নিজস্ব সংবাদদাতা, শ্যামনগর: সাতনদী প্রত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বিএনপি নেতা শহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে গণচাঁদাবাজী, দখলবাজী ও অগ্নি সংযোগ শিরোনামের একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে উপজেলার বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতার চাঁদাবাজী, দখলবাজী ও অগ্নিসংযোগ ঘটনার নানা তথ্য। ৫ই আগস্টের পর দেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীগণ যখন নিবেদিত হয়ে কাজ করছেন, বিগত আওয়ামীলীগের মতোই উপজেলার বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কয়েকজন তখন চাঁদাবাজী, দখলবাজীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রকাশিত সংবাদে উঠে আসে রমজাননগর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মো. শহিদুজ্জামানসহ কাশিমাড়ী ও আটুলয়া ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতির চাঁদাবাজী ও দখলবাজীর চিত্র। তাদের নানা অপকর্মের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় উপজেলার রাজনীতি নিয়ে যখন টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয় ঠিক তখনই ভেটখালী বাজার মোড়ে শহিদের নেতৃত্বাধীন ৩০/৩৫ জনের সংঘবদ্ধ একটি দল জঙ্গি মিছিল করে আতংক সৃষ্টি করে এবং তারা অনির্ধারিত একটি পথসভা করে। উক্ত পথসভায় বক্তব্য প্রদান করেন ভেটখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ গাজী। তিনি দৈনিক সাতনদী পত্রিকার রির্পোটকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে জানিয়ে দেন, শহিদুজ্জামান অতিশয় ভাল লোক। তিনি ও তার নেতা কর্মিরা কোনরকম অপরাধ করতে পারে না এমন কথাবার্তা তার বক্তব্যে তুলে ধরা হয়। তিনি আওয়ামী দোসরদের দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়ছেন আবার তাদেরকেই ডান ও বাম পাশে রেখে রাজনীতির মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছেন। বিএনপির ত্যাগী নেতা কর্মিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, রমজাননগর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি শহিদুজ্জামানকে ‘ভাল লোক’ উল্লেখ করে এবং তার গ্রুপের অপরাধ অপকর্মের সাফাই গেয়ে মূলতঃ তিনি বিএনপির রাজনৈতিক মতাদর্শকে ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন। মূলতঃ তার মদদেই উপজেলার বিএনপি পন্থী নেতৃবৃন্দ গণচাঁদাবাজী, দখলবাজী ও অগ্নি সংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, যা উপজেলার সাধারণ মানুষের কাম্য নয়। ওই পথ সভায় উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে শ্যামনগর এলাকাকে অশান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে গলা টিপে ধরার জন্য তিনি নেতাকর্মীদের পত্রিকা পোড়ানোর কথাও বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন রমজাননগর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন গাজী, ইউনিয়ন সহ-সভাপতি আবু হানিফ গাজী প্রমুখ। পথ সভার বক্তব্য শেষ হতেই কতিপয় ব্যক্তি ২০/২৫ টি পত্রিকায় আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। বিগত সময়ে আওয়ামীলীগের দালাল সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত জনৈক আক্তার হোসেন এবং রমজাননগর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নাজমুল হোসেন (বর্তমান যুবদল নেতা) এবং সাংগঠনিক সম্পাদক লিটনও উপস্থিত ছিলেন। উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানের পর শহিদুজ্জামান ও তার দলবল শিহাব হোসেন নামে একজনকে বেধড়ক মারপিটও করে। এদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাষ্টার আব্দুল ওয়াহেদ ওইদিনই সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, শহিদুজ্জামান সহ তার নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। অথচ রমজাননগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শহিদুজ্জামান ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে ভেটখালী বাজারসহ আশপাশের এলাকায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তার নামে। ৫ই আগস্ট তার নেতৃত্বে ২০/২২ জন লোক হিন্দু সম্প্রদায়ের বরেন্দ্র নাথ, পিং- মৃত আনিল কুমার বৈদ্য, সাং- ভেটখালী এর ব্যাটারীর দোকানে লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়। ওই দিন একই গ্রুপ ভেটখালী বাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষ্ণপদ মন্ডলের (ভেটখালী) চায়ের দোকান ভাংচুর এবং লুটপাট করে। মিলন কুমার মন্ডলের এপাচি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়। ৭ তারিখ সকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের রমজাননগর গ্রামের মৃত ইন্দু ভূষনের পুত্র হরিপদ, ও অরুনকে কে জাহাঙ্গীর, পিং-সাত্তার গাজী দিং, সাং-রমজাননগর প্রকাশ্য দিবালোকে দা দিয়ে কুপায়ে গুরুত্বর জখম করে। ভেটখালী বাজারের সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে এবং মালামাল বাইরে বের করে এনে পুড়িয়ে দেয়। শহিদুজ্জামানের আপন দুই ভাগ্নে চিহ্নিত লোকজন নিয়ে ভেটখালী বাজারের ব্যবসায়ী শেখ আলমগীর এব দোকান ঘর ভাংচুর লুটপাট করে কিছু মালামাল পুড়িয়ে দেয়। একই গ্রুপ ভেটখালী গ্রামের মামুনের পুত্র সাংবাদিক আব্রাহাম লিংকন এর প্রাইভেট কার পুড়িয়ে দেয়। তারা কালিঞ্চি গ্রামের সাবেক মেম্বার গফ্ফার তরফদার এর বাড়ি ভাংচুর করে। ১০ তারিখ সকালে ভেটখালী বাজারের আওয়ামী লীগ অফিস দখল করে। ৯ তারিখ ভেটখালী গ্রামের মোক্তাদুলের বাড়িতে ভাংচুর চালায়, একই দিনে ভেটখালী ওয়াপদা অফিসের জায়গা দখল করে নেয় এবং ফরেষ্ট অফিসে হামলা চালায়। হাসিনা সরকারের আমলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের পক্ষে গুনগান লেখালেখি করা সাংবাদিক পরিচয়ধারী শহিদুজ্জামানের দোসর আক্তার হোসেন এখন বড় বিএনপি সেজে সাধারন মানুষকে প্রতিনিয়ত হয়রানী করে চলেছে। এই নেতা ইতিপূর্বে বি এন পি অফিসের নাম করে ভেটখালী বাজারে সরকারি বিভিন্ন জায়গা দখল করে দোকান তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন ৫ তারিখের পরে আওয়ামী লীগ অফিস দখল করে বি এন পি অফিস করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাসিনা সরকারের আমলে বিএনপি বড় কোন কর্মসুচি ঘোষনা করলে মামলার ভয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শহিদুজ্জামান পাসপোর্টে ভারতে চলে যেতেন আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেশে ফিরতেন যার কারনে হাসিনা সরকারের আমলে তার নামে কোনো মামলা পর্যন্ত হয়নি। তারা আরও বলেন আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে সমন্বয় করে চলতেন এই নেতা বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রমজাননগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ আল মামুনের পক্ষে প্রকাশ কাজ করেন। শুধু তাই নয়, তার আপন ভাই ছোট ভাই সেচ্ছাসেবক দলের নেতা নুরুজ্জামান (বাচা) পাগলের নেতৃত্বে তার দলীয় বেশ কিছু লোক জন দিয়ে একটা টিম তৈরি করেন তারা আওয়ামীলীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন করেছেন এবং একই ভাবে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আতাউল হক দোলনের পক্ষে কাজ করেন। অথচ হাসিনা সরকার পতনের সাথে সাথেই তার আসল রুপ বেরিয়ে পড়ে। হাসিনা সরকার পতনের সাথে সাথে এই নেতা আওয়ামীলীগ ও অংগ সংগঠনের লোকজন সাথে নিয়ে চলছেন। উল্লেখ্য তৎকালীন যুবলীগ নেতা পরিচিত নাজমুল যাকে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন দলীয় প্রোগ্রামে প্রথম সারিতে থাকতেন। তাকে মোটা টাকার বিনিময়ে এখন যুবদল নেতা বানিয়েছেন। বর্তমানে বিএনপির বিভিন্ন দলীয় প্রোগ্রামে তাকে শহিদুজ্জামানের খুব কাছাকাছি দেখা যায়। তৎকালীন আওয়ামীলীগের দালাল সাংবাদিক নামে পরিচিত আক্তার হোসেনও শহিদুজ্জামানের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে রাতারাতি ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বনে গেছেন। এতসব ঘটনা ঘটানো শহিদুজ্জামান এর বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাষ্টার আব্দুল ওয়াহেদ কী জবাব দেবেন?