নিজস্ব প্রতিবেদক:
বহুল আলোচিত উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিজ মিঞার নারী লাঞ্চিত ঘটনায় শিক্ষক পিয়ারী পারভীনের দায়ের করা এজাহারের ১৪৪ ঘন্টা পার রেকর্ড করেনি শ্যামনগর থানা পুলিশ। গত ১৪ই ফেব্রুয়ারী শিক্ষক পিয়ারী পারভীন স্বামী সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে শ্যামনগর থানা আফিসার ইনচার্জ এর কাছে এজাহার দাখিল করেন।
দাখিলকৃত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পিয়ারী পারভীন উপজেলার ৭৯ নং অন্তাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। কোভিড-১৯ এর বুস্টার ডোজ গ্রহণ করতে তিন দিনের নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করেন। প্রধান শিক্ষক ঐ ছুটির আবেদনটি শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে না মঞ্জুর করে পিয়ারীকে শিক্ষা অফিসে পাঠায়। পিয়ারী পারভীন শিক্ষা অফিসে গেলে, উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিজ মিঞা একাকী পেয়ে তাকে লাঞ্ছিত করে। বিষয়টির প্রতিকারের জন্য পিয়ারী পারভীন মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা বরাবর আবেদন করলে রফিজ মিঞা পিয়ারীর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ব্যবহার করে নানা ভাবে হয়রানী করতে থাকে। পিয়ারীর দুই মাসের বেতনও বন্ধ রাখে। মহা-পরিচালকের কাছে আবেদনের তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে পিয়ারী পারভীন জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা মহোদয়ের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করে। অদৃশ্য কারণে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে কোন তদন্ত না হওয়া লাঞ্ছিত হওয়া পিয়ারী পারভীন উপজেলা চেয়ারম্যান, শ্যামনগর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শ্যামনগর, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সাতক্ষীরা, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, শ্যামনগর শাখার সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শ্যামনগর শাখার সভাপতি বরাবর আবেদন করে। মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা বরাবর আবেদনের (মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য, সাতক্ষীরা-৪ মহোদেয় সুপারিশকৃত) তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয় গত মাসের ২০ তারিখে। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যানের তদন্ত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় গত মাসের ২৪ তারিখে। অন্য সকল দপ্তর থেকে অজ্ঞাত কারণে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার কতিপয় দালাল শিক্ষক এবং নারী কেলেঙ্কারী মামলার আসামী পিয়ারীর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর আলীকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে পিয়ারীকে দমন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। শিক্ষক পিয়ারী পারভীনকে আবেদন উঠিয়ে নিতে রফিজ মিঞা শিক্ষক সমিতির সভাপতি দীনেশ চন্দ্র মন্ডলকে সভাপতি করে সাত সদস্যের একটি টিম পাঠায়। শিক্ষক পিয়ারী ম্যানেজ না হলে সহকারী শিক্ষক বনি আমিন এবং প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশীদ এর মাধ্যমে পিয়ারীকে ম্যানেজ করতে পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কোন ভাবেই পিয়ারী ম্যানেজ না হওয়ায় বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিজ মিঞা। পিয়ারীর বিদ্যালয় থেকেও দেওয়া হচ্ছে চাপের উপর চাপ। অপরাধ ঢাকতে রফিজ মিঞা এখন পিয়ারীর বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণের সহযোগিতা নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ঐ বিদ্যালয়ের অহিদা আক্তার নামের এক সহকারী শিক্ষককে প্রতিপক্ষ দাড় করিয়েছেন রফিজ মিঞা। তদন্তের দিন ছুটি বিহীন শতাধিক শিক্ষককে হাজির করিয়ে শিক্ষা অফিসারের সাফাই লিখিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে। লাঞ্ছিত নারী শিক্ষক যেন তার প্রতিকার চেয়ে বড় অপরাধ করেছেন।
জানা গেছে, রফিজ মিঞা ইতোপূর্বে নারী কেলেঙ্কারীসহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে পঞ্চমবারের মতো এই উপজেলায় শাস্তি জনিত বদলী হয়েছেন। রফিজ মিঞা এই উপজেলায় যোগদান করে তার প্রথম মাসিক সমন্বয় সভায় সদম্ভে বলেছিলেন, “আমি যাকে ধরি তার বারোটা বাজাই” সদ্য বড়লেখা উপজেলা থেকে শাস্তিতে বদলী হয়েছেন নারী কেলেঙ্কারী ও অর্থ কেলেঙ্কারীর অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়ার পর। শান্ত স্বভাবের এই উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারে কতিপয় দালাল শিক্ষককে নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে বিভেদ তৈরী করতে সিদ্ধহস্ত রফিজ মিঞা শিক্ষা পরিবারকে ধ্বংসের দার প্রান্তে ঠেলে দিয়েছেন। শিক্ষক পিয়ারী পারভীন রফিজ মিঞার অত্যাচারের প্রতিকারের সর্বশেষ আশ্রয় স্থল হিসেবে শ্যামনগর থানায় এজাহার দাখিল করেন।
প্রশ্ন উঠেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিজ মিঞার শক্তি নিয়ে। রফিজ মিঞা শুধু পিয়ারীকে নয় পিয়ারীর মতো কমপক্ষে ছয়জন নারীকে লাঞ্ছিত করেছেন বলে জানা গেছে। সাবিহা নামের এক সহকারী শিক্ষকের যৌন হয়রানীর শিকার হওয়ার পর দেওয়া লিখিত অভিযোগ শিক্ষক নেতা আব্দুল্যাহ আল মামুন ও দীনেশ চন্দ্র মন্ডলের মাধ্যমে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছেন শিক্ষা অফিসার রফিজ মিঞা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নারী শিক্ষক তাদের সাথে দূঃর্ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি উপজেলার শিক্ষক পরিবারে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
এসব বিষয় নিয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাতনদীকে জানান, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। শিক্ষা অফিসার যে অপরাধ করেছেন এর জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে।’
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাতনদীকে জানান, ‘শিক্ষা অফিসারে বিরুদ্ধে ওঠা গুরুতর অভিযোগটি আগামী শিক্ষা কমিটির সভায় উত্থাপন করা হবে।’