# এনজিও গরম কাপড় বিতরনে পিছিয়ে
# সরকারি ভাবে কিছু বিতরণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য
আশাশুনি সংবাদদাতা: গত কয়েক দিনের প্রচন্ড শীতে কাবু হয়ে গেছে আশাশুনি উপজেলার হাজার হাজার অসহায় খেটে খাওয়া গরীব মানুষ। বৃদ্ধ ও শিশুসহ অগণিত মানুষ শীতের প্রকোপে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেনা। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে তেমন উল্লেখযোগ্য ভাকে দেখা যাচ্ছেনা এনজিওগুলোকে। আশাশুনির আকাশে গত দুই দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। রয়েছে হালকা শীতল হাওয়া। কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল এর যেন শেষ হচ্ছেনা। কনকনে শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। শীত নিবারণে মানুষকে বিভিন্ন স্থানে আগুন পোহাতে দেখা গেছে। পাশাপাশি বেড়েছে সোয়েটার, জ্যাকেট, শাল-চাদর, মাফলার-কানটুপিসহ গরম জামা-কাপড়ের কদর। ফলে বাজারে গরম পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু গরম কাপড় কিনতে পারছেনা সমাজের একটি বড় অংশ- গরীব মানুষেরা। শীতে কাবু এসব অসহায় মানুষের পাশে একনো উল্লেখযোগ্য কোন সহায়তা পৌছেনি। উপজেলার ১১ ইউনিয়নে এ পর্যন্ত ৯৭৭ টি কম্বল সরকারি ভাবে সরবরাহ করা হয়েছে। এতে দেখা যায় ইউনিয়ন প্রতি ৮৮ পিচ করে কম্বল দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ড প্রতি ১০ পিচ কম্বল ভাগে পড়েনি। ফলে চাহিদা পুরনের ক্ষেত্রে এ হিসেব খুবই অপ্রতুল। উপজেলায় প্রায় অর্ধ শত এনজিও প্রকল্প নিয়ে চষে বেড়াচ্ছে। শীতে কাবু অসহায় মানুষের জন্য নেই শীতার্তদের জন্য তাদের বড় কোন তৎপরতা। একটি এনজিও তাদের সুফলভোগিদের জন্য এবং গদাইপুরে ম্যানগ্রোভ সংস্থাসহ আরও ১/২ টি ছোট সংগঠন নিজ এলাকার বা গ্রামের মানুষের পাশে সামান্য কিছু গরম কাপড় নিয়ে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ নিয়ে এনজিওগুলো উপজেলায় কাজ করলেও শীতার্তদের জন্য মানবিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে না আশায় হতাশ এলাকার সচেতন মানুষ। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও তীব্র শীত অনুভবের কয়েকটি কারণ ররয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাতাসের গতি এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়া। এছাড়া কুয়াশার প্রকোপ, সূর্যের স্বল্পস্থায়ী কিরণকাল কিংবা একেবারেই সূর্যের মুখ দেখতে না পাওয়ার ওপরও শীতের তীব্রতা নির্ভর করে। বাতাসের গতি বেশি থাকলেও শীতের অনুভূতি ও প্রকোপ বেশি মনে হয়। বর্তমানে প্রকৃতিতে এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সাধারণত শীতে সবচেয়ে বেশি কাবু হয়ে থাকে বয়স্ক মানুষ এবং শিশুরা। অনেকেই এই সময়ে শীতজনিত ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর প্রভৃতিতে ভুগে থাকে। শীতের উল্লিখিত পরিস্থিতির মধ্যেই আবার বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে মৌসুমি লঘুচাপ। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের এই লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়া উপমহাদেশীয় উচ্চচাপবলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এসব বাহ্যিক কারণও শীতের অনুভূতি বাড়িয়ে দিয়েছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও বেশি। অন্যদিকে শীতের পাশাপাশি বেড়েছে কুয়াশার প্রকোপ। এলাকায় দিনেও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, শৈত্যপ্রবাহ না হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে কনকনে শীত অনুভবের চারটি কারণ আছে। এগুলো হলো-মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, সূর্যের স্বল্পস্থায়ী কিরণকাল, কুয়াশার প্রকোপ এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার কম পার্থক্য। তিনি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, ঢাকায় বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উভয়ের পার্থক্য মাত্র সাড়ে ৫ ডিগ্রি। ১০ ডিগ্রির নিচে সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যত কমবে, শীতের অনুভূতি তত বেশি হবে। লঘুচাপ পরিস্থিতির কারণে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। মেঘে ঢাকা আকাশ সূর্যের কিরণ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে বাধা দেয়। এসব কারনে আশাশুনিতে শীতের প্রকোপ বেশ কঠিন। মাছের ঘের সেচ বা খাটের সময় পানিতে ও হাটু-কোমর কাদায় থেকে মাছ ধরতে শ্রমমিকরা হিমশিম খাচ্ছে। বোরো আবাদের কাজেও কঠিন কষ্টকর দিন কাটছে কৃষকদের। খেটে খাওয়া মানুষ সকালে কাজে যেতে পারছেনা। যারা কষ্ট মাথায় নিয়ে কাজে যাচ্ছে তারা পুরো সময় কাজ করতে পারছেনা। এদের সহ শীতার্তদের পাশে দাড়ানোর এটাই কার্যকর সময়। সরকারি ভাবে শীতের কাপড় বেশী করে বিতরনের পাশাপাশি এনজিওগুলোকে এগিয়ে আসার দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম জানান, আমরা ইকিমধ্যে ৯৭৭ পিচ কম্বল বিতরণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে পাঠিয়েছি। এছাড়া আজ রবিবার আরও ৬৫০ পিচ কম্বল এসে পৌছেছে। আশাশুনিতে এনজিওদের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এনজিওরা শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন এমন কোন তথ্য আমার কাছে নেই।
শীতে কাপছে আশাশুনির অসহায় শীতার্ত মানুষ
পূর্ববর্তী পোস্ট