
জি, এম আমিনুর রহমান, শ্যামনগর থেকে: শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে চলছে লকডাউন। তার মধ্যে দিয়েও টুকটাক কাজে যাচ্ছে একেবারেই গরীব অসহায় দীনমুজুররা। যদিও সকল ইউনিয়ন পর্যায়ের বাজারগুলোতে গ্রাম পুলিশ দিয়ে মনিটরিং করছে চেয়ারম্যানরা। তবে বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা। সরকারী ও বেসরকারী ভাবে বিভিন্ন অনুদান আসলেও পাচ্ছে না সকল স্তরের মানুষেরা । এক দুদিনের মধ্যে যে টুকু আর্থিক সহযোগীতা এসেছে ইউনিয়নগুলোতে তার বেশিরভাগ মানুষ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের হাতের লোক। এরপর যদি কিছু পায় তবে পাবে সাধারন মানুষ। তবে এলাকার ইট ভাটা শ্রমিক এলাকায় আসা শুরু করায় করোনা ভাইরাস সংক্রমনের ঝুকি বেশি হয়ে পড়ছে।
এই নিয়ে মোবাইল ফোনে ৩নং শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহুরুল হায়দার বাবু বলেন, শ্যামনগর সদর ইউনিয়নে সবাই লকডাউন মানছে। ১২৪ জনের হোম কোরেন্টাইন তৈরি রাখা আছে। যারা বাহিরে থেকে আসছে তাদেরকে হোম কোরেন্টাইন সুনিশ্চিত করছি। এবং মনিটরিং করছি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। ইউনিয়নের মোট ৫৪ জন সেচ্ছাসেবী কাজ করছে। তারা প্রতিনিয়ত বাড়ীতে গিয়ে হোম কোরেন্টাইন সুনিশ্চিত করছে। নিজের অর্থায়নে পরিষদ থেকে প্রতিদিন ২০০ জনকে ৫ কেজি চাউল, ১ কেজি আলু একটি করে ব্যাগে করে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
১নং ভূরুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, গ্রামের মানুষ অত্যন্ত সহজ সরল। মানুষকে প্রয়োজনের ছাড়া বাহিরে যেতে নিষেধ করেছি। খানপুর প্রাইমারী স্কুলে ৫৪ জন, ভূরুলিয়া হাইস্কুলে ৫০জন বাহিরে থেকে আসা শ্রমজীবি হোম কোরেন্টাইনে আছে। সরকারী থেকে যে আর্থিক সহযোগীতা আসছে তা খুব সীমিত। আমরা চেষ্টা করছি সবার বাড়ীতে পৌছে দেওয়ার।
২নং কাশিমাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আব্দুর রউফ বলেন, আপনারা এভাবে বিরক্ত করলে কতজনকে তথ্য দেবো । উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে সংগ্রহ করে নিন।
৪নং নূরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বখতিয়ার আহম্মেদ বলেন, হোম কোরেন্টাইন খোলা হয়েছে কিন্তু সেখানে কেউ যাচ্ছে না। তবে বাজার ১২ টা পর্যন্ত খোলা রাখা হলেও নূরনগর মাছের সেট বন্ধ হচ্ছে না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে।
৫নং কৈখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম বলেন, কেউ লকডাউন মানছে না তবে আমরা চেষ্ট করছি। শৈলখালী প্রাইমারী স্কুলে ৪ জন্য, ১৮ নং প্রাইমারী স্কুলে ৭ জন আছে। তবে প্রাক্তন চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের লোকজন খুব বিরক্ত করছে এবং লকডাউন মানছে না।
৬নং রমজাননগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আল-মামুন বলেন, ৬১ নং প্রাইমারী স্কুলে একটি হোম কোরেন্টাইন খোলা হয়েছে কিন্তু কেউ ওখানে যায়নি। লকডাউন চলছে ভালই সন্তষ জনক।
৭নং মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, লকডাউন মানছে না বাহিরে থেকে শ্রমজীবিরা। প্রশাসনকে অবহিত করা হলে তারা আসলে পালিয়ে যায় এবং পরে আবার বাহিরে চলে আসছে। তবে মৌ চাষীরা বাহিরে থেকে এসে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দিচ্ছে। করোনা ভাইরাস্ নিশ্চিত সংক্রমনে আসঙ্খা। তবে উপজেলা থেকে একটি তালিকা চেয়েছেন উপজেলা প্রশাসন । হোম কোরেন্টাইনে থাকা মানুষের মাঝে কিছু অর্থিক সহযোগীতা পাবে বলে ধারনা করছি।
৮নং ঈশ্বারীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম শুকুর আলীর ০১৭১৪১৩২০৬০ ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
৯নং বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল বলেন, আমাদের এই এলাকাটা অত্যান্ত প্রত্যান্ত এলাকা। ৮০% মানুষ বাহিরের শ্রমজীবি। এখানে কোন লকডাউন করার দরকার হয়নি। তবে এখন চাপ সৃষ্টি হচ্ছে কারন গভীর রাতে শ্রমজীবিরা নিজ নিজ বাড়ীতে চলে আসছে। এতে করে আমরা বুঝতে পাচ্ছি না। তবে দেকভাল করার জন্য মোট ১৫০ জন্য সেচ্ছাসেবক বৃন্দু কাজ করছে। ৩৪ নং প্রাইমারী স্কুলে ১টি প্রতিষ্ঠানিক কোরেন্টাইন খোলা হয়েছে। পরে আরও ১০টি কোরেন্টাইন খোলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। ব্যক্তিগত অর্থায়নে ১ হাজার মাস্ক ১ হাজার সাবান প্রদান করা হয়েছে। ৪ হাজার পরিবারকে ত্রান দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন। তবে যা আসছে সেই গুলো সঠিক ভাবে বিতরন করছি।
১০নং আটুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সালেহ্ বলেন, লকডাউন চলছে তবে একটু ঢিলেঢালা। আমি নিজেই সন্তোষ জনক না। ১১ টা হোম কোরেন্টাইন খোলা হয়েছে তাতে ১৭০ জন ব্যক্তি আছে। তবে সরকারী থেকে যা আসছে তা খুবই সীমিত।
১১নং পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আতাউর রহমান বলেন, কেউ মানছে কেউ মানছে না। মাঝে মাঝে একটু তাড়াতাড়িও করতে হচ্ছে। প্রশাসন টুকটাক সহযোগীতা করছে। ইউনিয়নে ৭ টি হোম কোরেন্টাইন খোলা হয়েছে তাতে ৫০ থেকে ৬০জন ব্যক্তি আছে।
১২নং গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলমের ০১৭১১-০৪৬৫৯১ ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে মানুষের ঘরে খাবার না থাকার ফলে বাহিরে যাচ্ছে রোজগারের আশায়। সরকারী আর্থিক সহযোগীতা পেলেই হয়তো লকডাউন মানবে। এর মধ্যে দিয়ে চরম ভোগান্তিতে মধ্যবিত্ত পরিবাররা। না পারছে চাইতে না পারছে কিছু করতে।