হাবিবুর রহমান, শ্যামনগর থেকে ফিরে : সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আন্তাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পিয়ারী পারভীনকে কুপ্রস্তাব ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগ উঠেছে শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিজ মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গতবছরের ২৮ নভেম্বর জেলা প্রশাসক, এবং ২০ অক্টোবর শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষিকা পিয়ারী পারভীন। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার স্বামীকে ভৎর্সনা এবং তাকে চাকরিচ্যুত করা সহ বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছেন বলে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষিকার দাবি।
অভিযোগ সুত্রে প্রকাশ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলার ৭৯ নং অন্তাখালি স্কুলের নারী শিক্ষক পিয়ারী পারভীনকে বিভিন্ন সময় কু প্রস্তাব দেন। শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুর আলী।
তবে ওই নারী শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কুপ্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। বারবার তাকে উত্যক্ত করায় তিনি প্রতিকার চেয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ৭৯ নং অন্তাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী নারী শিক্ষক গত মাচের্র শেষ সপ্তাহে কোভিড-১৯ এর বুস্টার ডোজ গ্রহণের জন্য নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করেন প্রধান শিক্ষক নুর আলীর কাছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে প্রধান শিক্ষক নুর আলী ওই শিক্ষককে নৈমিক্তিক ছুটি না দিয়ে হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখায়। এ সময় বিদ্যালয়টিতে পরিদর্শনে যান শিক্ষা অফিসার রফিজ মিয়া। পরে তিনি শিক্ষিকা পিয়ারী পারভীনকে বিদ্যালয়ে অনপস্থিতির কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ জারি করেন। নোটিশ প্রাপ্তির পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর আলীকে বিষয়টি জানালে প্রধান শিক্ষক পরামর্শ দেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে একা গিয়ে দেখা করে ঝামেলা মিটিয়ে আসেন।
প্রধান শিক্ষক নুর আলীর পরামর্শ অনুযায়ী ওই নারী শিক্ষক গত বছরের ২৯ মার্চ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিয়ার কক্ষে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলে ওই নারী শিক্ষককে তার পাশের চেয়ারে বসতে বলেন। শিক্ষা কর্মকর্তার সম্মান রক্ষার্থে পাশের চেয়ারে বসলে শিক্ষা অফিসার নারী শিক্ষিকা পিয়ারী পারভীনকে কু-প্রস্তাব দেন। তিনি লজ্জা পেয়ে চেয়ার থেকে উঠে যেতে চাইলে তাকে যৌন হয়রানী করেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া গত বছরের ৩১ জুলাই রাত ১২ টা ৫০ মিনিটে নারী শিক্ষিকার ব্যবহৃত ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলেন ও কু প্রস্তাব দেন শিক্ষা অফিসার রফিজ মিয়া।
সরেজমিন ঘুরে আরও জানা গেছে, সম্প্রতি প্রাক-প্রাথমিকের বই চুরি অপবাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে ওই নারী শিক্ষককে মানসিক ভাবে দূর্বল করতে বিদ্যালয় অঙ্গনে অস্বাভাবিক পরিবেশ তৈরী করছে প্রধান শিক্ষক নুর আলী। প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে ওই নারী শিক্ষককে হুমকি দেওয়ায় তিনি চাকরি আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। ঘটনাটি এলাকায় ও বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ায় ওই নারী শিক্ষক অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন। নারী শিক্ষক প্রতিকার চেয়ে মহা-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে গত ২৩/১১/২০২২ তারিখে সাতক্ষীরা ৪ আসনের সংসদ সদস্য এস,এম জগলুল হায়দার ২২/৭০৮ নং স্মারকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহা পরিচালক বরাবর শিক্ষা অফিসারের অপকর্ম উল্লেখ পূর্বক অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি দীনেশ চন্দ্র মন্ডল বলেন, বিষয়টি দুঃখ জনক, তবে তদন্ত পূর্বক প্রকৃত দোষি ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত হোক।
৭৯ নং অন্তাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর আলীর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে রং নাম্বর বলে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
শ্যামনগর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রফিজ মিয়া তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নারী শিক্ষকের অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। তবে ওই নারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমার কাছেও অভিযোগ আছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট