আহাদুর রহমান (জনি): সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি গঠনকে ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান নেতারা। প্রায় ১০ মাস পূর্বে নানা অভিযোগে সংগঠনটির আহবায়ককে বহিষ্কারের ফলে নেতৃত্বশূণ্য হয় যুবলীগ। আমূল পরিবর্তনের প্রত্যাশায় যুবলীগের ও সাবেক ছাত্রলীগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হেভিওয়েট নেতা নেতৃত্বে আসার জন্য জোর তদবির শুরু করেছেন।
প‚র্বের কমিটিতে সংগঠনটির সাথে যারা ছিল তাদের অনেকের বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন স্থানে জমি দখল, ঘের দখল, বাড়ি দখল, খুনখারাবি, চোরাচালান প্রভৃতি অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। সেজন্য অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিল। এরইমধ্যে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার দায়ে জেলা যুবলীগের আহবায়ককে বহিষ্কারও করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ফলে গতিহীন হয়ে পড়ে জেলা যুবলীগ। তবে বাকি নেতারা যার যার মত যুবলীগের কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। কিন্তু সেটাও ব্যক্তিগত ভাবে। এর ফলে জেলার সংগঠন থাকলেও নিষ্ক্রিয় থাকতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। সম্প্রতি জেলা যুবলীগের কমিটি গঠনকে ঘিরে সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মাঝে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হতে তৃণমূল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করেছে যুবলীগের নেতৃবৃন্দ ও সাবেক ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরোশোরে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন তারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র সদস্য মীর মহিতুল আলম মহি, এ্যাডভোকেট তামিম আহমেদ সোহাগ, জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক জহুরুল ইসলাম নান্টু, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর হুসাইন সুজন, জেলা পরিষদ সদস্য সৈয়দ আমিনুর রহমান বাবু, মো. রেজাউল ইসলাম রেজা, জেলা তাঁতী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ফিরোজ হোসেন, যুবলীগের সমর্থক রাজু মোল্যা। এছাড়াও সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মিলন রায়, মো. জাহিদ হোসেন বাপ্পি। তবে সব কিছু নির্ভর করছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খানের ওপর।
যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী মীর মহিতুল আলম মহি সাতনদীকে জানান, ‘মানুষের দুঃখ দুর্দশায় পাশে থেকেছি। ছুটে গিয়েছি গ্রামে গ্রামে। অংশ নিয়েছি বুলবুল ও আম্পান পরবর্তী কার্যক্রমেও। দলের সদস্যদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থেকেছি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান আমি। আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। জেলাবাসীকে অংশগ্রহন ও জবাবদিহী মূলক এক নতুন যুবলীগ উপহার দিতে চাই। জমি দখল, ঘের দখল, বাড়ি দখল, চোরাচালানসহ প্রভৃতি অনৈতিক কাজের সাথে যুবলীগের জড়িত থাকার যে বদনাম জেলায় আছে সেটি মুছে দিতে চাই। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও মহান মুক্তিযদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সিনিয়র নেতাদের অনুপ্রেরণায় জেলার গরীব-দুখী মেহনতি মানুষের পাশে আছি। বিভিন্ন দুর্যোগে দুর্দিনে সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি। সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে আমার পক্ষ থেকে যতদ‚র সম্ভব সহযোগিতা করছি। যুবলীগকে একটি আদর্র্শীক সংগঠনে রূপদিতে চাই আমি। মীর মহিতুল আলম মহি বলেন, আমাকে সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের দায়িত্ব দিলে সততা ও নিষ্ঠার সাথে তা পালন করব। সে জন্য দলের সকল নেতা কর্মীদের পাশে থাকার অনুরোধ করছি।’
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড. তামিম আহমেদ সোহাগ সাতনদীকে জানান, ‘ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। সেই থেকে পথ চলা শুরু। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। ছিলাম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্যও। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেছি। হয়েছি নির্যাতনের শিকার। ২০১৩ সালে জামায়াত ও বিএনপির সন্ত্রাসী তান্ডব প্রতিহত করতে দলের সদস্যদের নিয়ে নেমেছি রাজপথে। পেয়েছি বহু জীবন নাশের হুমকিও। তারপরও কখনো আওয়ামী রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে পারেনি কেউ। দলের ডাকে বহু ত্যাগ স্বীকার করেছি। দলের সদস্যরাও আমাকে ভালবাসেন। আমার লক্ষ্য সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগকে আদর্শিক ও মানবিক সংগঠনে পরিবর্তিত করা। তিনি আরো বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সকল ধর্মের মানুষের স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার তথা জাতীয় চার মুলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দ‚রীকরণ, দারিদ্র দ‚রীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমুহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে যুবলীগকে ঢেলে সাজাতে চাই। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি’র আদর্শ ধারণ করে যুবলীগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক জহুরুল ইসলাম নান্টু জানিয়েছিলেন, বিগত কমিটির আহবায়ক জেলা যুবলীগকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিল। সেই স্তুপ থেকে আজ জেলা যুবলীগ মানবিক যুবলীগে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ৯মাসেও জেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণা হয়নি। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ক’জন নিজেদেরকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন তাদের মধ্যে আমিও একজন। এখনও যুবলীগের হাল ধরে আছি। কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক আমার উপর দায়িত্ব অর্পণ করলে তা সঠিকভাবে পালন করবো।
সাতনদীর সাথে আলাপ কালে সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেছি। তারপর একাধিকবার সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। তারপর বিশ বছর পূর্বে যুবলীগে পথ চলা শুরু করি। বিএনপি-জামায়াতের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংগঠনের সাথেই ছিলাম। সদর উপজেলা যুবলীগের দায়িত্ব গ্রহনের পর ১৪ ইউনিয়নে তৃণমূলের অংশগ্রহনের নির্বাচন করা হয় ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। ঢেলে সাজানোর ফলে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতেই চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যান যুবলীগ থেকেই নির্বাচিত হয়েছে। জেলা যুবলীগের যে অচলাবস্থা তা নিরসন কল্পে সদর উপজেলার অভিজ্ঞা কাজে লাগিয়ে জেলা যুবলীগকে সচল, আদর্শীক ও মানবিক একটি সংগঠনে রুপান্তর করতে চাই। যুবলীগের তৃণমূল নেতারাও আমাকে চিনেন ও ভালোবাসেন। জেলা যুবলীগের সভাপতি হয়ে যুবলীগের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাই। ’
এদিকে যুবলীগের সভাপতি প্রদপ্রার্থী সৈয়দ আমিনুর রহমান বাবু, তানভীর হুসাইন সুজনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।