প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ২৪, ২০২৫, ৩:৫৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ
শ্যামনগরে ৩৬২ হতদরিদ্র পরিবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে
মোঃ আমজাদ হোসেন মিঠু শ্যামনগরঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ৩৬২টি হতদরিদ্র পরিবার এখন স্বাবলম্বী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নিজেদের খাপ খাওয়ানোর কৌশল রপ্ত করেছে এই পরিবার গুলো। আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়িত জলবায়ু পরিবর্তনে খাপ খাওয়ানো এবং দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধিকরণ কার্যক্রমের ফলে এদের জীবন জীবিকার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
জানাযায়, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের জন্য বিকল্প জিবীকা এবং স্বল্প ব্যয়ের প্রযুক্তি যেমন কৃষক পর্যায়ে মাঠ পরীক্ষাগার, লবনাক্ত পরিবেশে ব্যাগ পদ্ধতিতে সবজি চাষ, স্বল্প জায়গায় সমন্বিত কৃষি খামারের মাধ্যমে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার, ফুডব্যাংক, সমবায় সমিতি এবং কমিউনিটির নেতৃত্বাধীন ফসল চাষাবাদ ইত্যাদি ব্যতিক্রমী কার্যক্রমের ফলে উপজেলার রমজাননগর ও গাবুরা ইউনিয়ের এই পরিবার গুলো নিজেদের জীবিকায়ন ও অভ্যাসের নানাবিধ পরিবর্তন হয়েছে।
সংস্থার স্থানীয় প্রকল্প কর্তমকর্তা তাহসিন আজিজ বলেন, শ্যামনগরে আমাদের কার্যক্রমকে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো প্রতিটি কৌশল প্রয়োগ করে কীভাবে একটি পরিবার নিজেদো প্রস্তত করতে পারে, সেজন্যে আমরা সমন্বিত পদ্ধতি প্রয়োগ করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। এটিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকরণের মাধ্যমে একটি জলবায়ু সহনশীল মডেল বিকাশে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে উদ্ভুদ্ধ করছি। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে সরেজমিন কিছু পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রকল্পটি সমবায় সমিতি, ব্যাগে সবজি চাষ, সমন্বিত কৃষি খামার ছাড়াও ৭০০ জন হতদরিদ্র পরিবারকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা অনুসারে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান পূর্বক আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতি উপকারভোগী সদস্যকে এককালীন ১২ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
এরকম একজন রমজাননগরের ভেটখালী গ্রামের ছফুরা বেগম (৫০) বলেন, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ আমাকে প্রথমে ১২ হাজার টাকা দেয়, এই টাকা দিয়ে আমি ৬টি হাঁস, ২টা ছাগল ক্রয় করি। এখন আমার হাঁস ২৬টা এখন ছাগল ৫টা। এছাড়াও আমাকে বিভিন্ন ধরণের সবজি বীজ দেয়া হয়, কত ভাবে সবজি চাষ করা যায় সেগুলো আমাদের শিখানো হয়েছে। আমি বাড়ির আঙ্গিনায় সবজিচাষ করে নিজে খাই এবং বিক্রি করি। যা আমার পরিবারের আয় বাড়ছে।
রমজাননগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আল মামুন জানান, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পটি সম্পূর্ন ব্যতিক্রম। দুর্যোগেরকারণেক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র মানুষগুলোএখন স্ববলম্বী। উপকার ভোগীনির্বাচন থেকে শুরু কওে প্রতিটি কাজে ইউনিয়ন পরিষদকে সম্পৃক্ত করেছে। এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকরেছে এই প্রকল্পটি।
নতুনগিরি ভেটখালী গ্রামের একজন আরতি রানী (৩২), অভাবের সংসারে ২ মেয়ে নিয়ে কোনো মতে সংসার চালাচ্ছিলেন। তিনি জানান, ইসলামিক রিলিফ থেকে প্রথমে এককালীন ১২ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়, যা দিয়ে মাছের ব্যবসা শুরু করি। আমার স্বামী এই মাছগুলো বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। তিনি আরো বলেন, মাছের ব্যবসা ছাড়াও ৪ টি ছাগল ক্রয় করি, এখন আমার ৭টি ছাগল রয়েছে। এই আয় দিয়ে খড় কুটোর ঘরটিকে টিনের ঘরে রুপান্তর করি। আগে তিন বেলার খাবার জোগার করা আমাদের জন্য ছিল দুসাধ্য, এখন আমরা স্বাবলম্বী। আমাদের পরিবারের এই উন্নয়নে ইসলামিক রিলফ বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞ।
জানা যায় ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ শ্যামনগর উপজেলার এই ইউনিয়নের দরিদ্র এই মানুষগুলো নিয়ে ১৬টি জীবিকায়ন দল গঠন করা হয়। সরেজমিন একটি ভেটখালীর কর্নফুলী জীবিকায়ন দলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করি। দলটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক জানান, ইসলামিক রিলিফের সহায়তায় আমাদের এই দলটি প্রতিমাসে একবার বৈঠকে বসে। নিজেরা সঞ্চয় করেন। ্আপদকালীন সময়ে এই সঞ্চয়ের টাকা কাজে লাগানোর জন্য, প্রত্যেকেই খাদ্য ব্যাংক গঠন করেছেন এবং প্রত্যেকেই চাল জমা করেন এবং প্রয়োজনে যাতে এই খাবার চাল ব্যবহার করতে পারেন।
Copyright © 2025 দৈনিক সাতনদী. All rights reserved.