষক সমিতির এক সভায় আলোচিত দূর্নীতির বিষয়ে উপজেলা ভ্যইস চেয়ারম্যানকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা মাঠে কাজ করছে। আমি নিজেও অনেক স্কুলে পরির্দশনে গিয়েছি। আমার চোখে বেশ কিছু অনিয়মও ধরা পড়েছে। সংশ্লিষ্টদের সংশোধনের জন্য পরামর্শ দিয়েছি।