[caption id="attachment_47056" align="alignright" width="300"] মদের বোতল হাতে জয় ও তার সঙ্গী[/caption]
নিজস্ব প্রতিবেদক: ধারালো ছুরি, চাইনিজ কুড়াল, লোহার হাতুড়ি, জিআই পাইপ, লোহার রড এগুলোই প্রধান অস্ত্র। কারও সাথে গোলযোগ বা বাগ বিতন্ড হলেই অস্ত্রগুলো নিয়ে হামলে পড়ে তারা। এতদিন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কিশোর গ্যাংয়ের কথা শোনা গেলেও সাতক্ষীরাতেই সক্রিয় আছে নামহীন একটি গ্যাং। যাদের মূল হোতা বা নেতা হলো আল হেলাল জয়।
অল্প বয়সেই বিজ্ঞানী বা স্টার বনে যায় অনেক কিশোর। কিন্তু ১৪ বছরেই অপরাধীর খাতায় নাম তুলে কিশোর গ্যাংয়ের লিডার হয়ে গেছে আল হেলাল জয়। বিভিন্ন সময় ছোট খাটো অপকর্ম করতে করতে হাত পেকেছে তাদের। এখন বড় বড় টার্গেট বাছাই করে হামলে পড়ে জয়ের নেতৃত্বে বাকি চ্যালা চামুন্ডারা। জয়ের নেতৃত্বাধীন এ গ্রুপে সক্রিয় আছে আরিক, মৃদুল, সাব্বি
[caption id="attachment_47086" align="alignright" width="300"] সাজিদকে তাড়া করে জয়। এসময় কুড়ার ছুঁড়ে মারে[/caption]
র, রাহুল, নয়ন, সুমনসহ আরও অনেকে। সবাই মাদকসেবী। মুনজিতপুরের একটি বাড়িকে কেন্দ্র করে চলে তাদের এই গ্যাং। অবশ্যই সেটি জয়ের। তাদের মাদকের যোগান অব্যাহত রাখতে মুনজিতপুর, সুলতানপুর, রসুলপুর, কাটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার নিরীহ কিশোরদের টার্গেট করে চাঁদাবাজি করে। তাদের চাহিদামত অর্থের যোগান দিতে না পারলে নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ।
এমনই একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে গত বছরের জুলাই মাসের ২৭ তারিখে। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সময় হাটতে বের হয় শেখ সফিউল্লাহর ছেলে শেখ সানজিদ আল সাজিদ ও ইকবাল হোসেনের ছেলে দরবেশ ইকবাল রিয়াদ। আচমকা কিশোর গ্যাং প্রধান মুনজিতপুরের মৃত জামালের ছেলে আল হেলাল জয় এর নেতৃত্বে লাঠি, চাইনিজ কুড়াল সমেত হামলা করে হাটের মোড় এলাকার ওয়াজেদের ছেলে আরিফ, রেজিষ্ট্রি অফিস পাড়ার সুমন ও নয়ন, সরকারপাড়া এলাকার রাহুল, মুনজিতপুরের রিপনের ছেলে মৃদুল,
[caption id="attachment_47085" align="alignright" width="300"] সাজিদকে উদ্দেশ্য করে ছুঁড়ে মারা চাইনিজ কুড়াল ড্রেন থেকে তুলছে আল হেলাল জয়[/caption]
কলেজ মোড় এলাকার ছাব্বির সহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন। এ সময় তারা সাজিদ ও রিয়াদকে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে।
কি ঘটেছিল সেদিন?
পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক জয়ের গ্যাং ৫টি মোটর সাইকেলে তাদের অস্ত্র সমেত কাটিয়া রেজিষ্ট্রি অফিসপাড়া হেকিম সাহেবের খানকা মসজিদের সামনে শেখ শফিউল্লাহ মনির ছেলে সানজিদ আল সাজিদ ও মোঃ ইকবাল হোসেনের পুত্র রিয়াদের গতি রোধ করে। এসময় জয় ও আরিক তাদের কাছে এক লক্ষ টাকা দাবী করে। স্কুলপড়ুয়া সাজিদ ও রিয়াদ অপারগতা প্রকাশ করলে জয় ও আরিক তাদের হাতুড়ি ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে তাড়া করে। একপর্যায়ে চাইনিজ কুড়াল ছুড়ে মারে জয়। তার বাহিনীর অন্যান্যরা এসময় সাজিদ ও রিয়াদকে ধরে ফেলে। গ্যাংরে সদস্যরা উপর্যুপরি তাদের মারতে থাকে। এসময় আরিক চৌধুরী হাতুড়ি দিয়ে সাজিদের মাথায় বাড়ি দেয় এতে সাজিদ মাটিতে পড়ে গেলে আল হেলাল জয় সাজিদের মাথায় চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপ দেয়। তাতে সাজিদের মাথায় গভীর ক্ষত হয়। রক্ত ঝরতে থাকে। এসময় স্থানীয়রা এসে সাজিদ ও রিয়াদকে উদ্ধার করে। তারপর তারা তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় সাজিদের পিতা শেখ শফিউল্লাহ মনি বাদি হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সাজিদের পিতা শেখ শফিউল্লাহ মনি সাতনদীকে জানান, ‘আমার ছেলের কাছ থেকে বেশ কয়েকদিন ধরেই এ গ্যাংয়ের গ্রুপটি টাকা আদায় করে আসছে। আমি বুঝতে পেরে তাকে বাসায় আটকে রাখি। দীর্ঘদিন পর তার বন্ধু রিয়াদকে সাথে নিয়ে সন্ধ্যার সময় হাটতে বের হলে গ্যাং লিডার জয়ের নেতৃত্বে আমার ছেলে সাজিদ ও তার বন্ধু রিয়াদের উপর হামলা করে রক্তাক্ত করে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। গ্রুপটি এরকম বেশ কয়েকটি নিরীহ ছেলের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নেশাসহ অপকর্ম করে থাকে।’
মামলার বর্তমান অবস্থা:
সানজিদ আল সাজিদ ও দরবেশ ইকবাল রিয়াদের উপর কিশোর গ্যাংয়ের হামলার ঘটনায় শেখ শফিউল্লাহ মনি ২৮ জুলাই ২০২১ইং তারিখে মামলা দায়ের করেন। দুই মাস পর ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে চার্জশীটে আল হেলাল জয়, আরিক চৌধুরী, নয়ন ইসলাম, রাহুল কুমার দাশ, সাব্বির মাহমুদ, সুমন হোসেন, শাহরিয়ার ইমন মৃদুলকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করে। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। তবে এ পর্যন্ত কোন আসামীই গ্রেপ্তার হয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতি:
এই গ্যাং লিডার জয়ের নেতৃত্বে বাকিরা এখনও বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। থামেনি তাদের মারামারি ও চাঁদাবাজির ঘটনা। এ সপ্তাহের মঙ্গলবার আল হেলাল জয় তার আপন বড়চাচী আরিনা খাতুনকে আচমকা মারপিট শুরু করে। এ সময় প্রতিবাদ করে চাচাতো চাচা আমিনুর রহমান ও মমিনুর রহমান। জয় প্রতিবাদ করতে আসা আমিনুর রহমান ও মমিনুর রহমানকেও মারধোর শুরু করে। জয় ইট এবং লোহার রড তুলে আমিনুর ও মমিনুরকে মারতে উদ্যত হয়। ওই পথে যাওয়ার সময় সাতনদী সম্পাদক হাবিবুর রহমান জয়কে নিবৃত করার চেষ্টা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জয় সম্পাদককে কোপা প্রদর্শন করে কোপানোর হুমকি দেয়। ওই ঘটনায় পৃথক একটি জিডি করা হয়েছে।