স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরা জেলার সর্বশেষ শ্যামনগর উপজেলায় গণ চাঁদাবাজি, দখলবাজি, অগ্নিসংযোগ করার বিরুদ্ধে ৭ ডিসেম্বর দৈনিক সাতনদী পত্রিকার প্রথম পাতায় লিড নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। এ সংবাদ প্রকাশের জের ধরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই সাথে গণ-চাঁদাবাজি, দখলবাজির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশে একটি শ্রেণির মানুষের গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেছে। যা রীতিমত সোরগোল পড়ে গেছে গ্রাম থেকে গ্রামে। এদিকে শনিবার ৭ ডিসেম্বরের পত্রিকায় গণ চাঁদাবাজি, দখলবাজির স্বচিত্র সংবাদ প্রকাশের পর শ্যামনগর উপজেলায় পত্রিকা পৌঁছানোর পূর্বে তা ছিনতায় করে নেওয়া হয়। এছাড়া পত্রিকায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে সর্বমহলে তীব্র নিন্দার ঝড় বইছে। সংবাদ পত্রে আগুন দেওয়ার বিষয়টি স্বাধীন সংবাদ প্রকাশের অন্তরায় বলছেন বিশিষ্টজনেরা।
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলন: সাতক্ষীরা শ্যামনগরে বিএনপি নেতা শহীদুজ্জামান এর নেতৃত্বে গণ চাঁদাবাজি, দখলবাজি, অগ্নিসংযোগ করার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ এ সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে তিনি লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে দাবি করেন, শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমুন্নত রাখার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ভিন্ন মতলম্বীরা বিএনপির প্রগতিশীল কার্যক্রমে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপিকে ধ্বংস করার পায়তারা ও চক্রান্ত করছে বলেও দাবি করেন তিনি। এছাড়া শ্যামনগর রমজাননগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শহীদুজ্জামান শহীদ, কাশিমাড়ী ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি আজিজুল হক, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার ঢালি, আটুলিয়া বিএনপি’র সভাপতি আবুল কালাম মোড়ল নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তারা কাজ করে যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশেক ই-এলাহি মুন্না, যুব বিষয়ক সম্পাদক, জহরুল হক আপ্পু, প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিবর, সদর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক খান আব্দুস সবুর, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল হক, হাফিজ আল হাসান কল্লোল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জুলফিকার সিদ্দিক, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন সহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদপত্রে আগুন এবং হুমকি: সাতনদী প্রত্রিকায় প্রকাশিত শ্যামনগর বিএনপি নেতা শহিদুজ্জানের নেতৃত্বে গন চাঁদাবাজী দখলবাজি ও অগ্নিসংযোগ শিরোনানে প্রকাশিত শিরোনাম সংবাদের প্রেক্ষিতে সাড়ে ১০ টার দিকে ভেটখালী বাজার মোড়ে শহিদের পেটুয়া বাহিনী নিয়ে একটি মিছিল করে আতংঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে পথসভা করে সেখানে পথসভায় বক্তব্য দেন রমজাননগর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন গাজী, ইউনিয়ন সহ সভাপতি আবু হানিফ গাজী ও ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ গাজী। এদিকে, পথসভা বক্তব্য শেষে ২০ থেকে ২৫ টি সাতনদী পত্রিকার কপিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ততকালীন সময়ের আওয়ামী লীগের দালাল আক্তার হোসেন এবং রমজাননগর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নাজমুল হোসেন, বর্তমান যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন। পরবর্তীতে শহিদের নেতৃত্বে ১০/১৫ জন লোক নিয়ে শ্যামনগর উপজেলার প্রেসক্লাবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাস্টার আব্দুল অহেদের সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাস্টার আব্দুল অহেদ। বক্তব্য শেষ সাংবাদিক গন শহিদুজ্জামানের অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। কোন প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেন নি। সর্বশেষ প্রশ্ন ছিলো ভেটখালী পানি উন্নয়নের ৫ বিঘা জায়গা কিভাবে দখল নিয়েছেন উত্তর দিতে পারেন নি। তার পাশে বসা ব্যাক্তিরা তাকে শিখিয়ে দিতে থাকে এবং বলতে বলেন জমিটি ডিসিআর নিয়েছি। সে মোতাবেক এসও স্যারের কাছে থেকে ডিসিআর নিয়েছি। এছাড়া দৈনিক সাতনদী পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ঘটনায় জড়িত সাংবাদিককে খুঁজে বের করে শায়েস্তার হুমকি দেন শ্যামনগর উপজেলার বিএনপির সভাপতি অহেদ মাস্টার। অপরদিকে, সংবাদ প্রকাশের আক্রোশে অনুমান ভিত্তি করে শিহাব নামের এক যুবককে বিকাল আনুমানিক ৫ টার দিকে বেধড়ক মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
তবে ৫ আগস্টের পর গণ চাঁদাবাজি, দখলবাজি, অগ্নিসংযোগ করার বিরুদ্ধে সত্য ও সাহসী সংবাদ প্রকাশে দৈনিক সাতনদীকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। জেলা পর্যায়ে এক বেসরকারি সংস্থার সভায় বিষয়টি তুলে ধরে প্রশাংসা করা হয়। একই সাথে এ ধরণের অপরাধের বিরুদ্ধে সাতনদী পত্রিকার সাহসী ভূমিকা ধরে রাখার আহবান জানানো হয়।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বিএনপি নেতার মাছ ধরার নিয়ে চাঁদাবাজী: এদিকে, বর্তমান সময়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে নেটজাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরা যাবে নাহ। কিন্তু কিছু ব্যাপারিদের দাদনের নৌকা ফরেস্ট ও নৌপুলিশের সাথে যোগসাজশে পরিচালনা করছে বিএনপি নেতা শহিদুজ্জামানের আপন খালাতো ভাই জয়াখালীর হযরত আলী। জেলেদের প্রতিদিন নৌকা প্রতি ১৫শ টাকা দিতে হয়। হযরতকে দিয়ে তোলা টাকা যায় শহিদুজ্জামানের ছোট ভাই সেচ্ছাসেবক দলের নেতা নুরুজ্জামানের কাছে। সেই টাকার একটা অংশ যায় ফরেস্ট ও নৌপুলিশের অস্বাধু কর্মকর্তার কাছে। আর বাকি টাকা শহিদুজ্জামানের ছোট ভাই ও খালাতো ভাই ভাগাভাগি করে নেন। সকল জেলেরা প্রতিদিন অবৈধ ভাবে গহীন সুন্দরবে গিয়ে নেটজাল দিয়ে ছোট চাকা চিংড়ি মাছ ধরে নিয়ে আসে। যা ৮ থেকে ৯ শ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এক একটা নৌকা ১০ থেকে ১৫ কেজি করে মাছ ধরে নিয়ে আসে। এভাবে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ টি নৌকা অবৈধ ভাবে সুন্দরবনে পাঠায়ে চাঁদাবাজি করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।