তালা অফিস থেকে নজরুল ইসলাম
তালায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজার প্রতিমাকে রং তুলির শেষ আচঁড়ের কাজ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। একই সঙ্গে মন্ডপে চলছে সাজসজ্জার কাজও। ইতিমধ্য পূজার সকল প্রস্তুতি শেষ করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যাক পূজা মন্ডপ থাকায় এলাকা জুড়ে উৎসবের সাজ সাজ রব বিরাজ করছে।
উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্ট সুত্রে জানা যায়, আগামী ২৮ শে সেপ্টেম্বর রবিবার ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে দূর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ২ রা অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গা উৎসব। তালা উপজেলার ১৯৬ টি মন্ডপে পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠেয় শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করবেন সনাতন ধর্মালম্বীরা। দূর্গা পূজাকে সামনে রেখে নজরদারি রাখতে উপজেলা প্রশাসনের ইউনিয়ন ভিত্তিক কন্ট্রোল রুম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরের কন্ট্রোল রুম এবং প্রতিটি মন্ডপে দুটি করে সিসি ক্যামেরা বসানোর পাশপাশি আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় তালা ও পাটকেলঘাটা থানা পুলিশের একাধিক চৌকস টিম তৎপর রয়েছেন।
পূজা উদযাপন ফ্রন্টের তথ্য সূত্রে, তালা উপজেলার দুটি থানাধীন এলাকায় ১৯৬ টি পূজা মন্ডপে দূর্গা পূজা উদযাপন হচ্ছে। এর মধ্য পাটকেলঘাটা থানা পাঁচটি ইউনিয়নে রয়েছে ৮২ টি পূজা মন্ডপ ও তালা থানার সাত টি ইউনিয়নের রয়েছে ১১৩টি পূজা মন্ডপ। ১নং ধানদিয়া ইউনিয়নে দূর্গাপুজা হচ্ছে ১৮ টি মন্ডপে, ২নং নগরঘাটা ইউনিয়নে ১০ টি, ৩নং সরুলিয়া ইউনিয়নে ২১টি, ৪নং কুমিরা ইউনিয়নে ১৪টি, ৫নং তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে ১০টি, ৬নং তালা সদর ইউনিয়নে ২০টি, ৭ নং ইসলামকাটি ইউনিয়নে ২১টি, ৮ নং মাগুরা ইউনিয়নে ১২টি,৯ নং খলিশখালী ইউনিয়নে ১৯টি, ১০ নং খেশরা ইউনিয়নে ১৪টি, ১১ নং জালালপুর ইউনিয়নে ১৪টি, ১২ নং খলিলনগর ইউনিয়নে ২২ টি সর্বমোট ১৯৬ টি পূজা মন্ডপে রং তুলির শেষ আচঁড়ের কাজ চলছে ।
সরজমিনে তালা উপজেলা বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। শেষ সময়ে প্রতিমা শিল্পীরা তাদের মনের মাধুরীর সাথে রং তুলির আঁচড়ে সুন্দর করে তুলছেন দূর্গা, গণেশ, কার্তিক ও মহিষাসুরের প্রতিমা। রাত দিন একত্রে চলছে কর্মযজ্ঞ। নির্দিষ্ট সময়ের আগে কাজ শেষ করার আশায় শিল্পী ও কারিগরদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই।
প্রতিমা শিল্পী বিশ^জিৎ কুমার মন্ডল জানান, বাবার হাত ধরে এই কাজ শিখেছেন তিনি। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে প্রায় ১৮-২০ বছর ধরে এ পেশায় আছেন। এ বছর তিনি ছয়টি মন্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন। প্রতিটিতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে পাবেন।
পুরোহিত তপন হালদার জানান, বিভিন্ন স্পটে মন্ডপে শারদীয় দূর্গা পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। অধিকাংশ মন্ডপের প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজ সমাপ্ত হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিমা মৃৎশিল্পের স্বল্পতার কারনে কিছু টা কাজ বাকী আছে।
উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি মৃণাল কান্তি রায় ও সাধারণ সম্পাদক নারায়ন চন্দ্র মজুমদার জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় উৎসব সম্পন্ন হবে। এর সাথে প্রতিটি পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা এবং সাতক্ষীরা জেলার ভিতরে তালা উপজেলায় পূজা মন্ডপের সংখ্যা সব থেকে বেশি থাকায় প্রশাসনের বিশেষ নজরদারি রয়েছে।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইনউদ্দীন জানান, তালা থানার ৭ টি ইউনিয়নে ১১৩ টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দূর্গাউৎসব পালিত হবে। প্রতিটা পূজা মন্ডপে আনসার, গ্রামপুলিশ পূজার শুরু থেকে বিসর্জন পর্যন্ত স্থায়ীভাবে পূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতি ইউনিয়ন ভিত্তিক একজন সাব ইন্সেপেক্টর এর নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনীর সার্বক্ষণিক টহল সহ একাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি থাকবে।
পাটকেলঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ শাহিনুর রহমান শেখ জানান, পাটকেলঘাটা থানার ৫ টি ইউনিয়নের ৮২ টি পূজা মন্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত কল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপা রানী সরকার জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শারদীয় দূর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পালনের লক্ষ্যে ইউপি চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে প্রতিটি ইউনিয়নে কমিটি গঠন ও উপজেলা ব্যাপি তদারকি করতে উপজেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক চালু করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চৌকস টিম মাঠপর্যায়ে তদারকি করছে। ইতিমধ্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পূজা মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন ২ রা অক্টোবর সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে।
ৃ