নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাঁপা শ্যামাকালি মন্দিরে পুজা উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নারীদের উত্যক্ত করার সময় স্বেচ্ছাসেবকদের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বহিরাগতদের হামলায় সাতজন জখম হয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ দর্শক ও শ্রোতাদের হামলায় আটুলিয়ার যুবলীগ নেতা জাকির ও তার ভাই কবীরের সমর্থক কয়েকজন বহিরাগত গণপিটুনির শিকার হন। এতে ক্ষুব্ধ বহিরাগতরা ঝাঁপা গ্রামের বাসিন্দা নওয়াবেকী বাজারের দুই ব্যবসাসিসহ তিনজনকে কুপিয়ে, হাতুড়ি পেটা করে জখম করেছে। ঘটনার ১৫ দিনেও কোন আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ঝাঁপা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ঝাঁপা শ্যামাকালি মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র ম-ল জানান, তাদের মন্দিরে কালিপুজা উপলক্ষে গত ২৮ অক্টোবর রাতে মন্দিরের সামনের মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। উপদেষ্টা হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য তপন কুমার ম-ল ও প্রধান অতিথি
ছিলেন আটুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন। আরো উপস্থিত ছিলেন জাকির হোসেনের ভাই কবীর হোসেন ও তার সহযোগী অহিদুল ইসলাম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিলেন সাতক্ষীরার অমিত শিল্পী গোষ্ঠী।
তিনি আরো জানান, রাত ১১ টার দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালিন জাকির ও কবীরের সমর্থক কয়েকজন বহিরাগত যুবক মঞ্চের যে পাশে মহিলাদের বসার জন্য বরাদ্দ করা আছে সেখানে ঢুকে পড়ে। তারা মহিলাদের উত্যক্ত করার চেষ্টা করলে স্বেচ্ছাসেবকরা বাধা দেয়। একপর্যায়ে ধ্বস্তা ধ্বস্তি শুরু হলে উত্যক্তকারিদের ঘাড় ধাক্কা
দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর বহিরাগতরা মাঠের একপাশে অবস্থানকারি স্বেচ্ছাসেবক হরষিত গাইন, দেবব্রত ম-ল, বাপ্পি গাইন, চাঁপাই মৃধা, সুজয় রপ্তানসহ নয়জনকে মারপিট করে। পরে দর্শক ও শ্রোতারা বহিরাগতদের গনপিটুনি দেয়। এতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে জাকির হোসেন ও ইউপি সদস্য তপন ম-ল এসে উভয়পক্ষকে শান্ত করেন। এক ঘণ্টা পর আবার অনুষ্ঠান শুরু হয়।ঝাঁপা গ্রামের রামকৃষ্ণ রপ্তান জানান, নওয়াবেকি বাজারে তার কম্পিউটর ও স্টুডিও দোকান রয়েছে। ২৯ অক্টোবর সকাল ৮টার দিকে তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা খোলার পর যুবলীগ কর্মী বড় কুপটের সুমন বিশ্বাস, সুরঞ্জন বিশ্বাস ও বুড়িগোয়ালিনি কলবাড়ির অবিষেক মিস্ত্রীসহ ১০/১২ জন তাকে দোকান থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। ঝাঁপা কালিমন্দিরের মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাদের লোকজনদের মারপিট করার অভিযোগ এরে বাজারের মধ্যে তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়। কেড়ে নেওয়া হয় তার কাছে থাকা টাকা ও সোনার চেইন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে-ক্স ও পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর থেকে তাদের গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আর নওয়াবেকি বাজারে উঠতে আতঙ্ক বোধ করছিল। গত ৮ নভেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তিনি আর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। ভারতে চিকিৎসার জন্য রবিবার ভিসা করতে দিয়েছেন তিনি। রামকৃষ্ণ রপ্তান আরো জানান,৩০ অক্টোবর বাজার করতে এলে তার প্রতিবেশী এন্তাজ আলী সরদারের ছেলে ইদ্রিসকে নওয়াবেকি বাজারে ফেলে মারপিট করে। তার(রামকৃষ্ণ) উপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা করার জন্য কেউ ভয়ে থানায় যেতে পারেনি। বাধ্য হয়ে তার স্ত্রী সুপ্রিয়া কয়াল বাদি হয়ে তিনজনের নামে ২ নভেম্বর মামলা করলে আদালত এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য নির্দেশ দেন। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ঝাঁপা গ্রামের সুনীল মৃধা জানান, পহেলা নভেম্বর নওয়াবেকি বাজারের জাহিদ হোসেন তার ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ি গোপাল ম-লকে দিয়ে মোবাইলে অভয় বানি শুনিয়ে ঝাঁপা কালিমন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও নওয়াবেকি বাজারের মৃধা ফার্মেসীর মালিক গৌতম চন্দ্র মৃধাকে বাজারে ডেকে আনেন। গৌতমকে প্রথমে গোপালের দোকানে ও পরে পার্শ্ববর্তী
দোকানে নিয়ে পিঠে হাতুড়িপেটা করা হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গৌতমকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুরের কেপিসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন বা তার ভাই কবীর হোসেনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ঝাঁপা গ্রামের
ইউপি সদস্য তপন কুমার ম-ল জানান, ঘটনার সময় জাকির হোসেন মঞ্চে ছিলেন না। কবীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তবে যারা বাইরে থেকে এসেছিলেন তারা জাকির বা কবীরের লোক কিনা
এটা তার জানা নেই। তবে জাকির হোসেন ও তিনি সমাধান করে দেন। এরপরও হামলার ঘটনা দুঃখজনক। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম জানান, পলাতক থাকায় রামকৃষ্ণ রপ্তানের স্ত্রীর
দায়েরকৃত মামলার আসামীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে কালিমন্দির প্রাঙ্গনে মারামারির ঘটনায় প্রতিপক্ষরা একটি
এজাহার দায়ের করেছে। সেটি এখনো রেকর্ড হয়নি। তবে স্থানীয় গ্রুপিং এর ঘটনায় মন্দিরের মাঠে মারামারি হয়েছে বলে জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে রবিবার সচেতন মহলের উদ্যোগে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন।