শার্শা (যশোর) সংবাদদাতা:
যশোরের শার্শা উপজেলার বেলতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ কয়েকটি মাদক সিন্ডিকেট এখনও প্রকাশ্য মাদক বেচাকেনা করছে। আর এটা জানা সত্ত্বেও প্রশাসন না দেখার ভান করে বসে আছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা এই অবৈধ মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আরো জানান, বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এক পুলিশ কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একই স্থানে চাকরির সুবাদে মাদক ব্যাবসায়ীদের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
শার্শা ও কলারোয়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা জুড়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিল সহ নানা ধরনের মাদকের ব্যবসা। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের অব্যাহত এই অনৈতিক কারবারে স্থানীয় যুব সমাজ মাদকে আসক্ত হচ্ছে। এই কারবার ও সেবনের কারণে এলাকার আইনশৃংখলার চরম অবনতির পাশাপাশি শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল। তারা দ্রুত মাদকের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, থানা পুলিশ, ডিবি, র্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক বেচাকেনা চলছে ওই এলাকায়। ১০ থেকে ১২ জন মাদক ব্যবসায়ী শার্শা উপজেলা ও কলারোয়া উপজেলার সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে মাদক ব্যবসা করছে। প্রায় সময় তাদের নিজেদের মধ্যেই বাকবিতন্ডো ও হাতাহাতি মতো সংঘর্ষ হলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার ভয়ে পুলিশের কাছে মুখ খোলেনা। যার কারণে এসব মাদক কারবারীদের নাম রয়ে যায় অজানা। আর খরিদ্দাররা মোবাইল ফোনে যে কোনো ধরনের মাদকের অর্ডার করলেই ডেলিভারি ম্যানের মাধ্যমে ভ্যানে বা বাইসাইকেল যোগে দ্রুত পৌঁছে দেয়া হচ্ছে তাদের ঠিকানায়। বহন ঝুঁকি ছাড়াই গাজাঁ, ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ নানা রকমের মাদকদ্রব্য পাওয়ায় খুশি হচ্ছে মাদক সেবীরাও।
স্থানীয় একাধীক সুত্রে জানা গেছে, এলাকার সংঘবদ্ধ চিহ্নিত একটি মাদক সিন্ডিকেট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা জমজমাট মাদক ব্যবসা করে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। এলাকার উঠতি বয়সী যুবক এমনকি স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররাও মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। চক্রটির কেউ কেউ চুরি ছিনতাই সহ নানা সন্ত্রাসী কাজের সাথেও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ১০/১২ জনের ওই সিন্ডিকেটের অধিকাংশই এখন প্রকাশ্যে।
এলাকায় মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত আব্দুল গনি, ও তার স্ত্রী নুরজাহান, রাবেয়া খাতুন, ও তার ছেলে মোস্তফা, রিজিয়া (ওরফে) রিজু, সাইফুল ও তার স্ত্রী কাকুলি, ওজিয়ার সরদার, হাফিজুল ও তার ছেলে সুমন। এই হাফিজুল স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কাজ করে থাকেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। এই হাফিজুল এলাকায় মাদক বিক্রির মুল হোতা। এই হাফিজুল আব্দুল গনির শালক, ও নুরজাহানের ভাই। এদের সকলের নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। এরা জেল-হাজত থেকে জামিনে এসে পুনরায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বেলতলা বাজার সংলগ্ন এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের অবাধে মাদক বেচাকেনার কারণে ছাত্র ও যুব সমাজ চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ছাত্রদের কেউ কেউ মাদক সেবন’সহ এই ব্যবসায় জড়িয়ে তাদের পরিবারকেও অতিষ্ঠ করে তুলছে।
শার্শা থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম আকিকুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল নাম্বার ০১৩২০-১৪৩৩১০ একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (নাভারণ সার্কেল) নিশাত আল নাহিয়ান বলেন, মাদক বিক্রির সাথে যে বা যারা জড়িত তাদেরকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। খুব দ্রুত অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।