নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার রমজানগর ইউনিয়নের ভেটখালী বাজারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে চলছে বাগদা চিংড়ির রেনু ও পোনা বিক্রির মহোৎসব। প্রতিদিন কোটি টাকার এই অবৈধ বাণিজ্য চলে প্রশাসনের নাকের ডগায়, অথচ কর্তৃপক্ষ নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বাজারজুড়ে ড্রাম, ট্যাংক ও বালতিতে সাজানো থাকে বাগদা চিংড়ির রেনু। এসব পোনা স্থানীয় ঘের মালিকদের কাছে বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যেই। পরিবেশবিদরা বলছেন, এই রেনু আহরণের সময় অসংখ্য অন্যান্য প্রজাতির মাছ ও চিংড়ির পোনা ধ্বংস হয়, যা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি।
অভিযোগ রয়েছে, বাজার থেকে অল্প দূরত্বেই রয়েছে রায়নগর নৌপুলিশ ফাঁড়ি, পশ্চিম জোন কোস্টগার্ড ক্যাম্প এবং কৈখালী বনবিভাগ অফিস — অথচ তাদের সামনেই চলছে এই অবৈধ বাণিজ্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে নুরুন্নবী নামে এক ব্যক্তি এই হাটের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছেন। তিনি প্রতি হাড়ি (বালতি) রেনু-পোনার জন্য ১০০ টাকা করে খাজনার নামে চাঁদা আদায় করছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি প্রায় ৪ লাখ টাকা দিয়ে হাটটি ডেকে এখন প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা তুলছেন। স্থানীয়দের দাবি, উনি এই টাকার একটি বড় অংশ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাকে দিয়ে “ম্যানেজ” করে রেখেছেন, যার কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছেন না।
একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“সবাই জানে এটা অবৈধ, কিন্তু যাদের ভাগ আছে তারা কথা বলবে কেন? আমরা চাইলেও বন্ধ করতে পারি না।”
পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাগদা রেনু আহরণ ও বিক্রি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। কারণ, এক কেজি বাগদা রেনু সংগ্রহের সময় প্রায় শতাধিক অন্যান্য প্রজাতির পোনা ধ্বংস হয়, যা উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ও খাদ্যচক্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।
শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, “বাগদা চিংড়ির রেনু-পোনা সংগ্রহ ও বিক্রি নিষিদ্ধ। অভিযোগের বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি, তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও সচেতন নাগরিকেরা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অবিলম্বে ভেটখালী বাজারে এই অবৈধ পোনা বাণিজ্য বন্ধ করে দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি।
কৈখালী বনকর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান , এ ধরনের কোন অনিয়ম তার এখানে ঘটছে না।